You are currently viewing সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ৯ জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী || 9 Hindu Nobel Prize Winners ||

সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ৯ জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী || 9 Hindu Nobel Prize Winners ||

১৯০১ সাল থেকে প্রবর্তিত হওয়া নোবেল পুরস্কার বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ একটি সম্মাননা। পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন শাস্ত্র, চিকিৎসা শাস্ত্র, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং শান্তি, এই ছয়টি ক্ষেত্রে উৎকৃষ্টতম অবদানের জন্য প্রতিবছর প্রদান করা হয় এই সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার।  আর পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের সফলতা ও কৃতিত্ত্বের স্মারক হিসাবে লাভ করে থাকেন এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার। কিন্তু আপনি জানেন কি এ পর্যন্ত ৯ জন সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি তাদের অভাবনীয় কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ লাভ করেছেন নোবেল পুরষ্কার। সনাতন এক্সপ্রেসের আজকের ভিডিওতে আমরা জানবো, সেই ৯ জন  সনাতন ধর্মাবলম্বী নোবেল বিজয়ীর নাম এবং তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়। আশা করি এই আয়োজনে আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকবেন।

১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯১৩)

প্রত্যেক বাঙালীর হৃদয়ে যার স্থায়ীভাবে বসবাস, তিনি হচ্ছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীদের মধ্যে অন্যতম এই মানুষটি সমগ্র এশিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথমে লাভ করেছিলেন নোবেল পুরষ্কার। ১৯১৩ সালে তার কালজয়ী সাহিত্যকর্ম গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থটিতে সংকলিত হয়েছে ১৫৭ টি গীতি কবিতা। ১৯০৮ ও ১৯০৯ সালে এই গীতি কবিতাগুলো প্রকাশিত হতে থাকে বিইভিন্ন পত্র পত্রিকায়। এবং কাব্যগ্রন্থ হিসেবে গীতাঞ্জলীর আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯১০ সালে। এরপর ১৯১২ সালে গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থটি Song Offerings নামে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়। এই অনুবাদকৃত কাব্যগ্রন্থ song offerings এর জন্যই ১৯১৩ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে প্রদান করা হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার। আর সেই প্রাপ্তির আনন্দে গর্বিত হয়েছিল সমগ্র ভারতবাসী।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২. চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন বা সিভি রমন (১৯৩০)

শান্ত নীল আকাশ দেখতে দেখতে কখনো আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে যে আকাশ কেন নীল? কিংবা নীরব সাগর দেখেও কি মনে হয়নি সাগর নীল কেন হলো?  আকাশ কিংবা সাগর কেন নীল এই প্রশ্নের বিজ্ঞানভিত্তিক জবাব যিনি দিয়েছেন তিনি হলেন রমণ প্রভাবের আবিষ্কর্তা আচার্য চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমণ বা সংক্ষেপে সি ভি রমণ। আর বিজ্ঞানপিপাসু ব্যক্তিবর্গ আলোর বিক্ষেপণে রমণ এফেক্টের কথা জানে না এমনটা হবার নয়। এই আবিষ্কারের হাত ধরেই আচার্য রমণ তার স্বীয় মাতৃভূমি ভারতবর্ষকে এনে দিয়েছিলেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কারটি। রমণই ভারতবর্ষের প্রথম বিজ্ঞানী যিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার অর্জন করে মাতৃভূমিকে করেছেন গৌরবান্বিত।

চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন
চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন

১৮৮৮ সালে  ৭ই নভেম্বর ভারতের তামিলনাড়ুতে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহন করেন এই পথিতযশা বিজ্ঞানী। গভীর সমুদ্রের নীল রঙের রহস্য খুঁজতে গিয়ে ১৯২৮ সালের ২৮ নভেম্বর তিনি আবিষ্কার করেছিলেন ‘রমন এফেক্ট’। যেকারনে এই দিনটি বর্তমান ভারতে পালিত হয় ‘বিজ্ঞান দিবস’ হিসাবে। আর এই কারনে প্রথম ভারতীয় তথা প্রথম অ-শেতাঙ্গ হিসাবে ‘রমন এফেক্ট’-এর জন্য ১৯৩০ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেছিলেন তিনি।

৩. হরগোবিন্দ খোরানা (১৯৬৮)

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসাপদ্ধতি, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণ পদ্ধতি, বংশগতিবিদ্যা, জিনঘটিত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা এবং এ–সংক্রান্ত অসংখ্য কারিগরি পদ্ধতি বা বায়োটেকনোলজি যার হাত ধরে প্রবর্তিত হয়েছিল তিনি হচ্ছেন হরগোবিন্দ খোরানা। কিন্তু জেনে অবাক হবেন এই অসাধারণ প্রতিভাধর বিজ্ঞানী জন্মেছিলেন বৃটিশ ভারতের পাঞ্জাবের অধীনস্থ  রায়পুর নামের একটি ছোট্ট গ্রামে। গ্রামটি এতটাই প্রত্যন্ত ছিল যে গ্রামে বসবাসকারী প্রায় শতভাগ মানুষ ছিলেন নিরক্ষর তথা অক্ষরজ্ঞানহীন। গ্রামে কোন স্কুল না থাকায় ছোটবেলায় তাকে গাছতলায় বসে শিখতে হয়েছিল বর্ণমালা। একটু বড় হয়ে মুলতান শহরে হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় আনুমানিকভাবে তার জন্মতারিখ দেওয়া হয়েছিল ১৯২২ সালে ৯ই জানুয়ারী। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করার পরে ১৯৪৫ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে এম এস সি ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি।  এরপর ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অ্যালকালয়েড সিন্থেসিস এবং মেলানিন–সম্পর্কিত গবেষণা করে ১৯৪৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন খোরানা। এর পরবর্তী সময়গুলোতে খোরানা ব্যাস্ত ছিলেন জীবনের উত্থান-পতন ও নানাবিধ গবেষনায়।

আরও পড়ুনঃ  সপ্তাহের কোন বারে কোন দেবদেবীর পুজা করলে সৌভাগ্য আসবে?
হরগোবিন্দ খোরানা
হরগোবিন্দ খোরানা

অবশেষে ১৯৬০ সালে তিনি তিনি ডিএনএ সিকোয়েন্সিংয়ের যথাযথ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তাঁর এই গবেষণার জন্য ১৯৬৮ সালে তিনি রবার্ট হলি ও মার্শাল নিরেনবার্গের সঙ্গে যৌথভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে জার্নাল অব মলিকিউলার বায়োলজিতে আরএনএ সংশ্লেষণের গবেষণাসংক্রান্ত ১৫টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তার এই গবেষনাপত্র থেকেই উদ্ভাবিত হয়েছে পিলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা পিসিআর পদ্ধতি  যা করোনাভাইরাস শনাক্ত সবচেয়ে করার  নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। এর জন্য খোরানা আরেকটি নোবেল পুরস্কারের দাবিদার ছিলেন।

৪. সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর (১৯৮৩)

১৯১০ সালের ১৯ অক্টোবর পাঞ্জাবের একটি তামিল হিন্দু পরিবারে জন্ম হয় সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখরের। তার আরো একটি পরিচয় হচ্ছে, তিনি ছিলেন আরেক বিখ্যাত নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন বা সি ভি রমনের ভাইপো। উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করা চন্দ্রশেখর ১২ বছর বয়স পর্যন্ত বাড়িতেই পড়াশোনা করতেন। ১৯২২ সালে তিনি মাদ্রাসের ট্রিপ্লিকেনের হিন্দু উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯২৫ সালে মাদ্রাসের প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হয়ে তিনি ভারত সরকারের তরফ থেকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য একটি বৃত্তি পান। সেই বৃত্তির সুবাদে তিনি কেমব্রিজের ট্রিনিটি মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর
সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর

ভারত থেকে জাহাজ যোগে কেমব্রিজ যাওয়ার পথেই তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় কাজটি করেন। জাহাজে বসেই ফাওলারের শ্বেত বামন নক্ষত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। সেই সময় তিনি সেই তত্ত্বে ভুল খুঁজে পান ও তিনি প্রমাণ করেন নক্ষত্রে অবস্থিত সব হাইড্রোজেন, হিলিয়াম জ্বালানি শেষ হলেই শ্বেত বামন নক্ষত্রে পরিণত হয় না।নক্ষত্রের ভর একটি বিশেষ সীমা পর্যন্ত হলে এটি শ্বেত বামন হয় এবং সেই সীমার বেশি হলে নক্ষত্রে অন্য রকম পরিণতি হয়। জাহাজে বসে করা এই কাজই এক বছর পর পরিমার্জন করে প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর এই সীমা ‘চন্দ্রশেখর সীমা’ নামে পরিচিত। প্রাথমিক ভাবে এই সীমা ১.৭ নির্ণয় করলেও পরে তিনি ১.৪ নির্ণয় করেন।

তবে তার এই আবিষ্কার তৎকালীন জ্যোতির্বিদরা মেনে নেন নি। যার ফলে তার কাজের স্বীকৃতি পেতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩০টি বছর। এরপর ১৯৮৩ সালে ফাউলারের সাথে যৌথভাবে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেছিলেন তিনি।

৫. অমর্ত্য সেন (১৯৯৮)

দ্বিতীয় বাঙালী হিসাবে ভারত মাতার হাতে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কারটি যিনি তুলে দিয়েছিলেন তার নাম অমর্ত্য সেন।  ১৯৩৩ সালের ৩রা  নভেম্বর শান্তিনিকেতনে মাতামহ ক্ষিতিমোহন সেনের ‘পর্ণকুটীরে’ এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিশ্ববিখ্যাত এই বাঙালী। আপনি জেনে অবাক হবেন অমর্ত্য সেনের নামকরণ করেছিলেন আরেক নোবেল বিজয়ী বাঙালী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অমর্ত্য সেনের আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদুরে মানিকগঞ্জে। ১৯৪১ সালে অমর্ত্য সেন তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন পুরোনো ঢাকার সেইন্ট গ্রেগরী উচ্চ বিদ্যালয় এ । দেশ ভাগের পর তাঁর পরিবার ভারতে চলে গেলে অমর্ত্য সেন ভর্তি হন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে। এরপর ১৯৫৩ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বি.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। এবং ওই বছরই তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে পড়তে যান। এরপর ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে বি.এ (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি সদ্যপ্রতিষ্ঠিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়ীত্বপ্রাপ্ত হন।

আরও পড়ুনঃ  রাবণের ১০ মাথা কেন?
অমর্ত্য সেন
অমর্ত্য সেন

গণদারিদ্র্য ,দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, এবং জনকল্যাণ অর্থনীতির অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ক গবেষণা ও উদারনৈতিক রাজনীতিতে এক অসামান্য অবদান রেখে  পৃথিবী জুড়ে বিপুল শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন তিনি।  এবং এ কারণে অমর্ত্য সেনকে বলা হয় কল্যাণ অর্থনীতির জনক। এছাড়াও তিনি নারীর ক্ষমতায়ন, তাদের অধিকার বৃদ্ধি এবং সমাজে তাদের অংশগ্রহণের ওপর ব্যাপক জোর দিয়েছেন। আর তার এসব কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তার কর্মমুখর কর্মজীবনে তিনি অধ্যাপনা করেছেন বহু প্রতিষ্ঠানে এবং রচনা করেছেন অসংখ্য গবেষনাপত্র ও গ্রন্থাবলী। আর তার লেখা এসকল গ্রন্থবলী পৃথিবীব্যাপী অনূদিত হয়েছে ৩০টিরও বেশি ভাষায়।

৬. বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল (২০০১)

কালের আরেক শক্তিমান লেখক হচ্ছেন বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল বা ভি এস নাইপল। তিনি ভারতীয়-নেপালীয় বংশোদ্ভূত ত্রিনিদাদীয় একজন সাহিত্যিক। তবে তিনি পরবর্তীকালে বৃটিশ নাগরিকত্ব লাভ করেছিলেন এবং আমৃত্যু লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন। ১৮৮০ সালে ভি এস নাইপলের পূর্বপুরুষগণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে ভারত হতে অভিবাসিত হয়ে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো যান। সেখানেই ১৯৩২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই অসামান্য প্রতিভাধর সাহিত্যিক। তার ১৮ বছর বয়সে তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার। আর ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করার ফলেই তার মধ্যে জেগে ওঠেছিল এক অসামান্য সাহিত্যিক সত্তার। নাইপল যেখানেই গিয়েছেন সেখান থেকেই তুলে এনেছেন লেখার উপাদান। নির্মম গদ্যে উপহার দিয়েছেন একের পর এক উপন্যাস অথবা ভ্রমণ বৃত্তান্ত। ভারত, আফ্রিকা বা ত্রিনিদাদে তিনি কখনও ভালো কিছু দেখেননি। তার তির্যক ভাষার কর্কশ বর্ণনায় তৃতীয় বিশ্ব চিত্রিত হয়েছে বিভৎস ভূখণ্ড হিসেবে।

বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল
বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল

এভাবে ৫০ বছর ধরে তিনি ৩০ টিরও বেশী উপন্যাস ও কল্প কাহিনী এবং ভ্রমন ও অভিজ্ঞান ভিত্তিক বই আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন ইংরেজী ভাষায়। আর তার এসব সাহিত্যকর্মকে স্বীকৃতি দিয়ে ২০০১ সালে তাকে ভূষিত করা হয় নোবেল পুরষ্কারে। কালজয়ী লেখক ভি এস নাইপল ২০১৮ সালের ১১ই আগষ্ট ৮৫ বছর বয়সে লন্ডনে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।

৭. ভেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণান (২০০৯)

বিশ্ববিখ্যাত আরও এক নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী হচ্ছেন ভেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণান বা ভেঙ্কি রামাকৃষ্ণান। তিনি মূলত ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান ও ব্রিটিশ গাঠনিক জীববিজ্ঞানী। ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কাড্ডালোর জেলার চিদাম্বরামে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন এই অতুলনীয় প্রতিভাধর বিজ্ঞানী। তার পিতা সি. ভি. রামকৃষ্ণান ও মাতা রাজলক্ষ্মী উভয়েই বরোদা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘকাল। ২০০৯ সালে থমাস এ. স্টিত্‌জ ও অ্যাডা ই. ইউনাথের সাথে যৌথভাবে তিনিও রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাদের গবেষণার বিষয় ছিল : ‘জীব কোষে অবস্থিত রাইবোজোমের গঠন ও ক্রিয়া’। উল্লেখ্য ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন পিটার মুরের সাথে রাইবোজোম নিয়ে পোস্টডক্টরাল ডিগ্রী সম্পন্ন করেছিলেন তিনি। তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন বিজ্ঞানী ভেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণান রাইবোজোমের আণবিক গঠন বের করা এবং এর কার্যপদ্ধতি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখেন । আর এ কারণেই নোবেল কমিটি তাকে রসায়ন শাস্ত্রে নোবেল পুরষ্কার দিয়ে সম্মানিত করে। এরপর ২০১২ সালে আণবিক জীববিদ্যায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য ভেঙ্কটরমনকে নাইট উপাধিতেও ভূষিত করা হয়। তাছাড়া ২০১০ সালে ভারত সরকার তার অতুলনীয় মেধার স্বীকৃতি দিয়ে তাকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক পুরষ্কার, পদ্মবিভূষন পুরষ্কারে ভূষিত করেন।

আরও পড়ুনঃ  শিবের অশ্রু দিয়ে তৈরি পুকুর ও মন্দির
ভেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণান
ভেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণান

৮. কৈলাশ সত্যার্থী (২০১৪)

১৯৫৪ সালের ১১ জানুয়ারী ভারতের মধ্যপ্রদেশের বিদিশায় এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কৈলাশ সত্যার্থী। আজকের বিশ্বে তার পরিচয় তিনি একজন শিশু অধিকার কর্মী। তবে ব্যাক্তিগত জীবনে কৈলাস সত্যার্থী একজন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জনিয়ার। শিক্ষাজীবনে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর উপর স্নাতক ডিগ্রী ও হাই-ভোল্টেজ ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর স্নাতোকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে ভোপালের একটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কয়েক বছর কর্মজীবন অতিবাহিত করেন তিনি। ১৯৮০ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা থেকে অবসর নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাচপান বাঁচাও আন্দোলন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত আশি হাজারেরও অধিক শিশুকে ক্রীতদাসত্বের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে মুক্ত করেছে এবং তাদের পুণঃমিলন, পুণর্বাসন ও শিক্ষায় সহযোগিতা করেছে কৈলাস সত্যার্থীর এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি। এবং প্রতিষ্ঠানটির এসকল কার্যক্রম আজও পূর্ণমাত্রায় চলমান। একই সাথে সংস্থাটি পাচার হওয়া শিশুদের উদ্ধারেও কাজ করে যাচ্ছে অবিরাম। ভারত জুড়ে এই প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে সেচ্ছা-সেবীদের এক বিশাল নেটয়ার্ক।

কৈলাশ সত্যার্থী
কৈলাশ সত্যার্থী

খুব ছোট বয়স থেকে আমাদের সমাজের বর্ণবাদী আচরণ, সামাজিক উঁচু নিচু ও ধনী-দরিদ্রের ব্যাবধান আহত করেছিল কৈলাস সত্যার্থীকে। আর তাই নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে ত্যাগ করে শিশু অধিকারের লড়াইয়ে তিনি সামিল করেছিলেন নিজেকে। আর তার সেই ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে ভারতে এলো আরও একটি নোবেল পুরষ্কার। ২০১৪ সালে পাকিস্থানী কিশোরী মালালা ইউসুফজাই এর সাথে যৌথভাবে তিনি অর্জন করলেন নোবেল শান্তি পুরষ্কার।

৯. অভিজিত ব্যানার্জি (২০১৯)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অমর্ত্য সেনের পর আরো এক বাঙালী হিন্দু সন্তানের মুকুটে শোভিত হল নোবেল পুরষ্কার। তিনি হচ্ছেন অভিজিত বিনায়ক বন্দোপাধ্যায় বা সংক্ষেপে অভিজিৎ ব্যানার্জী। অভিজিতের জন্ম ১৯৬১ সালে মুম্বাইতে। তবে তার পৈতৃক ভিটে কলকাতার বালিগঞ্জে। তার পিতামহ ছিলেন বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এবং তার মাতা পিতা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় ও নির্মলা বন্দোপাধ্যায় দুজনেই ছিলেন অর্থনীতির অধ্যাপক। অসামান্য মেধাবী এই বঙ্গসন্তান ১৯৮১ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতি শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ১৯৮৩ সালে দিল্লীর জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “এসেস ইন ইনফরমেশন ইকোনমিকস” বিষয়ের উপর গবেষনা করে পি এইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। কর্মজীবনে তিনি শিক্ষকতা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এম আই টি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

অভিজিত ব্যানার্জি
অভিজিত ব্যানার্জি

অভিজিৎ ব্যানার্জীর প্রথম স্ত্রী অরুন্ধতী তুলি ব্যানার্জিও ছিলেন এমআইটির প্রভাষক। তার সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর অভিজিৎ বিবাহ করেন তার ছাত্রী ও গবেষনা সঙ্গী এস্তের দুফ্লোকে। এবং এই দম্পত্তির যৌথভাবে লেখা বই “পুওর ইকোনমিক্স” ২০১৯ সালে জয় করে নিয়েছে অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার।

Rate this post

Leave a Reply