আপনারা অনেকেই সংকটমোচন শ্রীহনুমানের পঞ্চমুখী রূপ দেখে থাকবেন। এই রূপে শ্রীহনুমান পাঁচটি আলাদা আলাদা মস্তক ধারন করেছিলেন। কিন্তু জানেন কি, জ্ঞান-গুণ সাগর শ্রী হনুমান কেন এই পঞ্চমুখী রূপ ধারন করেছিলেন? আসুন একটি ছোট্ট কাহিনীর মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক পঞ্চমুখী হনুমানের রহস্য। সেই সাথে থাকছে হনুমানের এই পাঁচটি মুখের তাৎপর্য। যারা জীবন যুদ্ধের নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত তাদেরকে ভিডিওটি সম্পুর্ণ দেখার অনুরোধ রইল এবং আলোচনা তথ্যপূর্ণ মনে হলে কমেন্টে একবার জয় বজরংবলি লিখে যাওয়ার অনুরোধ রইল।
কৃত্তিবাসী রামায়ন থেকে জানা যায়, রাম-রাবণের যুদ্ধের সময় নিজের পরাজয় আসন্ন দেখে লংকেশ্বর রাবণ অত্যন্ত চিন্তিত হলেন। এরপর পাতাল লোক থেকে ডেকে পাঠালেন পাতালপুরীর রাজা মহিরাবণকে। এই মহিরাবণ ছিলেন রাবণের পুত্র বা মতান্তরে ভ্রাতা। এবং এই মহিরাবণের পুত্র ছিলেন অহিরাবণ। যাইহোক, রাবণের নির্দেশে মহিরাবণ বিভীষণের রূপ ধারন করে রাম শিবিরে প্রবেশ করেন এবং মায়াবলে রাম-লক্ষণকে অচেতন করে নিয়ে যান পাতাল লোকে। রাম-লক্ষণের অনুপস্থিতি টের পেয়ে শ্রীহনুমান দেখতে পেলেন শিবিরের পাশে একটি সুড়ঙ্গ পাতাল লোকের দিকে নেমে গেছে। তিনি বুঝতে পারলেন রাবণের ষড়যন্ত্রেই রাম-লক্ষণকে অপহরণ করে পাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই তিনিও কালক্ষেপণ না করে দ্রুত বেরিয়ে পড়লেন পাতাল লোকের অভিমুখে। উল্লেখ্য, পাতাল-রাজ মহীরাবণ ছিলেন দেবী পাতাল ভৈরবীর একনিষ্ঠ ভক্ত। তাই রাম-লক্ষণকে নিয়ে পাতালে পৌছে তিনি তাঁদেরকে দেবী পাতাল ভৈরবীর উদ্দেশ্যে বলিদান করার প্রস্তুতি শুরু করলেন। দেবীর চারপাশে পাঁচটি প্রদীপ জ্বেলে তিনি শুরু করলেন দেবীর পূজা। এদিকে দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করে শ্রীহনুমানও পৌছে গেলেন পাতাললোকে। হনুমান দেখতে পেলেন বন্দী রাম-লক্ষণের সামনে ৫টি প্রদীপ জ্বেলে পুজোয় বসেছেন মহীরাবণ। জ্ঞান-গুণ সাগর হনুমান দেখতে বুঝতে পারলেন, অসুর মহীরাবণ রাম-লক্ষণকে বলি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, এবং তাঁদের সামনে যে পাঁচটি প্রদীপ জ্বালানো রয়েছে সেগুলো একবারে নেভাতে পারলেই মহীরাবণকে পরাজিত করা সম্ভব। তাই এবার সংকটমোচন শ্রীহনুমান ধারণ করলেন তাঁর পঞ্চমুখী রূপ। পাঁচটি মুখ, দশটি হাত ও পনেরটি নয়ন সম্বলিত এই রূপ ধারন করে তিনি একসাথে নিভিয়ে দিলেন পাঁচটি প্রদীপ। ফলে দূর্বল হয়ে পড়লেন অসুর মহীরাবণ। এরপর মহীরাবণকে পরাজিত ও শিরোচ্ছেদ করে রাম-লক্ষণ কে উদ্ধার করেন শ্রী হনুমান।
এবার আসি হনুমানের এই পাঁচটি মুখ আসলে কি তাৎপর্য বহন করে সেই প্রসঙ্গে।
- পঞ্চমুখী হনুমানের সম্মুখভাগের বা প্রথম মুখটি তেজদৃপ্ত হনুমানের যা কোটিসূর্যের সমান উজ্জ্বল। এই মুখের তাৎপর্য হল এই মুখটি পাপের সমস্ত দাগ দূর করে, মনের বিশুদ্ধতা দান করে এবং শত্রু দমনে সাহায্য করে থাকে।
- পঞ্চমুখী হনুমানের ২য় মুখটি হচ্ছে তীক্ষ্ণ দন্ত এবং ধনুকের মতো বঙ্কিম ভ্রূ শোভিত নৃসিংহ মুখ। এই ভয়ঙ্কর মুখটি আমাদের ভয় বিনাশ করে।
- ৩য় মুখের স্থানে রয়েছে বক্রচঞ্চু সমন্বিত শক্তিশালী গরুড় মুখ। পঞ্চমুখী হনুমানের এই মুখ সর্পভয় এবং অপদেবতার ভয় দূর করে। এছাড়াও এই মুখটি সৌভাগ্যের প্রতীক বলে বিবেচিত হয় এবং ভক্তদের সকল বাঁধা বিঘ্ন দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- পঞ্চমুখী হনুমানের ৪র্থ মুখটি কৃষ্ণবর্ণ কিন্তু মহাকাশের মতো উজ্জ্বল বরাহমুখ। এই মুখ পিশাচ ও নরকভয় দূর করে সুখ ও সমৃদ্ধি দান করে, মনকে শান্ত রাখে এবং দীর্ঘায়ু ও ধন প্রাপ্তির পথ সুগম করে।
- পঞ্চমুখী হনুমানের পঞ্চম মুখটির নাম হয়গ্রীব। এখানে হয় শব্দের অর্থ ঘোড়া বা অশ্ব এবং গ্রীব শব্দটি দ্বারা গ্রীবা বা মুখ বোঝানো হয়ে থাকে। এই মুখ দানব বিনাশী। বলা হয় এই মুখ ভক্তদের শক্তি ও জ্ঞান দান করে ও আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটায়। এছাড়াও এই রুপ ভক্তদের যে কোন কষ্টের নিবারণ করে এবং মনের সুপ্ত কামনা গুলোকে বাস্তবে রূপদান করতে সাহায্য করে।
এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক পঞ্চমুখী হনুমানের পূজা বা আরাধনা করলে কি কি ফল লাভ হয় সেই সম্পর্কে।
- জীবনের নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত মানুষের ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হন শ্রী পবনপুত্র হনুমান। তাইতো বিপদে আপদে সংকটে সংকটমোচন শ্রী হনুমানের নাম স্মরনের পাশাপাশি হনুমান চল্লিশা পাঠ করে থাকেন শ্রী হনুমানের ভক্তবৃন্দ। তবে এই পঞ্চমুখী হনুমানের নাম জপ পূজা-পাঠ ও স্তবে পাওয়া যায় আরও কিছু বিশেষ ফল।
- বলা হয় জীবনের যেকোন কষ্ট লাঘব করতে হনুমানজীর এই পঞ্চমুখী রুপের আরাধনা করা হয়। খেয়াল করে দেখবেন এই রুপে হনুমানজীর পাঁচটি মুখের প্রতিটির সাথে তিনটি করে সুন্দর নয়ন রয়েছে। এই ত্রিনয়ন আমাদের জীবনের ত্রিতাপ অর্থাৎ আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক তাপ থেকে মুক্তি প্রদান করে।
- শাস্ত্রজ্ঞদের মতে হনুমানজীর এই পঞ্চমুখী রুপের পূজা করলে সব দেব দেবীর পূজার ফল পাওয়া যায়।
- এছাড়াও আর্থিক ও মানসিক কষ্ট দূরীকরণ, যেকোন রকম দুঃশ্চিন্তা ও ভয় থেকে মুক্তি লাভ, শত্রু বাধা দূরীকরন, যে কোন বাধা বিঘ্ন নাশকরন, সৌভাগ্য আনয়ন, ধন প্রাপ্তি ও দীর্ঘ আয়ুপ্রাপ্তি সহ অসংখ্য মঙ্গলজনক কাজ সম্পাদিত হয় শ্রী হনুমানের পঞ্চমুখী রূপের উপাসনা করলে।
তাই শুদ্ধ চিত্তে
ওঁ নমো হনুমতে রুদ্রাবতারায় সর্ব শত্রু সংহারনায় সর্বরোগহরায় সর্ব বশীকরণায় রামদূতায় স্বহা।
এই মন্ত্রটি পঞ্চমুখী হনুমানের সামনে ২১ বার বা ১১ বার স্তব করার বিধান দিয়েছেন শাস্ত্রজ্ঞরা। এতে জীবনের সমস্ত বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে মানুষ ধাবিত হয় সাফল্য ও সমৃদ্ধির দিকে।