আচ্ছা ছলনা করা বা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে স্বার্থোদ্ধার করা কি পাপ? গরুড় পুরাণে স্বয়ং ভগবান শ্রীবিষ্ণু আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন ছলনা বা মিথ্যার প্রয়োগ না করার জন্য। তবে কেন তাঁর অষ্টম অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মহাভারতে বারংবার ছলনার আশ্রয় নিয়েছেন? নিজের তৈরি বিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি আসলে কি প্রমাণ করতে চেয়েছেন? তাছাড়া এসকল ছলনার আশ্রয় নিয়ে তিনি কি ঠিক করেছেন নাকি ভুল করেছেন? প্রিয় দর্শক, আজ আপনাদের জন্য উপস্থিপিত হল মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের করা গুরুত্বপূর্ণ ৪টি ছলনার ঘটনা। সেই সাথে এই সকল ছলনা তিনি কেন করেছিলেন এবং এবং এসকল ছলনার আশ্রয় নেওয়া তাঁর জন্য উচিত নাকি অনুচিত ছিল তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব আমরা।
জয়দ্রথের সাথে শ্রীকৃষ্ণের ছলনা
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ১৩তম দিনে চক্রব্যূহ নামক এক অভেদ্য সামরিক কাঠামো নির্মাণ করেছিলেন গুরু দ্রোণাচার্য। এই ব্যূহ ভেদ করার বিদ্যা জানতেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুন, প্রদ্যুম্ন এবং অভিমন্যু। কিন্তু দ্রোণাচার্যের ইঙ্গিতে সেদিন কুরুক্ষেত্রের দক্ষিণদিকে সংশপ্তকগণ অর্জুনকে যুদ্ধে আহবান করেন। ফলে চক্রব্যূহ মোকাবেলা করার জন্য এক অভিমন্যু ছাড়া আর কেউই ছিল না পাণ্ডবপক্ষে। তবে অভিমন্যু চক্রব্যূহ ভেদ করার বিদ্যা জানলেও বের হয়ে আসার বিদ্যা জানতেন না। তবুও পাণ্ডবগণের পক্ষে অভিমন্যুকে পাঠানো ছাড়া আর অন্য কোন উপায় ছিল না। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল অভিমন্যু চক্রব্যূহ ভেদ করে প্রবেশ করার সাথে সাথে পাণ্ডব রথী মহারথীরা অভিমন্যুর সাথে সাথে চক্রব্যূহের মধ্যে প্রবেশ করে অভিমন্যুকে রক্ষা করবেন। কিন্তু কূট জয়দ্রথের ছিল একটু আলাদা পরিকল্পনা। পাণ্ডবদের বনবাসের সময় দ্রৌপদীকে অপহরণ করতে গিয়ে তিনি চরমভাবে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত হয়েছিলেন পাণ্ডবদের হাতে। সেই অপমানের বদলা নিতে তিনি ভগবান শিবের তপস্যা করে লাভ করেছিলেন একটি অদ্ভূত বর। বরটি ছিল অন্তত একদিনের জন্য তিনি পঞ্চপাণ্ডবকে পরাজিত করতে পারবেন। আর সেই দিন হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের এই ১৩তম দিনটিকে।
ফলে অভিমন্যু চক্রব্যূহ ভেদ করে ভিতরে প্রবশ করলেও বাকী পাণ্ডগণ প্রবেশ করার আগেই ব্যূহের সম্মুখে ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন জয়দ্রথ। ভগবান শিবের বরের প্রভাবে তিনি পাণ্ডব ভ্রাতাদেরকে পরাজিত করে বূহ্যের দ্বার রক্ষা করলেন। ফলে ১৬ বছরের এক বিষ্ময় বালক একেবারে একাকী হয়ে পড়লেন অগণিত কৌরব সেনাদের মধ্যে। তবে সিংহশাবক যেভাবে অতিকায় হস্তির দলকে তাড়া করে সেভাবেই দোর্দণ্ড প্রতাপে যুদ্ধ করলেন অভিমন্যু। তাঁর অভূতপূর্ব এবং ক্ষিপ্রতা সম্পন্ন অস্ত্র চালনা দেখে দিশেহারা হয়ে পড়ল কৌরব সৈন্যরা। তাঁর অস্ত্রাঘাতে মূর্ছিত হয়ে পালায়ন করলেন মদ্ররাজ শল্য এবং দুঃশাসন। এক অভিমন্যুর বাণে নিহত হলেন কর্ণের ভ্রাতা, শল্যের ভ্রাতা, শল্যপুত্র রুক্মরথ, দুর্যোধনের পুত্র লক্ষণ ও কোশলরাজ বৃহদবল। অবশেষে অভিমন্যুর সাথে যুদ্ধে না পেরে উঠে দুর্যোধনের পরামর্শে তাঁর পিছন দিক থেকে অস্ত্রাঘাত করে তাকে রথচ্যূত ও ধনুর্হীন করে ফেলেন কর্ণ। এরপর সপ্তরথী তথা দ্রোণাচার্য, কৃপাচার্য, কর্ণ, শকুনি, দুর্যোধন, দুঃশাসন এবং অশ্বত্থামা একযোগে অন্যায়ভাবে শরবর্ষণ করতে থাকেন এই কিশোর বালকের উপরে। অস্ত্র এবং রথ বিহীন অভিমন্যু রথের চাকা দিয়ে কিছুক্ষণ আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিলেন। তবে দুঃশাসনের পুত্র এসে তাঁর মাথায় গদাঘাত করায় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণত্যাগ করেন তিনি।
সেদিনকার যুদ্ধ শেষে অর্জুন পাণ্ডবশিবিরে ফিরে এসে যখন প্রিয় পুত্র অভিমন্যুর মৃত্যুসংবাদ শুনলেন, তখন শোকে, দুঃখে, ক্ষোভে পাথর হয়ে গেলেন তিনি। এবং অভিমন্যুকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্য তিনি জয়দ্রথকে প্রধান অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করলেন। এবং এরপর তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন আগামীকাল সুর্যাস্তের আগে তিনি জয়দ্রথকে বধ করবেন। অন্যথায় তিনি নিজে অগ্নিতে প্রবেশ করে আত্মহূতি দেবেন।
অর্জুনের প্রতিজ্ঞার কথা কৌরব শিবিরে পৌছালে এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখলেন তাঁরা। যদি তাঁরা ১৪তম দিনে কোনভাবে জয়দ্রথকে অর্জুনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন তাহলে পতন ঘটবে অর্জুনের। ফলে বাকী পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে সহজ জয় অর্জন করতে পারবেন তাঁরা। তাই যুদ্ধের ১৪তম দিনে ‘শকটব্যূহ ও ‘চক্রব্যূহর’ সমন্বয়ে একটি অত্যন্ত জটিল সামরিক কাঠামো সৃষ্টি করেন দ্রোণাচার্য। এই ব্যূহের পিছনে পদ্ম নামক একটি গর্ভব্যূহ এবং তার মধ্যে একটি সূচীব্যূহ নির্মিত হল। এই ব্যূহের একেবারে পিছনে রাখা হয় জয়দ্রথকে। দ্রোণাচার্য রইলে প্রথম ব্যূহের সম্মুখে এবং তাঁর থেকে জয়দ্রথকে রাখা হল ৬ ক্রোশ দূরে। এছাড়াও কর্ণ, অশ্বত্থামা, ভুরিশ্রবা, বৃষসেন, শল্য ও কৃপাচার্যের নেতৃত্বে ৬০,০০০ রথী, ১৪,০০০ হাতি, ১ লক্ষ অশ্বারোহী এবং এক লক্ষ কুড়ি হাজার পদাতিক সৈন্য আলাদাভাবে নিয়জিত করা হল শুধুমাত্র জয়দ্রথের সুরক্ষার জন্য।
এদিনে দ্রোণাচার্যের সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু করেন অর্জুন। তবে দ্রোণাচার্যকে পরাস্ত করা অসম্ভব বুঝে শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শে তাকে এড়িয়ে জয়দ্রথের দিকে ছুটে যান অর্জুন। এরপর একে একে কৃতবর্মা, শ্রুতায়ু, শ্রুতায়ুধ, বিন্দ ও অনুবিন্দসহ শত-সহস্র যোদ্ধা গতি রোধ করলেন অর্জুনের। তবে পুত্রহত্যার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া অর্জুনের তীব্র রোষের মুখে এরা সকলেই পরাজিত অথবা নিহত হলেন। এমনকি বহু সহস্র যবন, পারদ, শক, দরদ, পুণ্ড্র ইত্যাদি মুণ্ডিতমস্তক, অর্ধমুণ্ডিতমস্তক, শ্মশ্রুধারী, অপবিত্র, কুটিলানন ও ম্লেচ্ছ সৈন্যরাও অর্জুনের সাথে যুদ্ধ করতে এসে ত্রাহি ত্রাহি রবে পালাতে লাগলেন। অর্জুনের এই মহাবিনাশী রূপ আগে কেউ কখোনো দেখেনি। এমনকি গুরু দ্রোণাচার্যের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভেদ্য বর্ম পরিধান করেও অর্জুনের কাছে পরাজিত হলেন দুর্যোধন। তবে এতসব ঘটনার মধ্য দিয়ে সুর্যদেব প্রায় অস্তমিত। তখনও জয়দ্রথকে সুরক্ষা প্রদান করছেন কর্ণ, অশ্বত্থামা, ভুরিশ্রবা, বৃষসেন, শল্য ও কৃপাচার্য এই ছয়জন মহারথ। এবং এদেরকে পরাজিত না করে জয়দ্রথকে বধ করা অসম্ভব।
মহাবীর অর্জুন এভাবে বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন বৈকি তবে কিছুক্ষণের মধ্যে অস্ত গেলো সূর্য, নেমে এল অন্ধকার। কৌরব শিবির ফেটে পড়ল উল্লাসে। ব্যূহের ভিতরে লুকায়িত জয়দ্রথ সগর্বে মাথা উচু করে দেখার চেষ্টা করলেন সূর্যাস্ত হয়েছে কিনা। কিন্তু এ কি! জয়দ্রথ যেইমাত্র সুরক্ষাবলয়ের বাইরে এসেছেন, ঠিক তখনই সূর্যের উপর থেকে সরে গেল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শন চক্র। দিনমিণির আলো আবারও আলোকিত করল কুরুক্ষেত্রের ময়দানকে। শ্রীকৃষ্ণ এবার তাঁর সেই দুষ্টুমি ভরা বাঁকা হাসি হাসি হেসে আড়চোখে তাকালেন অর্জুনের দিকে। বললেন, “পার্থ বধ করো এই পাষণ্ড নরাধমকে। তবে মনে রেখ এর মাথা যেন ভূমিতে না পতিত হয়। কারন জয়দ্রথ তাঁর পিতা বৃদ্ধক্ষত্রের কাছ থেকে বরপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, যে ব্যাক্তি জয়দ্রথের মাথা মাটিতে পতিত করবে সাথে সাথে তাঁর মাথাও শত খণ্ডে খণ্ডিত হবে।”
শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনে নিজের ওষ্ঠপ্রান্ত কামড়ে এক মন্ত্রসিদ্ধ বজ্রতুল্য বাণ নিক্ষেপ করলেন অর্জুন। আর সেই বাণ জয়দ্রথের মস্তক কর্তণ করে শূন্যে ভাসিয়ে নিয়ে অরণ্যে তপস্যারত তাঁর পিতা বৃদ্ধক্ষত্রের কোলে নিয়ে ফেলল। এবং এ ঘটনায় চকিত হয়ে যেইমাত্র বৃদ্ধক্ষত্র নিজের পুত্রের মস্তক মাটিতে ফেললেন সেইমাত্র তাঁর মস্তকও শত খণ্ডে খণ্ডিত হয়ে গেল।
দ্রোণাচার্যের সাথে শ্রীকৃষ্ণের ছলনা
ঋষি ভরদ্বাজের পুত্র দ্রোণাচার্য ছিলেন কুরু পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু। ব্রাহ্মণ কুলজাত হয়েও তিনি পরশুরামের মত বেছে নিয়েছিলেন ক্ষত্রিয় ধর্ম। পরশুরামের কাছে অস্ত্রশিক্ষা করা এই মহাবীর যোদ্ধা অস্ত্রবিদ্যায় ছিলেন ব্যাপকভাবে পারদর্শী। তাঁর অস্ত্রভাণ্ডারে মজুদ ছিল বিপুল পরিমান দিব্যাস্ত্র এবং অপ্রতিরোধ্য সমরাস্ত্র। একই সাথে রণকৌশলের দিক দিয়েও তিনি ছিলেন অতুলনীয়। পাণ্ডবপক্ষের অর্জুন তাঁর সর্বাপেক্ষা প্রিয় শিষ্য হওয়ার সত্তেও নিয়তির বিধান অনুসারে তাকে যুদ্ধ করতে হয়েছিল কৌরবদের পক্ষে। তো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ১০ দিন পরে পিতামহ ভীষ্মের পতন হলে কুরু সেনাপতি হিসেবে নতুনভাবে যুদ্ধে প্রবেশ করেছিলেন গুরু দ্রোনাচার্য। তবে পাণ্ডবদের প্রতি গুরুসুলভ স্নেহের কারনে তিনি তাঁদের কাউকেই বধ করতে চাননি। বরং যুধিষ্ঠিরকে বন্দী করে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাতে ছেয়েছিলেন তিনি।
যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তাঁর দুর্বার প্রহারে রাজা বিরাট ও রাজা দ্রুপদ সহ পাণ্ডবপক্ষের অগণিত যোদ্ধা বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছিলেন। যুদ্ধের ১৩তম দিনে দুর্যোধন দ্রোণাচার্যের সাথে দেখা করে পাণ্ডবদের প্রতি তাঁর স্নেহশীলতাকে তীব্রভাবে ভৎসনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন দ্রোণাচার্য ইচ্ছা করেই পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে তাঁর সর্বশক্তি প্রয়োগ করছেন না। তাছাড়া দ্রোণাচার্যের সমকক্ষ হওয়ার মত কোন যোদ্ধাও পাণ্ডবদের পক্ষে নেই। দ্রোণাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্যোধনের আনা এই পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ চরমভাবে অপমানিত ও ক্ষুব্ধ করে তোলে দ্রোণাচার্যকে। এর ফলশ্রুতিতে যুদ্ধের ১৪ তম দিনে দ্রোণাচার্য হয়ে ওঠেন নিষ্ঠুর ও রক্তলোলুপ এক যোদ্ধা। তিনি নির্বিচারে শক্তিশালী সব সমরাস্ত্র প্রয়োগ করে ছারখার করে দিলেন পাণ্ডববাহিনীর সৈন্যদেরকে। তাঁর সেদিনকার দোর্দণ্ড পরাক্রম দেখে পাণ্ডব সৈন্যদের মনবল একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকল। এমনকি যে ধৃষ্টদ্যুম্নের জন্ম হয়েছিল দ্রোণাচার্যকে বধ করার জন্য, সেই ধৃষ্টদ্যুম্নের পক্ষেই দ্রোণকে বধ করা তো দূরে থাকুক, নিজেকে এবং নিজের সৈন্যদেরকে রক্ষা করাই হয়ে পড়েছিল দুঃসাধ্য। যাইহোক, ১৪তম দিনের যুদ্ধ অবলোকন করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বুঝতে পারলেন, দ্রোণাচার্যের হাতে অস্ত্র থাকা অবস্থায় কোনভাবেই তাকে পরাজিত বা বধ করা সম্ভব নয়। সুতারাং আরও একবার ছলনার আশ্রয় নিতে হল তাকে। কারণ আর একদিন যদি দ্রোণাচার্য এমন ক্ষিপ্র গতিতে যুদ্ধ করেন তাহলে পাণ্ডবদের পরাজয় অনিবার্য। তাই শ্রীকৃষ্ণ খুঁজে বের করলেন দ্রোণাচার্যের সবচেয়ে বড় দুর্বলতাকে। আপনারা জানেন দ্রোণাচার্য তাঁর পুত্র অশ্বত্থামাকে অন্ধভাবে স্নেহ করতেন। এবং অশ্বত্থামাকে বধ করতে পারলে গুরু দ্রোণাচার্যের মনোবল ভঙ্গ করে তাকে বধ করা সম্ভব। কিন্তু অশ্বত্থামা রুদ্রাংশ হওয়ার কারণে তিনি অত্যন্ত নৃসংশ শ্রেণির যোদ্ধা এবং কৌরব বলয়ে প্রবেশ করে তাকে বধ করা আপাতত পাণ্ডবদের পক্ষে অসম্ভব। সুতারাং সহজ একটি বিকল্প খুঁজে বের করতেই হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে। তাই যুদ্ধের ১৫তম দিনে তাঁর নির্দেশে রাজা ইন্দ্রবর্মার অশ্বত্থামা নামক হাতিটিকে বধ করেন ভীম। এরপর যুদ্ধক্ষেত্রে এসে ভীম প্রচার করতে শুরু করেন অশ্বত্থামাকে বধ করা হয়েছে।
ভীমের বক্তব্য শুনে কিছুক্ষণের জন্য স্থবির হয়ে পড়েন দ্রোণাচার্য। তবে মূহুর্তেই তাঁর স্মরণে আসে অশ্বত্থামার রণনৈপুণ্যের কথা। অশ্বত্থামা স্বয়ং রুদ্রের অবতার, তাঁর মাথায় থাকা মণি এবং তাকে দ্রোণাচার্যের দেওয়া সকল প্রকার দিব্যাস্ত্রের জ্ঞান; এসকল কথা স্মরণ করে তিনি বুঝতে পারলেন ভীম মিথ্যা বলেছেন। এবং এই ঘটনা তাকে আরও ক্রুদ্ধ করে তুলল। তিনি আরও বিপুল শক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করলেন পাণ্ডবদের বিপক্ষে। নির্বিচারে এবং চরম নিষ্ঠুরতার সাথে ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করে তিনি হত্যা করলেন বহুসংখ্যক সাধারণ পাণ্ডব সেনাকে। এসময় কিছু সংখ্যক ঋষি এসে দ্রোণাচার্যকে স্মরণ করিয়ে দিলেন চতুর্বেদের জ্ঞানসম্পন্ন একজন ব্রাহ্মণের এরকম নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করা অনুচিত। তাছাড়া ব্রহ্মাস্ত্রের জ্ঞানবিহীন সাধারণ সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করা চরম অধর্ম। তারা দ্রোণাচার্যকে অনুরোধ করেন অস্ত্র ত্যাগ করে এই অধর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখতে। ঋষিদের বক্তব্য শুনে এবার সত্যিই বিচলিত হয়ে পড়লেন দ্রোণাচার্য। তিনি যুধিষ্ঠিরের কাছে জানতে চাইলেন সত্যিই অশ্বত্থামা নিহত হয়েছে কিনা। দ্রোণাচার্যের বিশ্বাস ছিল যে, অন্তত যুধিষ্ঠির কখনোই মিথ্যা বলবেন না। তবে সেবার শ্রীকৃষ্ণ ও ভীমের প্ররোচনায় আংশিক মিথ্যা বলেতেই হয়েছিল যুধিষ্ঠিরকে। তিনি বলেছিলেন, “অশ্বত্থামা হত, ইতি গজ” ইতি গজ কথাটি আস্তে বলার কারনে শুধুমাত্র অশ্বত্থামা হত কথাটাই শুনতে পেয়েছিলেন দ্রোনাচার্য। আর একথা শোনার সাথে সাথে পুত্রস্নেহে অন্ধ দ্রোণাচার্য অস্ত্র ত্যাগ করে অশ্বত্থামার চিন্তা করতে করতে সমাধিস্থ হয়ে পড়লেন। আর এই সুযোগে চরম ক্ষিপ্রতার সাথে একটি তলোয়ার তুলে নিয়ে দ্রোণাচার্যের দিকে এগিয়ে যান ধৃষ্টদ্যুম্ন। অর্জুন তাকে অনুরোধ করেছিলেন দ্রোণাচার্যকে বধ না করে বন্দী করে নিয়ে আসতে। তবে অর্জুনের কথা উপেক্ষা করে দ্রোণাচার্যের শিরোচ্ছেদ করে দিয়েছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন।
কর্ণের সাথে শ্রীকৃষ্ণের ছলনা
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল ১৭তম দিন। এদিন সম্মুখসমরে অংশ নিয়েছিলেন মাতা কুন্তীর দুই বীরপুত্র কর্ণ এবং অর্জুন। তাঁদের মধ্যে চলে আসা দীর্ঘদিনের দ্বন্দ, শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এবং দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটেছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের এই ১৭ তম দিনে। এদিন অর্জুনের হাতে থাকা গাণ্ডীব ধনুক এবং কর্ণের হাতে থাকা বিজয় ধনুকের হুংকারে মুহুর্মুহু প্রকম্পিত হচ্ছিল কুরুক্ষেত্রের ময়দান। রণভূমির অন্য যোদ্ধাগণ নিজেদের রণে ক্ষ্যান্ত দিয়ে এই দুই মহারথীর যুদ্ধ অবলোকন করছিলেন। সূর্যোদয় থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ চলল কয়েক প্রহর পর্যন্ত। কিন্তু সূর্যাস্তের কয়েক মূহুর্ত আগে পর্যন্তও কর্ণ এবং অর্জুনের যুদ্ধের ফলাফল অমীমাংসিতই থাকল। তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে কর্ণের রথের চাকা মাটিতে এমনভাবে বসে যায় যেগুলো রথ চালনাকারী অশ্বগুলোও উত্তোলন করতে পারছিল না। তো মাটিতে বসে যাওয়া রথের চাকা বের করে আনার জন্য বিজয় ধনুক রথে রেখে মাটিতে নেমেছিলেন কর্ণ। আর এখানেই আরও একটি ছলনা করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। নিরস্ত্র কর্ণ যখন রথের চাকা টেনে মাটি থেকে তোলার চেষ্টা করছিলেন তখন তিনি অর্জুনকে নিরস্ত্র কর্ণের উপরে শরাঘাত করতে প্ররোচিত করতে থাকেন।
এখানে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের দুটি নিয়ম আমাদের সবার জানা দরকার।
প্রথম নিয়মটি হচ্ছে দুজন ব্যক্তি তখনই যুদ্ধ করতে পারবেন যখন তাঁরা একই প্রকার অস্ত্র ব্যাবহার করবেন এবং একই ধরণের যুদ্ধবাহনে উপবিষ্ট থাকবেন।
দ্বিতীয় নিয়মটি হচ্ছে কোন যোদ্ধা কোন নিরস্ত্র ব্যক্তির উপরে প্রহার করতে পারবেন না।
তো প্রথম নিয়ম অনুসারে কর্ণ যুদ্ধবাহন ছাড়া অবস্থান করছেন এবং ২য় নিয়ম অনুসারে কর্ণ সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। সুতারাং বর্তমান অবস্থায় কর্ণের প্রতি প্রহার করা যুদ্ধের নিয়মবিরুদ্ধ। অর্জুন যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে এই নিয়ম সম্পর্কে অবগত করেন তখন শ্রীকৃষ্ণ বলেন, “কর্ণ যতক্ষণ নিজের রথে উপবেশন করবেন এবং তাঁর হাতে বিজয় ধনুক থাকবে ততক্ষণ তাকে পরাজিত বা বধ করা দুঃসাধ্য। সুতারাং এই সুযোগের সদ্বব্যাবহার করো।”
এসময় শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের অভিসন্ধি আঁচ করতে পেরে কর্ণ ব্রহ্মাস্ত্রের আহবান করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পরশুরামের অভিশাপের ফলে সে কার্যে বারবার ব্যার্থ হন তিনি। এবং সবশেষে নিজের রথের চাকা উত্তোলন করার জন্য পুনরায় সচেষ্ট হন।
এদিকে অর্জুনের মনে তখনও সংশয়। রথবিহীণ এবং নিরস্ত্র কর্ণের উপরে তিনি প্রাণঘাতী বাণ নিক্ষেপ করতে চাচ্ছিলেন না। এসময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দুর্যোধনের দ্যূতক্রীড়া সভায় কর্ণের অমার্জনীয় ধৃষ্টতার কথা, একবস্ত্রা-রজস্বলা দ্রৌপদীকে কর্ণ কর্তৃক গণিকা সম্বোধন এবং কর্ণসহযোগে সপ্তরথীগণ কিভাবে অন্যায়ভাবে বালক অভিমন্যুকে বধ করেছিলেন সেইসকল কথা মনে করিয়ে দেন। তাছাড়া তিনি অর্জুনকে আরও বলেন যে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যে বিপুল প্রাণহানী ঘটেছে তাঁর পিছনের তিন স্তম্ভ হচ্ছেন পিতামহ ভীষ্ম, গুরু দ্রোণাচার্য এবং অঙ্গরাজ কর্ণ। এই তিন মহারথী যদি তাঁদের কথিত ধর্ম এবং প্রতিজ্ঞার দোহাই দিয়ে দুর্যোধনের পক্ষাবলম্বন না করতেন তাহলে এই বিপুল রক্তপাত ঘটানোর পরিকল্পনা দুর্যোধন কখনোই করতে পারতেন না।
আর এভাবেই শ্রীকৃষ্ণের কথায় পুনরায় উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন অর্জুন। এরপর গাণ্ডীব ধনুকে অঞ্জলিকাস্ত্রকে আহবান করে তা নিক্ষেপ করেন নিরস্ত্র কর্ণের দিকে। আর এভাবেই বিতর্কিতভাবে শেষ হয় কর্ণ ও অর্জুন নামক দুই শ্রেষ্ঠতম ধনুর্বীরের যোগ্যতার পরীক্ষা।
দুর্যোধনের সাথে শ্রীকৃষ্ণের ছলনা
মহাভারতের যুদ্ধের ১৭ দিন অতিবাহিত হয়েছে। পাণ্ডবপক্ষের বড় বড় যোদ্ধাগণ বীরগতি প্রাপ্ত হলেও পঞ্চপাণ্ডব, ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতি যোদ্ধারা এখনো অক্ষত। অন্যদিকে ভীষ্ম শরশয্যায়, এবং দ্রোণাচার্য ও কর্ণের মত কৌরব বীরগণ বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছেন। কৌরবদের এহেন অবস্থায় দুর্যোধনের যুদ্ধ জয় করা এক প্রকার অসম্ভব। তাই দুর্যোধনের নিরাপত্তা প্রদান করতে এবার এগিয়ে এলেন গান্ধারী। তিনি সারা জীবন নিজের দৃষ্টিকে বেধে রেখে যে পতিব্রত ও তপবল অর্জন করেছেন, তা দিয়ে দুর্যোধনের শরীরকে বজ্রের মত কঠিন করে দিতে চাইলেন তিনি। তাই তিনি দুর্যোধনকে আদেশ করলেন গঙ্গায় স্নান করে বিবস্ত্র হয়ে তাঁর সম্মুখে আসার জন্য।
আর এখানেই দুর্যোধনের সাথে ছলনা করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। অন্তর্যামি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বুঝতে পেরেছিলেন গান্ধারীর তপোবল সামান্য নয়। তাঁর দৃষ্টি যদি দুর্যোধনের সারা শরীরে পতিত হয় তাতে দুর্যোধনের সর্বাঙ্গ হবে বজ্রসারময়। এবং এরকম কিছু ঘটলে কোন রথী মহারথীর পক্ষেও দুর্যোধনকে বধ করা সম্ভব হবে না। সুতারাং গঙ্গা থেকে স্নান করে বিবস্ত্র দুর্যোধন যখন তাঁর মাতার কাছে যাচ্ছিলেন তখনই তাঁর পথরোধ করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তিনি দুর্যোধনকে এই বলে প্ররোচিত করেন যে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুত্র কখনোই সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় তাঁর মাতার সামনে যেতে পারেন না। দুর্যোধনের অন্তত নাভিদেশ থেকে জানুদেশ পর্যন্ত ঢেকে তারপর মায়ের কাছে যাওয়া উচিত। স্থূলবুদ্ধি দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণের এই চতুরতা বুঝতে পারেননি। শ্রীকৃষ্ণের প্ররোচনায় তিনি লজ্জাস্থান বস্ত্র দ্বারা নিবারণ করেই হাজির হয়েছিলেন গান্ধারীর সামনে। ফলে গান্ধারী যখন তাঁর চোখের বাধন খুলে দুর্যোধনের দিকে দৃষ্টিপাত করেন তখন তাঁর সারা শরীর সুরক্ষিত হলেও কোমরের নিম্নাংশ থেকে গেল দুর্বল।
যুদ্ধের ১৮তম দিনে সহদেবের হাতে শকুনির মৃত্যুর পর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে দ্বৈপায়ন হ্রদের জলে আশ্রয় নিলেন দুর্যোধন । তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনার জন্য যুধিষ্ঠির শর্ত দেন যে, দুর্যোধন যদি যে কোন অস্ত্র দ্বারা পাণ্ডবদের যেকোন ভ্রাতাকে পরাজিত করতে পারেন তাহলে পাণ্ডবগণ পরাজয় মেনে নেবেন। যুধিষ্ঠিরের এই নির্বুদ্ধিতায় দুর্যোধন আবারও এলেন কুরুক্ষেত্রের ময়দানে এবং হাতে তুলে নিলেন গদা। কারন দুর্যোধন জানতেন তাকে গদাযুদ্ধে পরাজিত করার মত কেউই নেই কুরুক্ষেত্রের ময়দানে। পাণ্ডবপক্ষের ভীম প্রচণ্ড বাহুবল সম্পন্ন এবং গদাযুদ্ধে সিদ্ধহস্ত হলেও গদাযুদ্ধের রণনৈপুণ্যে দুর্যোধনই শ্রেষ্ঠ। তাছাড়া ভীম এবং দুর্যোধন দুজনেই বলরামের শিষ্য ছিলেন বটে তবে শিষ্য হিসেবে ভীমের চেয়ে দুর্যোধন বলরামের কাছে বেশী প্রিয় ছিলেন।
যাইহোক, কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় দুর্যোধন এবং ভীমের মধ্যে প্রচন্ড গদাযুদ্ধ। তাঁরা দুজন দুজনকে গদার আঘাতে পর্যদুস্থ করার প্রাণপন চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু প্রচণ্ড বলশালী ভীম কোনভাবেই যুদ্ধে পেরে উঠছিলেন না দুর্যোধনের সাথে। বরং ধীরে ধীরে যেন পরাজয়ের অন্ধকার গ্রাস করতে শুরু করল পাণ্ডবপক্ষকে। আর ঠিক এই সময় আরও একটি ছলনা করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। আপনারা জানেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের নিয়মানুসারে গদাযুদ্ধে নাভিদেশের নিচে আঘাত করা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সেটা জেনেও শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে মনে করিয়ে দিলেন যে, দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় ভীম দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গ করে বধ করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। আর শ্রীকৃষ্ণের ইশারা পেয়ে অর্জুন ভীমকে দুর্যোধনের উরুতে আঘাত করার জন্য ইঙ্গিত দেন। এরপর ভীমের গদা সরাসরি আঘাত হানে দুর্যোধনের উরুতে। পরাজিত হন দুর্যোধন। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের ঘটনায় ভীমের করা প্রতিজ্ঞা, শ্রীকৃষ্ণের চাতুর্যে গান্ধারীর দৃষ্টি থেকে দুর্যোধনের উরুদেশ ঢেকে রাখা এবং যুদ্ধের ময়দানে নিয়ম ভঙ্গ করে নাভির নিচে আঘাত করা এসবকিছুকে এক সুতায় গ্রথিত করে কৌরব পক্ষের চূড়ান্ত পরাজয় নিশ্চিত করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
প্রিয় দর্শক, এতক্ষণ আপনারা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ময়দানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ ছলনার কথা জানলেন। এবার আসি এসকল ছলনা করা তাঁর উচিত নাকি অনুচিত ছিল সেই প্রসঙ্গে। আসলে পূর্ণাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃতকর্মগুলো সঠিক নাকি ভুল তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা, অধিকার, বা জ্ঞান আমাদের নেই। তবে তাঁর করা এই ছলনাগুলো যে জয়দ্রথ, দ্রোনাচার্য, কর্ণ ও দুর্যোধনের করা ছলনা এবং দুষ্কর্মের প্রতিদান তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এবং এই ছলনাগুলোর মাধ্যমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদেরকে আরও একটি চমৎকার বার্তা দিয়ে গেছেন। আপনারা জানেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে এসেছিলেন অধর্ম, অজ্ঞানতা, পাপচারিতা দূর করে ধর্ম, জ্ঞান এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এবং মহাভারতের বিভিন্ন সময়ে তিনি যে সকল ছলনাগুলো করেছিলেন তা মূলত অধার্মিক কৌরবদের বিনাশ ও ন্যায়বান পাণ্ডবদের প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আর তাঁর কৃত এসকল ছলনা থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে, অধর্মের বিনাশ ও ধর্মের প্রতিষ্ঠা করার জন্য ক্ষেত্রবিশেষ ছলনা করা অনুচিত নয়।