মহাভারত বলছে
“সত্যযুগে সকল স্থানই তীর্থ,
ত্রেতায় পুষ্করের শ্রেষ্ঠত্ব,
দ্বাপরের শ্রেষ্ঠ তীর্থ কুরুক্ষেত্র ,
আর কলিযুগের শ্রেষ্ঠতীর্থ হলো গঙ্গা।”
তাই সনাতন বিশ্বাসমতে কল্লোলিনী গঙ্গাকে বলা হয় পতিতপাবনী বা পতিতোদ্ধারিনী। অর্থাৎ তিনি পাপীদের উদ্ধারকারিণী। যুগ যুগ ধরে এই উপমহাদেশে গঙ্গাজল পান করা হয় অতি পবিত্র জ্ঞানে। সনাতন ধর্মীয় সকল প্রকার মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান গঙ্গার জল ছাড়া কখনোই সম্পূর্ণ হয় না। বলা হয় গঙ্গায় স্নান করলে সকল পাপ নাশ হয়।
একবার দেবী পার্বতীর সখী জয়া ও বিজয়া তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন সকল তীর্থ দর্শন ও তীর্থস্নান করাতে। দেবী তাঁদের অভিলাশপূর্তির আশ্বাসন প্রদান করেন। এরপর তাঁদেরকে গঙ্গাতটে নিয়ে যান এবং সেখানে গঙ্গা দর্শন করিয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। সখীদ্বয় বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন “হে দেবী আমাদেরকে একটিমাত্র তীর্থ দর্শন কেন করালেন?” দেবী পার্বতী উত্তর দিলেন “ গঙ্গা সর্বতীর্থজননী ও সর্বধর্মের প্রসবিত্রী। তাই গঙ্গাদর্শনে সকল তীর্থ পরিভ্রমন ও দর্শন সুসম্পন্ন হয়।”
তাই বেগবতী গঙ্গা নদী হয়েও বহুযুগ ধরেই পূজিতা হয়ে আসছেন মাতৃদেবী রূপে। রামায়ন , মহাভারতসহ বিভিন্ন পুরাণে বহুভাবে তাঁকে মণ্ডিত করা হয়েছে দেবীত্ত্বে ও মহাদেবীত্ত্বে । পদ্মপুরাণ বলছে প্রজাপতি ব্রহ্মার আহ্বানে উদ্বুদ্ধা হয়ে আদ্যাশক্তি থেকে উৎপন্না হন সাতজন শক্তি। তাঁরা হলেন সাবিত্রী, সরস্বতী, লক্ষ্মী, উমা, শক্তিবীজা, তপস্বিনী ও গঙ্গা। ব্রহ্মবৈবর্তপুরান মতে দেবী গঙ্গা মূলপ্রকৃতির প্রধানাংশদের অন্যতমা। আবার মহাভাগবত পুরাণ মতে মূলপ্রকৃতির বিদ্যারূপা শক্তি গঙ্গা, দুর্গা, সাবিত্রী, লক্ষ্মী ও সরস্বতী এই পঞ্চ অংশে বিভক্ত হন। গঙ্গা আকাশ গঙ্গা ‘মন্দাকিনী’ রূপে স্বর্গেও প্রবাহিত । কোন কোন মতে জগতের কল্যানার্থে দেবী গঙ্গা মর্ত্যলোকেও জন্মগ্রহণ করেন গিরিরাজ হিমালয় ও মেনকার কন্যা রূপে। ইনি দেবী পার্বতীর অগ্রজা ভগিনী।
কিন্তু আদ্যাশক্তির এই অংশরূপিণী গঙ্গা মর্ত্ত্যে কেন এলেন? এবং এলেনই বা কিভাবে? কি কারনে তাঁকে এত পবিত্র মানা হয়? কেন গঙ্গার জল এত ব্যাপকভাবে ব্যাবহৃত হয় সনাতনী মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে? গঙ্গার জলে স্নান করে কি কি ফল পাওয়া যায়? গঙ্গার জলে স্নান করলেই কি সব পাপ ধুয়ে যায়? কিরূপে বা কোন মন্ত্র উচ্চারনে দেবী গঙ্গাকে সন্তুষ্ট করা যায়?
এই প্রশ্নগুলোই এখন উঁকি দিচ্ছে আপনার আমার মনের কোনে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের সকলেরই জানার দরকার এই সকল প্রশ্নের উত্তর। আসুন সনাতনের রত্নগর্ভ থেকে জ্ঞান আহরন করি ।
গঙ্গার জন্মকাহিনি বিষয়ে সনাতন ধর্মগ্রন্থগুলোতে তিনটি মত জানতে পারা যায়। প্রথম মতে ব্রহ্মার কমণ্ডলু এক নারীমূর্তির স্বরূপ প্রাপ্ত হয়। এই দৈব নারীমূর্তিকেই পরবর্তীতে গঙ্গা নামে অভিহিত করা হয়েছে। বৈষ্ণব মতানুসারে, ব্রহ্মা তার কমণ্ডলুর জল নিয়ে সশ্রদ্ধ চিত্তে বিষ্ণুর পদ ধৌত করেছিলেন। সেই শ্রীপাদ ধৌত জল থেকেই জন্ম হয় মহাপবিত্র গঙ্গার । তৃতীয় মত অনুযায়ী, গঙ্গা ছিলেন গিরিরাজ হিমালয় ও তার পত্নী মেনকার কন্যা এবং দেবী পার্বতীর জ্যেষ্ঠ্য ভগিনী। তবে প্রতিটি মতেই একথা স্বীকৃত যে ব্রহ্মা গঙ্গাকে পবিত্র করে তাকে স্বর্গে উত্তীর্ণ করেন। কিন্তু স্বর্গস্থ গঙ্গাদেবী কিভাবে মর্ত্যধামে কল্লোলিনী গঙ্গা হয়ে প্রবাহিত হলেন সেকথা আমাদের অনেকেরই অজানা। আসুন প্রথমেই জানা যাক গঙ্গার মর্ত্যারোহনের কাহিনি।
গঙ্গাদেবীর মর্তারোহনের অন্যতম কারন ছিল সাগরের জল পূর্ণ করা।
একসময় বৃত্রাসুর নামক এক ভয়ঙ্কর অসুর দেবতা ও মুনি ঋষিদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। তাঁর মুল শক্তি ছিল কালকেয় জাতির অসুরেরা। কালকেয় অসুরগণ বৃত্তাসুরের দুর্বৃত্তায়নকে মদদ যোগাচ্ছিল পিছন থেকে। এই বৃত্তাসুরের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে ত্রিদেবের পরামর্শে দেবরাজ ইন্দ্র, মহর্ষি দধীচির অস্থি দিয়ে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার সাহায্যে, নির্মান করেন তাঁর অস্ত্র বজ্র। এই বজ্রাঘাতেই তিনি পরাজিত ও নিহত করেন বৃত্তাসুরকে। এর ফলে মুনি ঋষিদের উপর ক্ষুব্ধ হলেন কালকেয় অসুরগণ। সুচতুর পরিকল্পনায় তাঁরা লুকিয়ে পড়লেন সাগরের গভীর তলদেশে। গভীর রাত্রিতে তাঁরা সমুদ্র থেকে উত্থান করে পৃথিবীতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে লাগলেন। তাদের নিষ্ঠুরতার প্রকোপ থেকে মুক্তি পেলনা মানুষ, মুনি-ঋষি, প্রাণিকুল কেউই। দিনের পর দিন তাদের এই বর্বরতার মাত্রা চরম থেকে চরমতম পর্যায়ে পৌছালো।
অবশেষে কোন উপায় না দেখে দেবতারা শরনাপন্ন হলেন অগস্ত্য মুনির। ধ্যানে বসে অগস্ত্য দেখতে পেলেন সব কালকেয় অসুরগণ সমুদ্রের তলদেশে গা ঢাকা দিয়েছে। তখন মুনি এই অসুরদেরকে বের করে আনতে সমুদ্রের সব জল পান করলেন। লুকায়িত অসুরগণ প্রকাশিত হল। তখন দেবতারা তাদেরকে বধ করে আবারো শান্তি স্থাপন করলেন মর্ত্যলোকে। কিন্তু গোল বাধল অগস্ত্য মুনিকে নিয়ে। অগস্ত্য মুনি সমুদ্রের সব জল পান করে ফেলায় জলসঙ্কট দেখা দিল মর্ত্যে । দেবতারা এ বার মহর্ষি অগস্ত্যের কাছে প্রার্থনা করলেন, তিনি যেন পেট থেকে সব জল বের করে সমুদ্রে ফের পূর্ণ করে দেন। কিন্তু অগস্ত্য জানিয়ে দিলেন, তাঁর পক্ষে জল ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। কারন, উদরস্থ জল তিনি হজম করে ফেলেছেন, সেই জল আর ফেরাতে পারবেন না। এ কথা বলে কমণ্ডলু হাতে নিয়ে আশ্রমের দিকে যাত্রা করলেন তিনি।
এবার আসি রাজা ভগীরথের ঘটনায়।
ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের পুর্বপুরুষ ছিলেন রাজা সগর। তিনি ছিলেন যেমন ধার্মিক তেমনি পরাক্রমশালী। দুই স্ত্রী কোশিনী ও সুমতি ও তাদের গর্ভজাত ষাট হাজার একটি পুত্র নিয়ে ছিল রাজা সগরের পরিবার। একবার এই মহাপরাক্রমশালী রাজা ১০০ টি অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। এর মধ্যে ৯৯টি যজ্ঞ তিনি অনায়াসেই সম্পন্ন করে ফেললেন। বাকী রইল একটি মাত্র অশ্বমেধ যজ্ঞ। এই একটি যজ্ঞ সুসম্পন্ন হলেই তিনি দেবরাজ ইন্দ্রের চেয়েও বেশী শক্তিশালী হয়ে যাবেন। তাই দেবরাজ ইন্দ্রও এই যজ্ঞের ফলাফল নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। এদিকে যথাসময়ে ১০০ তম অশ্বমেধ যজ্ঞের কার্যক্রম সূচিত হল। ঈর্ষান্বিত দেবরাজ ইন্দ্র এই যজ্ঞ বিফল করতে চুপি চুপি চুরি করে ফেললেন যজ্ঞের অশ্বটিকে। তারপর অশ্বটিকে বেধে রেখে আসলেন পাতাললোকে ধ্যানমগ্ন কপিল মুনির আশ্রমে। যার ফলে রাজা সগর অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পন্ন করতে পারলেন না। তাই যজ্ঞের ঘোড়া খুঁজে বের করার জন্য রাজা সগর তার প্রথমা স্ত্রীর ষাট হাজার পুত্রকে দায়ীত্ব দিলেন। সেই ষাট হাজার রাজপুত্র অশ্বমেধ যজ্ঞের সেই ঘোড়া খুঁজতে শুরু করলেন ত্রিলোকের প্রত্যেক প্রান্তে। অবশেষে পাতালপুরীতে কপিল মুনির আশ্রমে যজ্ঞের ঘোড়া খুঁজে পেলেন তাঁরা। কিন্তু সেই দুর্বুদ্ধি রাজকুমারগণ ভেবে বসলেন কপিল মুনি স্বয়ং হয়ত যজ্ঞের ঘোড়া অপরণ করেছেন। তাই তাঁরা মুনিকে চোর অপবাদ দিয়ে তাঁর ধ্যান ভঙ্গ করলেন। একে তো দীর্ঘকালের তপস্যা ভঙ্গের অপরাধ তাঁর ওপর চোর অপবাদ। মারাত্নকভাবে ক্রুদ্ধ হলেন কপিল মুনি, তাঁর শরীর থেকে নির্গত হল ভয়ংকর ক্রোধাগ্নি। সেই ক্রোধানলে পুড়ে ভস্মীভূত হলেন সেই ষাট হাজার রাজপুত্র।
দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পরও যখন ষাট হাজার রাজপুত্র ফিরলেন না, তখন রাজা সগর তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী সুমতির পুত্র তথা অসমঞ্জের পুত্র অংশুমানকে পাঠালেন তাদের খোঁজে। পিতামহের নির্দেশে অংশুমান যজ্ঞের ঘোড়া ও কাকাদের খুঁজতে গিয়ে কপিল মুনির আশ্রমে পৌছালেন। তিনি আশ্রম প্রাঙ্গনে খুঁজে পেলেন রাজা সগরের সেই অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া। কিন্তু আশ্রম প্রাঙ্গনে বিপুল পরিমানে মানুষের দেহভষ্ম দেখে তাঁর মনে সন্দেহের উদ্রেক হল। তিনি তখন কপিল মুনির আরাধনা করে তাঁর ধ্যান ভঙ্গ করলেন। অংশুমানের ভক্তিতে সন্তষ্ট হয়ে কপিল মুনি তাঁকে যজ্ঞের ঘোড়া ফিরিয়ে নিয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন। এসময় অংশুমান তাঁর আশ্রম চত্বরে পড়ে থাকা মানুষের দেহভষ্মের কথা মুনিকে জিজ্ঞাসা করলেন। কপিল মুনি তাঁকে তাঁর পৃতব্যদের দুর্বুদ্ধিতার কথা অংশুমানকে খুলে বললেন। তিনি আরো বললেন “ এই পাপে এই ভস্মীভূত রাজকুমারগণ প্রেতলোক প্রাপ্ত হয়েছেন এবং তাদের আত্মার উদ্ধার তথা মুক্তিলাভের অপেক্ষায় অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করতে হবে”। তখন অংশুমান আরও কাতর হয়ে মুনির কাছে এই ষাট হাজার পিতৃব্যদের মুক্তির উপায় জানতে চাইলেন। মুনি বললেন, “ তোমার ষাট হাজার পূর্বপুরুষ মহাপাপী। তাদের মুক্তি শুধুমাত্র পবিত্রতমা গঙ্গার স্পর্শেই সম্ভব।” এরপর মুনি পুনরায় ধ্যানমগ্ন হলেন আর অংশুমানও যজ্ঞের ঘোড়া নিয়ে ফিরে এলেন পিতামহের কাছে।
মহারাজ সগর তার অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পন্ন করেন বৈকি কিন্তু ষাট হাজার পুত্রের মৃত্যুশোক কুরে কুরে খাচ্ছিল তাঁর হৃদয়কে। শত সহস্র চেষ্টা করেও তিনি গঙ্গা দেবীকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি। এবং কিছুকাল পরে তিনি বিফল মনোরথ হয়ে মর্ত্যধাম ছেড়ে চিন্ময় ধামে প্রস্থান করেন। সগর রাজার পরে তাঁর পৌত্র অংশুমানও অনেক স্তবস্তুতি করেও গঙ্গাকে মর্ত্যলোকে আনতে ব্যর্থ হন। অংশুমানের পুত্র দীলিপও অনেক তপস্যা করেও গঙ্গাকে মর্ত্যলোকে আনয়ন করতে পারেননি। পরিশেষে উভয়ের মৃত্যু হলে দীলিপের সন্তান ভগীরথ বহুকাল পরমাত্মা বিষ্ণুর আরাধনা করেন। পরম পুরুষোত্তম ভগবান বিষ্ণু ভগীরথের আরাধনায় সন্তষ্ট হয়ে বললেন,” হে রাজন! আমি তোমার তপস্যায় সন্তষ্ট হয়েছি। এখন তুমি তোমার প্রার্থনা মত বর চাও।” ভগীরথ বললেন,” হে বিভো! আমার পিতৃপুরুষগণ ব্রহ্মশাপে ভস্মীভূত হয়েছেন। তাদের উদ্ধারের জন্য গঙ্গাদেবীকে আমি ধরণীতলে নিয়ে যেতে চাই। যিনি বর্তমানে ব্রহ্মার কমন্ডলুতে বাস করেন। সেই গঙ্গা এখন আপনার তনুতে অনুগতা রয়েছেন। হে প্রভু! আপনি যদি কৃপা করে দ্রব্যময়ী গঙ্গাদেবীকে তনু হতে বহি:প্রকাশ করেন তবেই আমার পিতৃপুরুষগণ মুক্তি লাভ করবে। হে জগন্নাথ! হে কৃপাময়! আপনি এ বর দান করলেই আমি কৃতার্থ হই।” তখন বিষ্ণু বললেন,” হে বৎস! আমি তোমার মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ার বর প্রদান করছি। তুমি গঙ্গাদেবী ও দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা কর। এর মাধ্যমে তুমি গঙ্গাদেবীকে মর্ত্যে প্রবাহিত হওয়ার উপায় জানতে পারবে” একথা বলে ভগবান বিষ্ণু অন্তর্হিত হলেন। তারপর ভগীরথ হিমালয় পর্বতে সুউচ্চ শিখরে বসে সহস্র বৎসর কঠোর তপস্যা করেন। এতে গঙ্গাদেবী সন্তষ্ট হয়ে রাজা ভগীরথকে দর্শন প্রদান করেন এবং তার অভিলষিত বর প্রার্থনা করার আদেশ করেন। তখন ভগীরথ দেবীকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে বললেন,” হে জননি! হে শিবমোহিনি! যদি আমার প্রতি আপনি প্রসন্ন হন, তবে আপনি ভগবান বিষ্ণুর চরণারবিন্দু হতে প্রকাশিত হয়ে ধরাতলে আগমন করুন। ধরণীতলের বিবরপথ দ্বারা গমন করে ব্রহ্মকোপানলে ভম্মীভূত আমার পিতৃপুরুষগণকে উদ্ধার করুন।” তখন গঙ্গা বললেন,” হে বৎস! তাই হবে। আমি বিষ্ণুপাদপদ্ম হতে নি:সৃত হয়ে তোমার পিতৃপুরুষগণকে উদ্ধার করব। কিন্তু তারপূর্বে তোমাকে দেবাদিদেব মহাদেবকে প্রসন্ন করতে হবে। তার আজ্ঞা ব্যতীত আমি ধরণীতলে গমন করতে পারব না। তাছাড়া স্বর্গ হতে আমি প্রবলভাবে মর্ত্যে আগমন করলে সমগ্র মর্ত্যলোক প্লাবিত হবে। সমগ্র সৃষ্টি আমার গর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হবে। তাই আমার গতিকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য তোমার মহাদেবের কৃপা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। তিনি প্রসন্ন হলেই তুমি এ গিরিশিখরে দাঁড়িয়ে মেঘগর্জনের মত শঙ্খনিনাদ করলেই আমি বৈকন্ঠ ধাম হতে বেগবতী হয়ে ব্রহ্মান্ড ভেদ করে ধরণীতলে অবতরণ করব। তোমার পিতৃপুরুষগণকে উদ্ধার করে পাতাল পুরীতে প্রবেশ করব।” এ কথা বলে গঙ্গা অন্তর্ধান হলেন।
ভগীরথ গঙ্গাদর্শনে অত্যাধিক পবিত্র আত্মা হয়ে গঙ্গাদেবীর আজ্ঞানুসারে হিমালয় পর্বতে মহাদেবের তপস্যা করতে লাগলেন। আহার-নিদ্রা বিহীন অবস্থায় তিনি অগণিত বর্ষ মহাদেবের তপস্যা করলেন। সন্তষ্ট হলেন মহাদেব, দর্শন দিলেন রাজা ভগীরথকে। ভগীরথ মহাদেবকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করলেন এবং আনন্দে নৃত্য করতে লাগলেন। তিনি বললেন,” হে পরমেশ্বর! আজ আমার জন্ম, জীবিত, যজ্ঞ, জপ,তপস্যা সকলই সফল হল। কারণ আপনাকে আমি নয়ন দ্বারা দর্শন করলাম। ত্রিভূবনে আমার মত ভাগ্য আর কার আছে।” তখন মহাদেব ভগীরথকে বললেন,” হে পুত্র! তুমি তোমার আকিঞ্চন প্রকাশ কর। আমি তোমাকে বাঞ্ছানুরুপ বর প্রদান করব।” তখন ভগীরথ গদগদ হয়ে বললেন,” দয়াময়! কপিল মুনির অভিশাপে আমার পিতৃপুরুষগণ ভ্স্মীভূত হয়ে নকরযন্ত্রনা ভোগ করছেন। তাদের উদ্ধারের জন্য আমি গঙ্গাদেবীকে ধরণীতলে আনায়নের চেষ্টা করছি। কিন্তু তিনি আপনার আজ্ঞা ব্যতীরেকে ধরণীতলে অবতীর্ণ হবেন না। এছাড়াও তীব্র বেগবতী কল্লোলিনী গঙ্গার অবতরণকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা আর কারও নেই। হে কান্ত! হে ভব! আপনি আজ্ঞা করুন যাতে ত্রিলোকতারিণী গঙ্গা মহাবেগবতী হয়ে নদীরুপে ধরণীতল পবিত্র করে আমার পিতৃপুরুষগণকে উদ্ধার করে পাতালে প্রবেশ করেন।” তখন মহাদেব বললেন,” হে বৎস! তুমি অতি নিঃস্বার্থ। পিতৃপুরুষের উদ্ধারহেতু তোমার যে ত্যাগ তা জগতে অত্যন্ত বিরল। আমি তোমার মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ার আশির্বাদ করছি।“ ভগীরথ মহাদেবকে দন্ডবৎ প্রণাম করে বললেন,” হে দয়াময়! আপনার কৃপায় আমি কৃতার্থ হলাম।” এরপর মহাদেবও সন্তুষ্টির হাসি নিয়ে অন্তর্হিত হলেন।
এবার গঙ্গার আরোহনের পালা।বিষ্ণুপদ ধৌত গঙ্গাকে ব্রহ্মা তার কমণ্ডুলতে ধারণ করলেন। এরপর ব্রহ্মা গঙ্গার ধারাকে পৃথিবী অভিমুখে প্রক্ষিপ্ত করেন। এদিকে কৈলাসে দন্ডায়মান শিব তীব্র ও প্রবল বেগবতী গঙ্গার গতিবেগ মন্থর করতে গঙ্গাকে নিজের জটাজালে আবদ্ধ করে ফেলেন। তারপর তিনি একে একে জটা অবমুক্ত করে গঙ্গাকে বিভিন্ন শাখায় মুক্ত করেন। মুক্তি পেয়ে গঙ্গা তিন ধারায় প্রবাহিত হতে আরম্ভ করলেন –স্বর্গের ধারার নাম হল মন্দাকিনী, পাতালে হলেন ভোগবতী আর মর্তে হলেন অলকানন্দা। গঙ্গার একটি ধারাকে ভগীরথের পিছু পিছু যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। মকরবাহিনী গঙ্গার মর্তের ধারাকে শঙ্খনাদে পথ দেখিয়ে নিয়ে চললেন মহামতি ভগীরথ। অর্থাৎ সামনে শঙ্খ বাজিয়ে পথ চলেছেন ভগীরথ আর পিছনে অনুসরণ করেছেন কল্লোলিনী গঙ্গা। গঙ্গার স্পর্শে মর্ত্যলোক আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠল। মরুভূমি হয়ে উঠল শস্য শ্যামল, বন-বনাঞ্চল শোভিত হল পুষ্প-পত্রে, পাখির কলরবে মুখরিত হল চারিদিক, মনুষ্যকুলের পূজা-আরতি-উলুধ্বনি-শঙ্খনাদ আর সঙ্গীতে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলল।
বেগবতী গঙ্গা সামনে যা কিছু পেলেন তা সব কিছু ভাসিয়ে দিয়ে চললেন ভগীরথের অনুগামী হয়ে। এক পর্যায়ে গঙ্গার সামনে পড়ল জহ্নু মুনির আশ্রম। জলের তোড়ে তিনি ভাসিয়ে দিলেন সেই আশ্রমের সবকিছু। ধ্যানভঙ্গ হল মুনির। নিজের আশ্রমকে বিদ্ধস্ত অবস্থায় দেখে ভয়ঙ্কর রকমের ক্রুদ্ধ হলেন তিনি। সেই রোষানলে তিনি মুহূর্তের মধ্যে এক চুমুকে গঙ্গাকে শুষে নিলেন। অর্থাৎ মুনির জঠরে বন্দী হলেন গঙ্গা।
এদিকে শঙ্খধ্বনি করতে করতে ভগীরথ কিছুদুর গিয়ে দেখতে পেলেন গঙ্গা নেই। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল তাঁর। তৎক্ষণাৎ কিছুদুর পিছনে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন জহ্নু মুনির বিদ্ধস্ত আশ্রম। তাঁর বুঝতে বাকী থাকল না আসলে কি ঘটেছে। উপায়ান্তর না দেখে জহ্নু মুনির চরণতলে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। অনেক আকুতি-মিনতি এবং প্রার্থনা করে অবশেষে জহ্নু মুনির ক্রোধকে প্রশমিত করলেন তিনি। ভগীরথের প্রার্থনায় খুশি হয়ে মুনি তার জানু ভেদ করে গঙ্গাকে মুক্তি দিলেন। তখন দ্রবময়ী গঙ্গা আপন মূর্তি ধারণ করে বললেন,” হে মুনিবর যখন আমি আপনার দেহ হতে নির্গত হয়েছি তখনই আপনি আমার পিতা হয়েছেন। আপনার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র অনুযোগ নেই। হে পিতা! জহ্নুন মুনির জানুদেশ থেকে নির্গত হওয়ার কারনে আমি জাহ্নবী নামে জগত সংসারে বিখ্যাত হব। যে ব্যক্তি জাহ্নবী নাম স্মরণ করবে তার পাপতাপ দূরীভূত হবে।
শুরু হল আবার পথ চলা। পথ চলতে চলতে এক সময়ে ভগীরথ পথের দিশা হারিয়ে ফেললেন। গঙ্গাদেবীও সগর রাজার বংশকে অন্বেষণ করতে করতে পরম বেগ ধারণ করে দক্ষিণ দিকে গমন করতে লাগলেন। এক পর্যায়ে সমুদ্রের নিকট উপস্থিত হয়ে জলশূন্য সমুদ্রকেও পূর্ণ করে দিলেন তিনি। গঙ্গা যেখানে সাগরের সাথে মিলিত হলেন সেই স্থানের নাম হল গঙ্গাসাগর। এরপর মাতা বসুন্ধরার অনুরোধে শত ধারায় বিস্তৃর্ণ হয়ে শতদিকে গমন করতে লাগলেন দেবী গঙ্গা। জলের শব্দের মহাকল্লোল বহুদিক ছড়িয়ে পড়ল। স্রোতস্বিনী গঙ্গার মর্ত্যে আগমনের ঘটনা স্মরণ করে এখনও ভারতের দক্ষিন প্রান্তে অবস্থিত গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তির দিন আগম ঘটে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও পূর্ণার্থীদের।
এদিকে বিপন্ন হয়ে বিষ্ণুর প্রার্থনা আরম্ভ করলেন তিনি। ভগীরথের স্তবে খুশি হয়ে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম ধারী বিষ্ণু আবির্ভূত হলেন। বিষ্ণু গঙ্গাকে বললেন, ‘এখন থেকে তোমার সত্ত্বা সাত্ত্বিক, রাজসিক আর তামসিক— এই তিন ধারায় প্রবাহিত হবে। রাজসিক আর তামসিক ধারা আরও পূর্ব দিকে এক নুতন পথে প্রবাহিত হবে। আর সাত্ত্বিক সত্ত্বা মূল ধারায় প্রবাহিত হয়ে কপিল মুনির আশ্রমে পৌঁছবে।’ পুবের সেই রাজসিক-তামসিক ধারার নাম হল পদ্মা। ভারতের উত্তরাপথের সব নদীপ্রবাহ এসে মিশলো গঙ্গার দুই ধারায়। আর কৈলাস পর্বত থেকে মহাদেবের পদধৌত ব্রহ্মপুত্র এসে মিশলো পদ্মায়। আর ভগীরথকে বিষ্ণু বললেন, ‘তুমি এই নদীপথ অনুসরণ করে পিছন দিকে ফিরে গেলে পথের দিশা আবার খুঁজে পাবে। তখন সেই পথে গঙ্গার সাত্ত্বিক ধারাকে নিয়ে মুনির আশ্রমে পৌঁছবে।’
ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশে ভগীরথ আবার পশ্চাদদিকে ফিরে গিয়ে গঙ্গার সাত্ত্বিক ধারাকে নিয়ে মুনির আশ্রমে পৌঁছলেন। কপিলমুনির আশ্রমে উপস্থিত হলে মহর্ষি কপিল গঙ্গাদেবীকে মাতৃজ্ঞানে আহ্বান করলেন। তখন জাহ্নবী জিজ্ঞাসা করলেন,” মহর্ষি! সগর সন্তানগণ কোন স্থানে ভস্মীভূত হয়েছেন? তখন মুনিবর বললেন,” জননী! দেখুন ভস্মরাশি স্থানে স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। গঙ্গা সে ভস্মরাশি দেখা মাত্রই তা জলপ্লাবিত করলেন। ভ্স্ম সকল গঙ্গার জল স্পর্শমাত্রই চারুচতুর্ভুজধারী হয়ে দিব্যরথে আরোহণ করে ব্রহ্মলোকে গমন করতে লাগলেন। পিতৃপুরুষগণের মুক্তি লাভ দর্শন করে আনন্দে নৃত্য করলে লাগলেন। আর গঙ্গার জয় হোক জয় হোক বলে ধ্বনি দিতে লাগলেন। ভগীরথ রোমাঞ্চিত হয়ে পুনরায় শঙ্খধ্বনি করলে লাগলেন; সেই শঙ্খধ্বনি শ্রবণ করে গঙ্গা পাতাল বিবর হতে ধরণীতলে আগমন করলেন। আর একটি ধারা পাতালপুরীতে রয়ে গেল। সে ধারাটি ভোগবতী নামে বিখ্যাত হলেন। আর ভগীরথের নাম থেকে গঙ্গার সাত্ত্বিক ধারার নাম হল ভাগীরথী। এভাবে গঙ্গাদেবী যিনি বিষ্ণুপাদপদ্মে বাস করতে; তিনিই সর্বলোকের হিতার্থে পৃথিবীতে আগমন করেন।
তবে গঙ্গাস্নান করলেই কি সর্বপাপ নাশ হয়? চলুন একটি ঘটনার মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক।
একবার আদিযোগী শিব তার পত্নী তথা পার্বতীকে নিয়ে আকাশ পথে কৈলাশ পর্বতে যাচ্ছিলেন। পথে তারা দেখলেন, গঙ্গা নদীতে অনেক ব্যক্তি পাপমুক্ত হবার আশায় গঙ্গাস্নান করছেন। এত লোকের একসাথে স্নান করা দেখে পার্বতী অবাক হলেন। তিনি শিবকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই যে এত লোক গঙ্গা স্নান করছেন, তারা সবাই কি পাপমুক্ত হন?” প্রশ্ন শুনে শিব বললেন, “চলো, আমরা নিজেরাই উত্তর খুঁজে দেখি।”
এরপর শিব গঙ্গা নদীর তীরে শব অর্থ্যাৎ মৃত সেজে শুয়ে পড়লেন। পাশে বসে পার্বতী সদ্য বিধবা সেজে তথা ধুমাবতীর রূপ ধারন করে বিলাপ শুরু করলেন। গঙ্গা স্নান করে অনেকেই তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ দৃশ্য দেখে তাঁরা কারণ জিজ্ঞাসা করলেন বিধবাবেশী দেবী পার্বতীকে। পার্বতীকে তাদের উত্তর দিলেন, “আমার স্বামী কিছুক্ষণ আগে পরলোক যাত্রা করেছেন। কিন্তু আমার এমন কেউ নেই যিনি শবদেহটি সৎকারে সাহায্য করবেন। তাই নিরুপায় হয়ে আমি কাঁদছি”। মাতা পার্বতীর রোদন শুনে অনেকেই শবদেহটি বহন করে শ্মশানে নিয়ে যেতে আগ্রহী হলেন। কিন্তু বিধবাবেশী পার্বতী জানালেন, একটি শর্তে তার স্বামীর শবদেহটি স্পর্শ করা যাবে। শর্তটি হলো, যিনি নিষ্পাপ ও পবিত্র শুধুমাত্র তিনিই এই শবদেহের সৎকারকার্যে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। একথা শুনে থমকে গেলেন সবাই। তাঁরা সবাই গঙ্গাস্নান করেও নিজেকে পবিত্র বা নিষ্পাপ মনে করতে পারছিলেন না। অগত্যা কেউই শবদেহের সৎকারকার্যে এগিয়ে আসতে সাহস পেলেন না।
ঘটনাক্রমে এক মহাপাপী সেই পথ ধরে যাচ্ছিলেন। বিধবাবেশী পার্বতীর কান্না শুনে এগিয়ে এলেন তিনি, জিজ্ঞেস করলেন, “মাতা, আপনি কাঁদছেন কেন?” বিধবারূপী পুনরায় তাঁকে আগের সমস্ত কথা বললেন। পার্বতীর কথা শুনে সে পাপী লোকটি বললেন, “মাতা, আপনি কোন চিন্তা করবেন না। গঙ্গাস্নান করলে সব পাপ দূর হয়ে যায়। আমি স্নান করে এসে শবদেহটির সৎকারের ব্যাবস্থা করছি” একথা বলে লোকটি দ্রুত স্নান সেরে এসে দেখলেন সেখানে শবটিও নেই, সেই ক্রন্দনরত বিধবাও নেই! ততক্ষনে শবরূপী শিব এবং বিধবাবেশী পার্বতী আবারও আকাশপথে যাত্রা শুরু করেছেন। শিব এবার স্মিত হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তাহলে কী বুঝতে পারলে?” পার্বতী উত্তর দিলেন, “শুধু গঙ্গাস্নান করলেই পাপমুক্ত হওয়া যায় না। বরং যারা দৃঢ় বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে গঙ্গাস্নান করে তারাই পাপ থেকে মুক্তি লাভ করে।”
আমরা অনেকেই পূণ্যলাভের আশায় এবং পাপমুক্তির জন্য অনেক ধরণের কাজই করে থাকি। কিন্তু মনে যদি দৃঢ় বিশ্বাস ও আস্থা না থাকে যে, কাজটি করে আমার পূণ্য হবে বা পাপমুক্তি হবে, তাহলে সে কাজটির ফল পাওয়া যায় না।
এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন তিথিতে গঙ্গা স্নান করলে কি কি ফল লাভ হয়।
- জ্যৈষ্ঠ মাসের মঙ্গলবার শুক্লা দশমী তিথিতে যদি দশহরা পড়ে তাহলে সেদিন গঙ্গা স্নান করলে দশ জন্মের অর্জন করা সব পাপ ক্ষয় হয়। এছাড়াও অযুত পরিমান অশ্বমেধ যজ্ঞের যে ফল মেলে তা শুধুমাত্র একবার দশহরা স্নান করলে লাভ করা যায়। এই যোগ ভাগিরথ দশহরা নামে পরিচিত।
- স্কন্দ পুরাণ বলছে চৈত্রমাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে শতভিষা নক্ষত্র যোগ হলে সেই তিথি বারুণী নামে পরিচিত। এই তিথিতে গঙ্গা স্নান করলে বহুশত সূর্যগ্রহনে গঙ্গাস্নানের যে ফল সেই ফল লাভ করা যায়।
- রবিবারে সূর্যগ্রহন এবং সোমবারে চন্দ্রগ্রহন হলে চূড়ামনি যোগ হয়। এই যোগে গঙ্গাস্নান করলে অনন্ত গঙ্গাস্নানের মতো ফল লাভ হয়।
- গ্রহন চলাকালীন যে গঙ্গাস্নান তাকে গ্রহন স্নান বলা হায়। আর গ্রহন শেষের যে স্নান তাকে বলা হয় মুক্তিস্নান বা মোক্ষস্নান। পুরাণে বর্ণিত হয়েছে সূর্যগ্রহনকালে হরিদ্বারে গঙ্গাস্নান পুন্যদায়িনি প্রয়াগ, পুষ্কর, গয়া এবং কুরুক্ষেত্রের মত পুণ্যদায়ীনি।
- ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের যে দ্বাদশী তিথি গোবিন্দ দ্বাদশী নামে পরিচিত। এই দ্বাদশী মহাপাপ নাশিনী। এই তিথিতে গঙ্গাস্নান করলে মহাপাপও নাশ হয়।
- পুনর্বসু নক্ষত্র ও বৃষলগ্ন যদি চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমীতে যোগ হয়, তাহলে এই যোগে ব্রহ্মপুত্রে স্নান করলে সকল পাপ থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং সমস্ত তীর্থস্থান পরিভ্রমন ও স্নানের ফল লাভ হয়।
- পৌষমাসের অমাবস্যা তিথিতে মূলানক্ষত্র যোগ হলে হয় নারায়ণী যোগ। এই যোগে করতোয়াতে স্নান করলে তিন কোটি কুল পর্যন্ত উদ্ধার হয়ে যায়।
পরিশেষে পবিত্ররুপীনী গঙ্গাদেবীর মন্ত্র দিয়ে শেষ করতে চাই।
সদ্যঃ পাতকসংহন্ত্রী সদ্যোদুঃখবিনাশিনী।
সুখদা মোক্ষদা গঙ্গা গঙ্গৈব পরমা গতিঃ।।
অর্থঃ যিনি তত্ক্ষণাৎ পাপ হরণ করেন, দুঃখ বিনাশ করেন, সুখদাত্রী মোক্ষদাত্রী গঙ্গা, সেই গঙ্গাই আমার পরম গতি।