মহাভারতের কাহিনীগুলো বারবার আবর্তিত হয়েছে অভিশাপ-বরদান, ধর্ম-অধর্ম, সত্য-মিথ্যা, ত্যাগ-লালসা, বীরত্ব-কাপুরুষতা প্রভৃতি ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে। আজ সনাতন এক্সপ্রেস পরিবারের সদস্যদের জন্য রইল মহাভারতের এমন ১০টি বরদানের ঘটনা যা মহাভারতের গতিপথকে বারংবার প্রবাহিত করেছে অন্য পথের দিশায়। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক, মহাভারতের সেই ১০টি বরদানের কাহিনীতে।
১. সত্যবতীকে দেওয়া পরাশর মুনির বরদান
আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন না মহারাজ শান্তনুর স্ত্রী সত্যবতী জন্মগ্রহণ করেছিলেন চেদিরাজ উপরিচরের ঔরসে ও এবং একটি মৎস্যরূপী অপ্সরার গর্ভে। তবে তাকে লালন পালন করেছিলেন ধীবরদের রাজা দশরাজ। মাছের পেট থেকে জন্মগ্রহন করার ফলে এই কন্যার শরীরে ছিল মাছের গন্ধ, যেকারনে তার নাম হয়েছিল মৎস্যগন্ধা। এবং যেহেতু ধীরবররাজ দশরাজ তাকে লালন পালন করেছিলেন, তাই তিনিও মৎস্য আহরণ ও নৌকা পারাপার করে জীবন ধারণ করতেন।
কোন একদিন মৎস্যগন্ধার নৌকায় চড়েছিলেন ঋষি পরাশর। কিছুটা পথ পাড়ি দিতেই অতি মনোরমা, সদ্য যুবতী মৎস্যগন্ধাকে দেখে মিলন উদ্দেশ্যে আহবান করেছিলেন পরাশর। তবে পরাশর মুনির এই আহবানে কিছুটা কুন্ঠিত হয়েছিলেন মৎস্যগন্ধা।
মৎস্যগন্ধার এই কুন্ঠাবোধ দেখে পরাশর মুনি আশেপাশের পরিবেশ ঢেকে দিয়েছিলেন ঘন কুয়াশায়। সত্যবতী তখনও বুঝতে পারেননি, পরাশর মুনির এই আহবান শুধুমাত্র শারিরীক চাহিদা পূরণ করার জন্যই ঘটেনি। বরং এই ঘটনার পিছনে লুকিয়ে আছে বৃহৎ কোন পরিকল্পনা।

যাইহোক, মৎস্যগন্ধার নৌকা থেকে অবতরন করার সময় পরাশর মুনি তিনটি বর দিয়েছিলেন সত্যবতীকে।
- ১ম বরটি হচ্ছে, মৎস্যগন্ধার শরীর থেকে মাছের গন্ধ চিরতরে দূরীভূত হবে এবং আশ্চর্য এক মোহনীয় সুগন্ধ নির্গত হবে তার শরীর থেকে। এবং তার শরীরের এই সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়বে ১ যোজন দূর পর্যন্ত। সেকারনে মৎস্যগন্ধার নতুন নাম হয়েছিল যোজনগন্ধা।
 - ২য় বরটি ছিল পরাশর ও মৎস্যগন্ধার মিলনের ফলে যে পুত্র জন্ম গ্রহন করবে, সে অনাগত কঠিন সময়ে সৃজনের ধারা বজায় রাখবে। পরবর্তীতে পরাশর ও সত্যবতীর পুত্র ব্যাসদেব নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধমে কুরুবংশের ধারাকে রক্ষা করেছিলেন।
 - এবং ৩য় বরটি ছিল, পরাশর মুনির সাথে মিলন এবং পুত্র জন্মদান করার পরেও সত্যবতী পুনরায় কুমারীত্ব অর্জন করবেন।
 
তবে আনুষ্ঠানিক এই তিনটি বরের পাশাপাশি, পরাশর প্রদত্ব বরের ফলে সত্যবতী নিজের শরীরে যে সুগন্ধ প্রাপ্ত করেছিলেন, তার প্রভাবেই মহারাজ শান্তনু তার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেন।
২. ভীষ্মকে দেওয়া মহারাজ শান্তনুর বরদান
মহারাজ শান্তনু ও গঙ্গাদেবীর পুত্র ছিলেন দেবব্রত। পরবর্তীতে মহারাজ শান্তনু যখন সত্যবতীর প্রতি প্রণয়াসক্ত হয়েছিলেন, তখন সত্যবতী তাকে বিবাহ করার জন্য একটি শর্ত দিয়েছিলেন। শর্তটি ছিল, যদি মহারাজ শান্তনু দেবব্রতকে বঞ্চিত করে তার পুত্রকে কুরু রাজ্যের উত্তরাধিকারী করতে পারেন, তবেই তিনি মহারাজ শান্তনুকে বিবাহ করবেন।
একদিকে সত্যবতীর প্রতি শান্তনুর প্রবল অনুরাগ, অন্যদিকে জেষ্ঠ্যপুত্র দেবব্রতর অধিকার। এই উভয় সংকটে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়লেন শান্তনু। এমতাবস্থায়, পিতার উভয় সংকটের কথা জানতে পারলেন দেবব্রত। আর তাই তিনি পিতার অসুবিধা দূর করতে এক ভীষন প্রতিজ্ঞা করে বসলেন। তার প্রতিজ্ঞা ছিল, তিনি কখনোই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন না এবং পিতার রাজসিংহাসনের প্রতি সমস্ত অধিকার ত্যাগ করবেন। তবে তিনি সারাজীবন কুরু রাজসিংহাসনের রক্ষক হিসেবে দায়ীত্ব পালন করবেন।

পুত্র দেবব্রতের এই ভীষণ প্রতিজ্ঞা একইসাথে ব্যাথিত ও আনন্দিত করেছিল মহারাজ শান্তনুকে। তিনি দেবব্রতের এই ভীষন প্রতিজ্ঞার জন্য তার নামকরণ করেছিলেন ভীষ্ম। সেইসাথে পিতার জন্য পুত্রের এই ত্যাগকে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি তাকে ইচ্ছামৃত্যুর বরদান প্রদান করেছিলেন। আর নিজ পিতার এই বরদানের ফলে ভীষ্মকে বধ করা কারো পক্ষেই সম্ভব ছিল না।
৩. অম্বাকে ভগবান শিবের বরদান
মহারাজ শান্তনুর ঔরসজাত ও সত্যবতীর গর্ভজাত বিচিত্রবীর্য কুরুরাজ্যের রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত হলে, মহামহিম ভীষ্ম সত্যবতীর আদেশে বিচিত্রবীর্যের জন্য পাত্রীর সন্ধান করা শুরু করেছিলেন। এরই মধ্যে কাশীরাজের তিন কন্যা অম্বা, অম্বিকা এবং অম্বালিকার জন্য স্বয়ংবর অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন কাশীরাজ। ভিষ্ম এই তিন কন্যার স্বয়ংবর সভায় উপস্থিত হয়ে এদের সবাইকে বলপূর্বক অপহরণ করেছিলেন। কারন উপস্থিত পানিপ্রার্থীদের মধ্যে কারও পক্ষেই ভীষ্মের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস বা সামর্থ্য ছিল না।
তবে সেদিনকার স্বয়ংবর সভায় রাজকুমারী অম্বার পানিপ্রার্থী হয়ে এসেছিলেন শাল্বরাজ। এবং রাজকুমারী অম্বাও মানসিকভাবে শাল্বরাজের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। সুতারাং স্বয়ংবর সভায় একমাত্র শাল্বরাজ ভীষ্মকে বাধা প্রদান করতে এসে ভীষ্মের হাতে পরাজিত ও অপমানিত হন। তবে মতান্তরে, দেবব্রত ভীষ্ম শাল্বরাজকে সেখানেই পরাজিত ও বধ করেন।
তবে পরবর্তীতে ভীষ্ম যখন জানতে পারেন রাজকুমারি অম্বা ও শাল্বরাজ একে অপরের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন, তখন তিনি অম্বাকে অব্যাহতি প্রদান করে অম্বিকা ও অম্বালিকাকে বিবাহ দিয়েছিলেন বিচিত্রবীর্যের সাথে।

এদিকে রাজকুমারী যখন পুনরয়ায় শাল্বরাজের কাছে ফিরে গেলেন, তখন শাল্বরাজ তাকে পরপুরুষে স্পর্শ করেছে অজুহাতে অম্বাকে ত্যাগ করেন। অগত্যা অম্বা তখন ভীষ্মকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিবাহ করার জন্য। কিন্তু ভীষ্ম তার প্রতিজ্ঞার কথা উল্লেখ করে অম্বাকে বিবাহ করার প্রস্তাব বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।
এভাবে একে একে সমস্ত দ্বার রুদ্ধ হওয়ার পরে অম্বা শরণাপন্ন হয়েছিলেন মহামতি পরশুরামের। পরশুরাম ছিলেন প্রবল পরাক্রমশালী, ২১ বার পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয় নিধনকারী, ভগবান বিষ্ণুর অবতার, ভগবান শিবের পরম ভক্ত এবং ভীষ্মের অস্ত্রগুরু। ভীষ্মের বিরুদ্ধে আনীত অম্বার গুরুতর অভিযোগ শুনে ভীষ্মকে যুদ্ধে আহবান করেছিলেন পরশুরাম। তবে ২৩ দিন যাবত লাগাতার যুদ্ধ করার পরেও তিনি পরাজিত করতে পারেননি তারই শিষ্য ভিষ্মকে। অবশেষে ভগবান শিবের মধ্যস্থতায় সমাপ্ত হয় গুরু-শিষ্যের এই যুদ্ধ।
এসময় ভগবান শিব অম্বার প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “হে পুত্রী, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কি সমাধান চাও তুমি?” উত্তরে অম্বা বলেছিলেন, “আমি দেবব্রত ভিষ্মের মৃত্যুর কারন হতে চাই” ভগবান শিব তখন অম্বাকে বর দিয়েছিলেন, “তোমার পরবর্তী জন্মে তুমি অবশ্যই ভীষ্মের মৃত্যুর কারণ হবে।” শিবের কাছ থেকে এই বরপ্রাপ্তির পরেই অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করে দেহত্যাগ করেছিলেন অম্বা এবং পরবর্তী জন্মে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন রাজা দ্রুপদের কন্যা শিখণ্ডীরূপে। পরবর্তীতে কুরুক্ষেত্রের ময়দানে শিখণ্ডী যখন ভীষ্মের সম্মুখে উপস্থিত হন তখন অস্ত্র পরিত্যাগ করে অর্জুনের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন ভীষ্ম। আর অর্জুনের নিক্ষেপিত অসংখ্য তীরের আঘাতে শরশয্যায় শায়িত হন তিনি।
৪. কুন্তীকে প্রদত্ব দুর্বাসার বর
একদা ভগবান শিব তার ক্রোধাগ্নি স্থাপন করেছিলেন মাতা অনুসূয়ার গর্ভে। আর সেই ক্রোধাগ্নি থেকেই জন্ম হয়েছিল শিবাংশ ঋষি দুর্বাসার। একারনে দুর্বাসাকে বলা হয় ভগবান শিবের অবতার। তো ভগবান শিবের ক্রোধ থেকে জন্মলাভ করার ফলে তিনি জন্মসূত্রেই পেয়েছিলেন অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধের ভাণ্ডার। সেকারনে তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর কারনে বা একেবারেই অকারনে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হতেন ঋষি দুর্বাসা এবং তার সেই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটত তার দেওয়া অভিশাপের মাধ্যমে।
অপরদিকে তিনি ছিলেন, শিবাংশ, সাধনায় সিদ্ধ, মহৎ ও অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। তাই কারনে হোক বা অকারনে, তার দেওয়া অভিশাপ ফলে যেত হাতে হাতে। একারনে, দেবতা থেকে শুরু করে দানব, মানব, গন্ধর্ব সকলেরই দুর্বাসার দর্শনমাত্র থরহরি কম্প শুরু হয়ে যেত। তো একদা এই ঋষি দুর্বাসা আতিথেয়তা গ্রহণের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হলেন রাজা কুন্তিভোজের গৃহে। তাকে দেখামাত্র রাজার কপালে দেখা দিল গভীর চিন্তার ভাজ। কারন তাকে আতিথেয়তা করতে গিয়ে সামান্য পন থেকে চুন খসলেই তার অভিশাপের কোপানলে পড়তে হবে।

অতঃপর দুশ্চিন্তাগ্রস্থ রাজা অনেক ভেবে-চিন্তে ঋষি দুর্বাসার আতিথেয়তার ভার দিলেন তারই পালিত কন্যা পৃথাকে। ও হ্যাঁ, পৃথাকে চেনেন তো, তিনি পঞ্চপাণ্ডবের মাতা কুন্তি নামে জগতে বিখ্যাত। যাইহোক, কোমল হৃদয়ের অধিকারিণী পৃথা গভীর ভক্তি, নিষ্ঠা ও অত্যন্ত সরলতার সাথে সেবা করলেন ঋষি দুর্বাসাকে। তিনি ঋষি দুর্বাসায় সেবায় নিজেকে এমনভাবে সমর্পণ করলেন যা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন স্বয়ং দুর্বাসাও। অবশেষে কুন্তিভোজের রাজপ্রাসাদ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তিনি মাতা কুন্তিকে বর হিসেবে দান করেছিলেন এক অত্যন্ত শক্তিশালী মন্ত্র।
সেই মন্ত্রের এমন আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল যে, তা দ্বারা যে কোন দেবতাকে আহবান করে সেই দেবতার ঔরসে সন্তান প্রাপ্ত করতে পারতেন কুন্তি। এবং বলাই বাহুল্য দুর্বাসা প্রদত্ব সেই মন্ত্রের প্রভাবে তিনি কুমারী অবস্থাতেই সূর্দেবের মাধ্যমে প্রাপ্ত করেছিলেন মহারথী কর্ণকে। পরবর্তীতে পাণ্ডুর সাথে বিবাহের পর তিনি ধর্মরাজ, পবনদেব ও ইন্দ্রদেবের মাধ্যমে প্রাপ্ত করেছিলেন যুধিষ্ঠির, ভীম ও অর্জুনকে। এছাড়াও তিনি মাদ্রীকে এই মন্ত্র দান করে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের ঔরসে নকুল ও সহদেবকে জন্মদান করতেও সাহায্য করেছিলেন।
৫. গান্ধারীকে প্রদত্ব ভগবান শিবের বর
বর্তমান আফগানিস্থানের কান্দাহার নামক শহরটির পূর্ব নাম ছিল গান্ধার রাজ্য। মহাভারতের যুগে এই গান্ধার রাজ্যের রাজা ছিলেন মহারাজ সুবল। এই মহারাজ সুবলের পুত্র ছিলেন শকুনি এবং কন্যা ছিলেন গান্ধারী। শিশুকাল থেকেই মাতা গান্ধারী ছিলেন ভগবান শিবের পরম ভক্ত। ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে তিনি যাবতীয় যাগ-যজ্ঞাদি, উপবাস এবং ব্রত পালন করেছিলেন ছোটবেলা থেকেই। কোমলমতি এই শিশুটির পরম ভক্তি ও সমর্পণ বিষ্মিত করেছিল স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবকে। তাই ছোট্ট এই ভক্তের আকুতিতে পৃথিবীতে নেমে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। একদা মাতা গান্ধারী যখন শিবভক্তিতে আচ্ছন্ন ছিলেন, তখন তার সামনে প্রকট হয়েছিলেন ভোলানাথ। তিনি অত্যন্ত স্নেহভরে গান্ধারীকে বর দিয়েছিলেন, “হে পুত্রী, এত ছোট্ট বয়সে তুমি আমার প্রতি যে গভীর অনুরাগ, ভক্তি ও সমর্পণ প্রদর্শন করেছ তা অনেক মুনি ঋষিও করে দেখাতে পারেননি। হে পুত্রী, আমি তোমাকে আশির্বাদ করছি তুমি একশত পুত্রের জননী হবে। ”

তবে ভগবান শিবের এই আশির্বাদই একসময় অভিশাপে পরিনত হয়েছিল গান্ধারীর জীবনে। মহামহিম ভীষ্ম যখন কুরুবংশের ধারাকে অব্যহত রাখার জন্য বিচিত্রবীর্যের জন্মান্ধ পুত্র ধৃতরাষ্ট্রের জন্য পাত্রীর সন্ধান করছিলেন, তখন তিনি শতপুত্রের বরপ্রাপ্ত গান্ধারীর সন্ধান পান। এরপর তিনি এক প্রকার জোরপূর্বক অর্থাৎ রাজা সুবল ও রাজকুমার শকুনির অমতেই গান্ধারীর বিবাহ সম্পন্ন করেছিলেন জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্রের সাথে।
৬. দ্রৌপদীকে প্রদত্ব শিবের বর
মহাভারতে একা দ্রৌপদীর সাথে পাচজন পাণ্ডবের বিবাহকে অস্বাভাবিক এবং অসম্ভব বলে মনে করেছিল তৎকালীন সমাজব্যাবস্থা। কিন্তু বাস্তবে এটিই ছিল বিধির বিধান। তাই দ্রৌপদীর সাথে পঞ্চপাণ্ডবের বিবাহ সম্পর্কিত জটিলতা নিরসনে মর্ত্যে এসেছিলেন দেবর্ষি নারদ। আর তার মাধ্যমেই জানা গিয়েছিল দ্রৌপদীর পূর্বজন্মের কাহিনী।
পূর্বজন্মে দ্রৌপদী ছিলেন এক ঋষিকন্যা। তিনি বিবাহযোগ্যা হলে ভগবান শিবের কাছে তিনি নিয়মিতভাবে ১৪ টি গুণসম্পন্ন একজন স্বামী প্রার্থনা করতেন। তিনি এমন একজন স্বামীর জন্য প্রার্থনা করছিলেন যিনি হবেন যশস্বী, সুন্দর, ধনী, নীতিবান, ধৈর্যশীল, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, সাহসী, শক্তিশালী, নিপুন ধনুর্বিদ, অত্যন্ত সুদর্শন, শারিরীকভাবে সামর্থ্যবান, নৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন, এবং প্রজ্ঞাবান।
তো এভাবে বহুকাল যাবত ভগবান শিবের কঠোর তপস্যায় নিজেকে মগ্ন রেখেছিলেন দ্রৌপদী। আর তাই একদিন দ্রৌপদীর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তার সম্মুখে প্রকট হয়েছিলেন ভগবান শিব। বহুকাল পরে নিজের তপস্যার ফল প্রদানের উদ্দেশ্যে স্বয়ং ভগবান শিব তার সামনে প্রকট হয়েছেন, এই আনন্দে আহ্লাদিত হয়ে উঠলেন দ্রৌপদী। তাই ভগবান শিব যখন দ্রৌপদীকে অভীষ্ট বর প্রার্থনা করতে বললেন, তখন তিনি আনন্দের আতিশয্যে ৫ বার একই বর চেয়ে বসেন।

দ্রৌপদীর বর প্রার্থনা করার পর ভগবান শিব বললেন, “হে পুত্রী, তুমি যেহেতু আমার কাছে ৫ বার স্বামীপ্রাপ্তির বর প্রার্থনা করেছ, সেহেতু তুমি একইসাথে ৫ জন স্বামী প্রাপ্ত হবে। আর তাছাড়া তুমি যে ১৪টি গুণসম্পন্ন স্বামী আমার কাছে প্রার্থনা করেছ, সেরকম ১৪টি গুণ কোন একজন পুরুষের মধ্যে থাকা সম্ভব নয়। তাই তোমার ৫ জন স্বামীর মধ্যে এই গুণগুলো সমানভাবে বণ্টিত হবে। তবে হ্যাঁ, আমার দেওয়া এই বর তুমি এই জন্মে নয়, পরজন্মে প্রাপ্ত হবে।”
ভগবান শিবের কাছ থেকে বরপ্রাপ্তির পর যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল দ্রৌপদীর। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, “হে ভগবান এর ফলে যে জগতের সকলেই আমাকে ব্যাভিচারিনী হিসেবে আখ্যায়িত করবে।” এসময় দ্রৌপদীর কান্না দেখে ভগবান শিব তাকে আরও একটি বর প্রদান করেছিলেন, “হে পুত্রী, তুমি প্রত্যেক স্বামীর সাথে বৈবাহিক সময়কাল পার করে অগ্নিস্নান করলেই তুমি তোমার কুমারীত্ব পুনরায় ফিরে পাবে।”
আর পূর্বজন্মে ভগবান শিবের দেওয়া সেই বরের কারনেই পাচজন স্বামীকে একসাথে বরণ করতে হয়েছিল দ্রৌপদীকে।
৭. কর্ণকে প্রদত্ব পরশুরামের বর
মহাভারতের এক মর্মান্তিক চরিত্র কর্ণ। স্বয়ং মাতা কুন্তীর গর্ভজাত সন্তান হয়েও সারা জীবনেও প্রকৃত পরিচয়ের স্বীকৃতি মেলেনি তার। এমনকি সর্বশ্রেষ্ঠ ধণুর্বিদ হওয়ার সত্ত্বেও নিজ ভ্রাতার হাতে, এবং দুর্ভাগ্য ও অভিশাপকে সঙ্গী করে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল তাকে।
যাইহোক, কুমারী কুন্তী লোকলজ্জার ভয়ে কর্নের জন্মের পর তাকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন নদীতে। আর তাকে নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন অধিরথ ও রাধা নামক দম্পত্তি। অধিরথ ও রাধা সূত বংশের অন্তর্গত হওয়ার কারনে কর্ণ নিজেও পরিচিত হয়েছিলেন সূতপুত্র হিসেবে।
তবে তার মনে ছিল শ্রেষ্ঠ ধণুর্ধর হওয়ার সুপ্ত বাসনা। আর সেই বাসনা পূর্ণ করতে পারতেন একমাত্র ভগবান পরশুরাম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছেন, ভগবান পরশুরাম শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ ব্যাতীত অন্য কাউকে অস্ত্রশিক্ষা প্রদান করেন না। তাই নিজের পরিচয় গোপন রেখে কর্ণ ধণুর্বিদ্যা শিক্ষা করেছিলেন পরশুরামের কাছে।

তবে মিথ্যার উপরে প্রতিষ্ঠিত গুরু শিষ্যের এই সম্পর্ক একদিন বেরিয়ে এল কৃত্রিমতার খোলস ভেদ করে। পরশুরাম বুঝতে পারলেন কর্ণ কোন ব্রাহ্মণ সন্তান নয়। তাই তিনি কর্ণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন প্রয়োজনের সময় কর্ণ পরশুরামের কাছ থেকে অর্জিত অস্ত্রবিদ্যা ভুলে যাবেন।
তবে পরক্ষনে তিনি যখন জানতে পেরেছিলেন কর্ণ ক্ষত্রিয় বংশজাত নয় বরং এক শূদ্রের সন্তান, তখন কিছুটা অনুতপ্ত হয়েছিলেন তিনি। তাই নিজের অভিশাপকে কিছুটা হলেও প্রশমিত করতে তিনি কর্ণকে দান করেছিলেন বিজয় ধনুক, ভার্গবাস্ত্র ও ব্রহ্মাস্ত্রসহ অসংখ্য দিব্যাস্ত্রের জ্ঞান। এবং পরিশেষে তিনি কর্ণকে আশির্বাদ করেছিলেন, “হে বৎস, সমগ্র আর্যাবর্তে তোমার সমান ধণুর্বিদ আর কেউ হবে না। তোমার মৃত্যুর পরেও তুমি চিরন্তন খ্যাতি অর্জন করবে।”
আর তাই ভগবান পরশুরামের বরে যুদ্ধক্ষেত্রে হেরে গিয়েও মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন মহাবীর কর্ণ।
৮. অর্জুনকে প্রদত্ব ভগবান শিবের বর
ভগবান শিবের সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্রগুলো হচ্ছে পশুপাতাস্ত্র, ত্রিশুল এবং পিণাক ধনুক। তবে এ তিনটির মধ্যেও পশুপাতাস্ত্রকে ভগবান শিবের সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্র বলে বলে করা হয়। তো পাণ্ডবগণ যখন হস্তিনাপুর ছেড়ে নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন, তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ভগবান শিবকে তপস্যায় সন্তুষ্ট করে তার কাছ থেকে পশুপাতাস্ত্রটি বর হিসেবে প্রাপ্ত করার জন্য।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ মোতাবেক অর্জুন ইন্দ্রকীলাদ্রী পর্বতে আরোহণ করে শুরু করেছিলেন ভগবান শিবের কঠোর তপস্যা। এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুকাল। একদিন যখন অর্জুন ভগবান শিবের তপস্যায় রত ছিলেন, তখন তিনি তার আশেপাশে একটি বন্য শূকরের উপস্থিতি অনুভব করলেন।

অর্জুন ভাবলেন এই পশুটি হয়ত কোনভাবে তাঁর তপস্যা ভঙ্গ করতে এসেছে অথবা কোন অসুর শূকরের রূপ ধারণ করে অর্জুনকে প্রহার করতে এসেছে। বাস্তবেও এই শূকরটি ছিল মূক নামক এক অসুরের ছদ্মবেশ। আর তাই অর্জুন তাঁর তীর ধনুক হাতে নিয়ে সেই বন্য শূকরের দিকে একটি তীর নিক্ষেপ করলেন। কিন্তু পরক্ষনেই তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর কাছাকাছি জায়গা থেকে আরও এক ব্যক্তি সেই শূকরের দিকে তীর নিক্ষেপ করেছেন। তিনি একটু পাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখতে পেলেন একজন কিরাত উপজাতির দলপতি হাতে তীর ধনুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। অর্জুনের বুঝতে দেরী হল না যে তাঁর সাথে সাথে এই উপজাতীয় দলপতিও একই শূকরের দিকে তীর নিক্ষেপ করেছেন। তো তীরের আঘাতে যখন শূকরটির মৃত্যু হল তখন দেখা গেল শূকরটির শরীরে দুটি তীর বিদ্ধ হয়ে আছে। ফলে দুজনেই শুকরটি বধ করার কৃতিত্ব দাবী করলেন। এবং এক পর্যায়ে অর্জুন ও কিরাত দলপতি দুজনেই এই বিষয়কে কেন্দ্র করে বাদানুবাদে লিপ্ত হলেন। এই বাদানুবাদ থেকে এক পর্যায়ে শুরু হল যুদ্ধ। কিরাত দলপতি ও অর্জুন দুজনেই সমানভাবে যুদ্ধ করলেন একে অপরের সাথে। কিন্তু কি আশ্চর্য, দেবপুত্র অর্জুনের মত মহাবীর একজন সামান্য শিকারীকে পরাস্ত করতে পারলেন না। বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ করার পর মনে খটকা লাগল অর্জুনের, তিনি বুঝতে পারলেন ইনি কোন সাধারন উপাজতীয় শিকারী নন, ইনি স্বয়ং পশুপতিনাথ। লজ্জিত অর্জুন তখন সশ্রদ্ধ চিত্তে শিকারীর পদতলে লুটিয়ে পড়লেন।
কিরাতরূপী মহাদেবও ফিরে এলেন স্বরূপে। তিনি অর্জুনকে আদ্যাশক্তি সহযোগে দর্শন দিয়ে বললেন, “হে পাণ্ডুপুত্র,আমি আসলে দেখতে চেয়েছিলাম তুমি পশুপাতাস্ত্র ধারনের উপযুক্ত কিনা।” কারন এই মহা শক্তিশালী অস্ত্র মুহূর্তেই সমগ্র সৃষ্টির বিনাশ করে দিতে পারে। তাই এটি সঠিক ব্যাক্তির কাছে সোপর্দ করা না হলে ভয়ানক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। তো মহাদেবের সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন অর্জুন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি অর্জুনকে বর হিসেবে দান করেছিলেন পশুপাতাস্ত্র। যা মন, কথা, দৃষ্টি ও বাণ দিয়ে প্রয়োগ করা যায়। তবে অর্জুন মহাভারতের যুদ্ধে এই অস্ত্র প্রয়োগ করেন নি। আর কিরাত রূপ ধারন করে মহাদেব অর্জুনের সামনে প্রকট হয়েছিলেন বিধায় মহাদবের এই অবতারের নাম হয়েছিল কিরাতেশ্বর অবতার।
৯. জয়দ্রথকে প্রদত্ব ভগবান শিবের বর
মহাভারতের এক নেতিবাচক চরিত্র ছিলেন জয়দ্রথ। সম্পর্কে তিনি কুরু-পাণ্ডবদের ভগ্নিপতি হলেও দ্রৌপদীর প্রতি ছিল তার সীমাহীন লালসা। দ্রৌপদীর রূপ-লাবন্যে তিনি এতটাই মোহিত হয়েছিলেন যে, তিনি দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় অংশ নিয়ে তাঁকে প্রাপ্ত করতে চেয়েছিলেন। তবে সেদিনকার প্রতিযোগীতায় তিনি অসামর্থ্য হয়েছিলেন। তো পাণ্ডবগণ যখন দ্রৌপদী সহযোগে বনবাস করছিলেন তখন দ্রৌপদীকে বনমধ্যে দর্শন করে পুনরায় কামার্ত হয়েছিলেন জয়দ্রথ। তিনি চেষ্টা করেছিলেন দ্রৌপদীকে অপহরণ করে বিবাহ করার জন্য। কিন্তু পাণ্ডবদের তৎপরতায় সেবারও ব্যার্থ হয়েছিলেন তিনি। দ্রৌপদীকে অপহরণ করার সময় পাণ্ডবদের হাতে বন্দী হন তিনি। তবে সম্পর্কে ভগ্নিপতি হওয়ার কারনে পাণ্ডবগণ তাঁকে বধ না করে মস্তক মুণ্ডন করে ছেড়ে দিয়েছিলেন।

এই অপমান দারুনভাবে আহত করেছিল জয়দ্রথকে। আর এই অপমানের বদলা নিতে তিনি শুরু করেছিলেন ভগবান শিবের কঠোর তপস্যা। দীর্ঘকাল ভগবান শিবের তপস্যা করার পর তার সামনে প্রকট হয়েছিলেন ভগবান শিব। তিনি জয়দ্রথকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “কি বর চাও তুমি?” উত্তরে জয়দ্রথ ভগবান শিবের কাছে পঞ্চপাণ্ডবকে এক দিনের জন্য হলেও পরাজিত করার ক্ষমতা প্রাপ্ত করার বর প্রার্থনা করেছিলেন। তবে ভগবান শিব জদ্রথকে অর্জুন ব্যাতীত বাকী পাণ্ডবদেরকে একদিনের জন্য পরাজিত করার বরদান করেছিলেন।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের তম দিনে অর্জুনের অনুপস্থিতিতে যখন কৌরবপক্ষ চক্রব্যূহ রচনা করেছিলেন, তখন অভিমন্যু ছাড়া চক্রব্যুহে প্রবেশ করার ক্ষমতা আর কারো ছিল না। তো পাণ্ডবগণ পরিকল্পনা করেছিলেন, অভিমন্যু চক্রব্যূহ ভেদ করে প্রবেশ করার পর বাকী পাণ্ডবগণ ব্যুহের ভিতরে প্রবেশ করে অভিমন্যুকে সাহায্য করবেন। কিন্তু ভগবান শিবের বরের প্রভাবে জয়দ্রথ সেদিন সকল পাণ্ডবদেরকে পরাজিত করেছিলেন এবং তাদেরকে ব্যুহে্র ভিতরে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পেরেছিলেন। ফলে সেদিনকার যুদ্ধে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল অভিমন্যুর।
১০. জয়দ্রথকে প্রদত্ব তার পিতা বৃদ্ধক্ষত্রের বর
সিন্ধুরাজ্যের রাজা ছিলেন বৃদ্ধক্ষত্র। একদা এই বৃদ্ধক্ষত্রের একটি পুত্র সন্তান লাভ হয়। তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে পুত্রের নাম রেখেছিলেন জয়দ্রথ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একজন মুনি সেই সদ্যোজাত পুত্রের মুখদর্শন করে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, এই পুত্রের মৃত্যু হবে এক মহাযুদ্ধে এবং তাঁকে বধ করবেন এক অপরাজেয় মহাবীর। মুনির মুখে পুত্রের মৃত্যু সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী শ্রবণ করে শোকে-দুঃখে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়লেন তিনি। তিনি সর্বদাই নিজের পুত্রের এই নিয়তিকে পরিবর্তন করার চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। এর কিছুকাল পরে তিনি শিশু জয়দ্রথকে সিন্ধু রাজ্যের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করে বেরিয়ে পড়লেন জঙ্গলের উদ্দেশ্যে। সেখানে দীর্ঘকাল যাবত কঠোর তপস্যায় ব্রতী হলেন তিনি। তার উদ্দেশ্য ছিল নিজের পুত্রকে অমরত্ব দান করা। কিন্তু এত সাধনার পরেও তিনি নিজের পুত্রের জন্য এই বর প্রাপ্ত করতে পেরেছিলেন যে, যে ব্যক্তি জয়দ্রথের মস্তক ভূমিতে পতিত করবে সাথে সাথে সেই ব্যক্তির মস্তকও সহস্র খণ্ডে খণ্ডিত হয়ে যাবে।

অবশেষে কুরুক্ষেত্রের ময়দানে যখন অর্জুন জয়দ্রথকে বধ করতে উদ্যত হয়েছিলেন, তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে এই বরের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ফলে অর্জুন এমন এক বাণ জয়দ্রথের দিকে নিক্ষেপ করেছিলেন যা জয়দ্রথের মস্তককে ছিন্ন করে সেটিকে বহুদূরে তপস্যারত বৃদ্ধক্ষত্রের কোলে নিয়ে ফেলেছিল। তপস্যারত বৃদ্ধক্ষরত্রের কোলে আচমকা পুত্রের খণ্ডিত মস্তক পতিত হওয়ায় তিনি হতচকিত হয়ে সেটিকে ভূমিতে পতিত করেছিলেন। ফলে সাথে সাথে বৃদ্ধক্ষত্রের মস্তক সহস্র খণ্ডে খণ্ডিত হয়েছিল।