মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথি। সমস্ত অমৃতের সন্তানগণের কাছে এদিনটি পরিচিত শ্রীপঞ্চমী, বসন্ত পঞ্চমী, বাণী অর্চনা বা সরস্বতী পূজা নামে। কারন এদিন ধরাধামে আবির্ভূতা হন দেবী সর্বশুক্লা সরস্বতী। সাথে নিয়ে আসেন সুর, সঙ্গীত, জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিদ্যার বর। আর তাই আপামর আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা এদিন মেতে ওঠেন দেবী বাগ্বাদিনী সরস্বতীর চরণ বন্দনায়। সকাল থেকে উপোস করে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ গ্রহণ, প্রতিমা দর্শন ইত্যাদি হয়ে ওঠে এদিনকার প্রধান কাজ। তবে সবকিছুর পাশাপাশি নতুন বিদ্যার্থীদের জন্যও এদিনটি একটি বিশেষ দিন। কারন এদিনে হাতেখড়ি দিয়ে বিদ্যাশিক্ষা করার শুভ সূচনা করে থাকে তাঁরা। তবে প্রশ্ন হল, সরস্বতী পুজোর দিনেই কেন এই হাতে খড়ির আয়োজন করা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর থাকছে এই ভিডিওতে। আশা করি কমেন্টে একবার জয় মাতা সরস্বতী লেখার অনুরোধ রইল।
বৈদিক দেবী সরস্বতী জ্ঞানদায়িনী ও সর্বশুক্লা। তিনি বাগ্দেবী, নিষ্কলা, নিত্যশুদ্ধা। তিনি প্রশস্ত বুদ্ধিদায়িনী ও মোক্ষদাত্রী। তবে তিনি বৈদিক দেবী হলেও, যুগ যুগ ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জ্ঞান, বিদ্যা ও ললিতকলার দেবী হিসেবে তাকে পূজা করে আসছেন পুরাণমতে। তাই সরস্বতী পূজা কবে থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সমাজে প্রচলিত হল, তার সঠিক কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। একইভাবে সরস্বতী পুজোর দিনে হাতেখড়ি দেওয়ার ইতিহাসও অনেকাংশেই অস্পষ্ট। সরস্বতী পুজোর দিনে তাঁর পূজা-অর্চণা এবং পুষ্পাঞ্জলি প্রদানের পাশাপাশি কোমলমতি শিশুদের হাতেখড়ি দেওয়ার বিষয়টিও সমানভাবে গুরুত্ব পায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে। পুজো সমাপনের পর পুরোহিত মহাশয় নব্য পড়ুয়াকে কোলে তুলে নিয়ে শুরু করেন হাতেখড়ি। একটি পাথুরে স্লেটে সাদা চক দিয়ে শিশুর হাত দিয়ে লেখানো হয় অ, আ, ক এবং খ। আর এই আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে সম্পন্ন হয় হাতেখড়ি প্রদান, শুরু হয় একটি শিশুর বিদ্যারম্ভ।
কিন্তু এই সরস্বতী পুজোর দিনেই কেন হাতেখড়ি দেওয়া হয়? আসলে আমাদের বেদাদি শাস্ত্র বা পোরাণিক শাস্ত্রে এই বিধান অনুপস্থিত। বস্তুত সরস্বতী পুজোর দিনে হাতেখড়ির অনুষ্ঠানটি একটি লৌকিক আচার। যেহেতু এদিন এই ধরাধামে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিদ্যা, সঙ্গীত ও কলার বর নিয়ে বেদ প্রসবিনী দেবী সরস্বতী অধিষ্ঠান করেন, তাই এদিন তাঁর আশির্বাদ নিয়ে শুরু হয় শিক্ষাজীবনের শুভ সূচনা। সন্তানের হাতেখড়ি দিয়ে পিতামাতা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন তাদের সন্তানের শিক্ষাজীবন হোক মসৃন ও সফল। যুগ যুগ ধরে এই মান্যতাকে প্রাধান্য দিয়েই চলে আসছে কচিকাচাদের হাতেখড়ি দেওয়ার অনুষ্ঠান।