ভগবান বিষ্ণুর দশাবতারের কথা আপনারা সবাই শুনেছেন। এমনকি ভগবান শিবের ১৯টি অবতারের কথাও আপনারা অনেকেই জানেন। কিন্তু ভগবান শ্রীগণেশের ১২ টি অবতারের কাহিনী শুনেছেন কি? আজ্ঞে হ্যাঁ, ভগবান বিষ্ণু ও ভগবান শিবের মত বিঘ্নহর্তা শ্রীগণেশও বেশ কয়েকবার বিভিন্ন রূপে অবতার ধারণ করেছেন অত্যাচারী অসুরদের বধ করে জগতে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য। আর দেব গজাননের এই ১২টি অবতারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে মুদগল পুরাণ ও গণেশ পুরাণে। তো চলুন দর্শক কালক্ষেপণ না করে জেনে নেওয়া যাক গণেশ পুরাণে উল্লেখিত গণেশের ৪টি অবতার ও মুদগল পুরাণে বর্ণিত শ্রীগণেশের ৮টি অবতারের আবির্ভাবের কাহিনী। তবে শুরু করার আগে আপনাদের কাছে অনুরোধ, ভিডিয়োটি তথ্যপূর্ণ মনে হলে কমেন্টে একবার জয় শ্রীগণেশ লিখে যাবেন, এবং আপনি যদি আমাদের চ্যানেলে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে যাবেন।
মহোৎকট বিনায়ক অবতার
তো প্রথমেই আসা যাক গণেশ পুরাণে উল্লেখিত শ্রীগণেশের ৪টি অবতারের কথায়। গণেশের এই ৪ অবতার সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগে অবতীর্ণ হন। এদের মধ্যে প্রথম হচ্ছেন মহোৎকট বিনায়ক। পুরাকালে দেবান্তক ও নরান্তক নামের দুই অসুর ভ্রাতা ভগবান শিবকে তপস্যায় সন্তুষ্ট করে অজেয় হওয়ার বরদান প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এর কিছুকাল পরে এই দুই অসুর ভ্রাতা দেবতাদেরকে আক্রমণ করে স্বর্গরাজ্য দখল করেন এবং দেবতাদেরকে বিতাড়িত করেন। এরপর দেবান্তকের অধীনস্থ হল স্বর্গরাজ্য এবং নরানন্তকের অধীনস্ত হল পৃথিবী লোক ও পাতাল লোক। এই দুই অসুরের সৃষ্ট তুমুল অশান্তি, নৈরাজ্য ও ত্রাসের ধ্বংসলীলা থেকে ত্রিলোককে বাঁচাতে এবং দেবান্তক ও নরান্তক নামের অসুরভ্রাতাদ্বয়কে বধ করতে ঋষি কশ্যপের ঔরসে এবং মাতা দিতির গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন ভগবান শ্রীগণেশের অবতার মহোৎকট বিনায়ক। তিনি ছিলেন দশভূজ ও রক্তবর্ণ। তার কপালে ছিল কস্তুরির প্রলেপ এবং বাহন ছিল হাতি বা সিংহ। তবে ঋষি কশ্যপের পুত্র হওয়ার কারনে তার আরেক নাম হয়েছিল কাশ্যপেয়।
তো শ্রীগণেশের অবতার ধারনের কথা শোনার পর অসুর দেবান্তক ও নরান্তক মহোৎকট বিনায়ককে বধ করার জন্য একে একে প্রেরণ করেছিলেন বীরজা নামের এক অসুরীকে ও উদ্ধত ও ধুন্ধুর নামের দুই অসুরকে। তবে শিশু অবস্থাতেই এই অসুর ও অসুরীদেরকে বধ করেছিলেন মহোৎকট বিনায়ক। তাছাড়া মহোৎকট বিনায়কের যজ্ঞপবীত ধারণের অনুষ্ঠানেও ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে বেশ কিছু অসুর প্রেরণ করে তাকে বধ করতে চেয়েছিলেন দেবান্তক ও নরান্তক। কিন্তু এবারও মহোৎকট বিনায়ক কিছু অন্নদানা ছুড়ে দিয়ে সেইসকল অসুরদেরকে বধ করেছিলেন।
একদা কাশি যাওয়ার পথে দেবান্তক ও নরান্তকের কাকা অসুর ধুম্রাক্ষকেও পরাজিত ও বধ করেছিলেন মহোৎকট বিনায়ক। এই ধুম্রাক্ষ সূর্যদেবের তপস্যা করে ত্রিলোক বিজয় করতে সক্ষম এক দেদীপ্যমান অস্ত্র লাভ করেছিলেন। ধুম্রাক্ষকে বধ করার সময় তিনি সেই দিব্যাস্ত্রটিও উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পাশাপাশি ধুম্রাক্ষের অসুরী স্ত্রী ও দুই অসুর পুত্র জৃম্ভ ও মনুকে বধ করেছিলেন তিনি। এবং সবশেষে মহোৎকট বিনায়ক এক ভয়ংকর যুদ্ধে দেবান্তক ও নরান্তক অসুরদ্বয়কে বধ করে পুনরায় শান্তি ফিয়ে আনেন সমস্ত ত্রিলোকে।
ময়ূরেশ্বর অবতার
গণেশ পুরাণ অনুসারে শ্রীগণেশের দ্বিতীয় অবতার হচ্ছেন ময়ুরেশ্বর। ত্রেতা যুগে উত্থান ঘটেছিল সিন্ধু নামক এক মহা শক্তিশালী দৈত্যের। সিন্ধু বহুকাল যাবত তপস্যা করে সন্তুষ্ট করেছিলেন স্বয়ং সূর্যদেবকে। তার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে সূর্যদেব তাকে ত্রিলোক বিজয়ের বরদান দিয়েছিলেন এবং একইসাথে একটি অমৃত কলসও প্রদান করেছিলেন। সূর্যদেব শর্ত দিয়েছিলেন যে, যতদিন পর্যন্ত এই অমৃত কলস অক্ষত থাকবে ততদিন সিন্ধুকে কেউ বধ করতে পারবে না। তো সূর্যদেবের কাছ থেকে প্রাপ্ত অমৃত কলস গলধঃকরণ করে নিজের উদরে স্থিত করেছিলেন সিন্ধু। সুতারাং কারো পক্ষেই অমৃত কলসটিকে আর ভেঙে ফেলা সম্ভব ছিল না। ফলে অমরত্বের মোহে সিন্ধু হয়ে উঠেছিলেন মহা আগ্রাসী। স্বর্গ-মর্ত-পাতাল আক্রমণ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন তিনি। তার অত্যাচারে, দেবতা-মানব-ঋষি-গন্ধর্ব সকলেই করুন আর্তি জানিয়েছিলেন ভগবান শিব ও মাতা পার্বতীর কাছে। আর একারনে শিব-পার্বতীর পুত্র হিসেবে জন্ম নিয়েছিলেন শ্রীগণেশের স্বয়ম্ভূ অবতার ময়ুরেশ্বর। তিনি ছিলেন ষড়ভূজ এবং শ্বেতবর্ণ। তার বাহন ময়ূরের কারনেই তার নাম হয়েছিল ময়ুরেশ্বর। ময়ুরেশ্বরে আবির্ভাবের পরে এক ভয়ংকর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল দৈত্য সিন্ধু ও ময়ুরেশ্বরের অবতারের মধ্যে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে তিনি সিন্ধুর উদরস্থ অমৃত কলসটিকে বের করে আনেন এবং তা ধ্বংস করে দেন। আর এভাবেই তিনি পরাজিত ও বধ করেছিলেন সিন্ধু নামক মহা অত্যাচারী এক দৈত্যকে। যুদ্ধ শেষে তিনি তার বাহন ময়ুরটিকে তার ভ্রাতা কার্তিকেয়কে দান করেন। একারনে আজ আমরা কার্তিকেয়র বাহন হিসেবে ময়ুরকে দেখে থাকি।
গজানন বা সিন্দুর গণেশ অবতার
আপনারা অনেকেই হয়ত ভগবান শ্রীগণেশকে সিঁদুরের প্রলেপ দিয়ে থাকবেন। কিন্তু জানেন কি শ্রী গণেশকে সিঁদুর দানের মহিমা কি? আসলে এই সিঁদুর দানের মধ্যে লুকিয়ে আছে ভগবান শ্রীগণেশ কর্তৃক সিন্দুরাসুর নামক এক ভয়ংকর অসুরকে বধ করার কাহিনী। আর সিন্দুরাসুরকে বধ করার জন্য বিঘ্নহর্তা গণেশ যে বিশেষ অবতারে আবির্ভূত হয়েছিলেন সেই অবতারের নামই হচ্ছে গজানন বা সিন্দুর গণেশ।
সত্য যুগের কথা। একদা ভগবান ব্রহ্মার দিব্যদৃষ্টি থেকে একটি শিশুর জন্ম হয়। শিশুটির শরীরের রঙ টকটকে লাল বর্ণের হওয়ায় তার নাম হয়েছিল সিন্দুর। ভগবান ব্রহ্মা পুত্রস্নেহে সিন্দুরকে দান করেছিলেন দেবতাদের মত ক্ষমতা ও নানবিধ বরদান। এর মধ্যে দুটি বরদান ছিল সিন্দুরের মূল ক্ষমতার উৎস। প্রথম বরদান ছিল কোন দেবতা, মানব বা পশু তাকে বধ করতে পারবেন না। এবং দ্বিতীয় বরদানটি ছিল সিন্দুরকে পরাজিত করতে হলে তার রক্ত দিয়ে স্নান করতে করতে হবে। অন্যথায় সিন্দুর পুনরায় জীবন লাভ করবেন।
এরকম অদ্ভূত দুটি বর লাভ করার পর সিন্দুর হয়ে উঠলেন ভয়ংকর সিন্দুরাসুর। স্বর্গরাজ্য থেকে দেবতাদেরকে বিতাড়িত করে, মুনি ঋষিদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করে এবং ত্রিলোক জুড়ে তুমুল ধ্বসলীলার দামামা বাজিয়ে নিজেকে জাহির করলেন সিন্দুরাসুর। কোনভাবেই এই অসুরের প্রকোপ থেকে পরিত্রাণ না পেয়ে দেবতা ও মুনি-ঋষিগণ কৈলাস পর্বতে গিয়ে মাতা-পার্বতী ও দেবাদিদেব মহাদেবের শরাপন্ন হলেন। সবশেষে হর-পার্বতীর সিদ্ধান্তে সিন্দুরাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন তাঁদেরই পুত্র গণেশ। যেহেতু শ্রীগণেশের শরীর দেবতার এবং মাথাটি প্রাণীর সেহেতু তিনিই একমাত্র সিন্দুরাসুরকে বধ করতে সক্ষম ছিলেন। বাহন ইঁদুর ও চতুর্ভূজ মূর্তি ধারণ করে সিন্দুরাসুরের বিরুদ্ধে তুমুল করলেন তিনি। যুদ্ধের এক পর্যায়ে সিন্দুরাসুরের শরীরকে দুইভাগে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে সেই রক্ত দিয়ে স্নান করলেন শ্রীগণেশ। আর এভাবেই নির্মূল হল সিন্দুরাসুরের সৃষ্ট ত্রাস এবং আতঙ্ক। আর সিন্দুরাসুরের সেই রক্ত সিঁদুরের প্রলেপ হয়ে থেকে গেল গজাননের শরী্রে। একারণে গজানন অবতারে আমরা তার রক্তবর্ণ শরীর দেখে থাকি। এবং একই কারণে শত্রু বিনাশের উদ্দেশ্যে শ্রীগণেশকে সিঁদুর অর্পণ করা হয়। তাছাড়া এই অবতারেই ভগবান শ্রীগণেশ রাজা বরণ্যেকে গণেশ গীতার জ্ঞান প্রদান করেছিলেন।
ধূম্রকেতু অবতার
গণেশ পুরাণ অনুসারে ভগবান শ্রীগণেশের শেষ অবতার হচ্ছেন ধুম্রকেতু বা ধুম্রবর্ণ। তবে বিঘ্নহর্তা গণেশের এই অবতার এখনো আবির্ভূতই হন নি। শ্রীবিষ্ণুর দশাবতারের শেষ অবতার কল্কিদেব ঠিক যেভাবে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনার্থে পৃথিবীতে আবির্ভূত হবেন, ঠিক সেভাই শ্রীগণেশের ধুম্রকেতু অবতার কলিযুগের অন্তে মর্ত্যে আবির্ভূত হবেন। তিনি নীল রঙের অশ্বে আরোহন করে কলিযুগের পাপী ও অত্যাচারীদেরকে বধ করে নতুন সৃষ্টিচক্রের জন্য পৃথিবীকে কলুষমুক্ত করবেন। তবে তার এই অবতার ধারণের মূল উদ্দেশ্য হবে অভিমানাসুর নামক এক অসুরকে বধ করা।
বক্রতুণ্ড অবতার
এবার আসি মুদগল পুরাণ অনুসারে শ্রীগণেশের ৮টি অবতারের প্রসঙ্গে। তার এই আটটি অবতারকে অষ্টবিনায়ক নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এবং এই অষ্টবিনায়াকের প্রথম অবতার হচ্ছেন বক্রতুণ্ড। শ্রীগণেশের বাঁকা শুড়ের কারণে তার আরেক নাম বক্রতুণ্ড। আর এই বক্রতুণ্ড অবতারের সাথে জড়িয়ে রয়েছে মৎসাসুর নামক এক মহাশক্তিশালী অসুরের কাহিনী। একদা দেবরাজ ইন্দ্রের অবহেলায় মৎসাসুর নামক এক দুষ্ট অসুরের জন্ম হয়। এই অসুর চেয়েছিলেন স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জয় করে নিজেকে সর্বশক্তিমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এই হীন উদ্দেশ্যে তিনি কঠোর তপস্যা দ্বারা সন্তুষ্ট করেছিলেন দেবাদিদেব মহাদেবকে। মহাদেব তাকে বর দিয়েছিলেন নির্ভয় হওয়ার। এরপর গুরু শুক্রাচার্যের পরামর্শে এবং ভগবান শিবের বরের প্রভাবে ত্রিলোক জুড়ে তিনি শুরু করেছিলেন মহাতাণ্ডব। তিনি তার নিজের দুই পুত্র সুন্দরপ্রিয় ও বিষপ্রিয়কে নিয়ে জয় করেছিলেন স্বর্গ-মর্ত্য ও পাতাল। বিতাড়িত করেছিলেন মুনি-ঋষি ও দেবতাগণকেও। ভগবান শিব স্বয়ং মৎসাসুরকে বরদান দিয়েছিলেন, তাই তিনি মৎসাসুরকে প্রতিরোধ করতে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি।
অবশেষে ভগবান দত্তাত্রেয় দেবতাদেরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন গম মন্ত্র জপ করার জন্য। এই মন্ত্র জপের ফলে দেবতাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন সিংহবাহণ বক্রতুণ্ড অবতার। তিনি সর্বপ্রথমে মৎসাসুরের দুই পুত্র সুন্দরপ্রিয় ও বিষপ্রিয়কে যুদ্ধে পরাজিত এবং বধ করেন। মৎসাসুর বুঝতে পরেছিলেন, বক্রতুণ্ডের সাথে যুদ্ধে গেলে তার মৃত্যু অনিবার্য। তাই তিনি বক্রতুণ্ড অবতারের সামনে আত্মসমর্পণ করে নিজের প্রাণভিক্ষা করেন। দয়ালু বক্রতুণ্ডও তাকে ক্ষমা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনেন। আর এভাবে আবারও ত্রিলোকে ফিরে আসে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। বলা হয় এই মৎসাসুর আসলে আমাদের মাৎসর্য তথা ঈর্ষার প্রতীক। এবং আমাদের এই ঈর্ষাকে ধ্বংস করার জন্যই আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রীগণেশের এই বক্রতুণ্ড অবতার।
একদন্ত অবতার
শ্রীগণেশের একটি দাঁত ভাঙা হওয়ার কারনে তার আরেক নাম একদন্ত। মুদগল পুরাণ অনুসারে ভগবান শ্রীগণেশ যে অবতারে মদাসুরকে পরাস্ত করেছিলেন তার নাম একদন্ত। একদা অশ্বিনীকুমারদ্বয় ও দেবরাজ ইন্দ্রের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ফলে ঋষি চব্যণ যজ্ঞের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছিলেন মদাসুর নামক বিশালদেহী ও মহাপরাক্রমী এক অসুরকে। মদাসুর তার জন্মের পর অসুরগুরু শুক্রাচার্যের পরামর্শে হ্রীম মন্ত্রে সন্তুষ্ট করেছিলেন দেবী ভগবতীকে। তার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী ভগবতী তাকে দান করেছিলেন তার মনোকামনা পূর্ণ হওয়ার বর। ফলশ্রুতিতে, অন্যান্য অসুরদের মত মদাসুরও ত্রিলোক বিজয়ে অগ্রসর হলেন। জন্মগতভাবে প্রাপ্ত বিপুল শক্তি ও মাতা ভগবতীর প্রদত্ব বরদানকে পূজি করে তুমুল তাণ্ডবলীলা শুরু করেছিলেন মদাসুর। আর এভাবে একে একে যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠলেন স্বর্গ-মর্ত্য-পাতালের অধীশ্বর। ফলে দেবগণ আবারও হয়েছিলেন স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত। আর বরাবরের মত নির্বাসিত দেবতাগণ যখন হারানো স্বর্গরাজ্য ফিরে পাওয়ার আশায় ব্যাকুল, তখন তারা সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন সনৎকুমারদের। তাঁদের পরামর্শে আবারও গম মন্ত্র জপের দ্বারা দেবতাগণ সন্তুষ্ট করেছিলেন বিঘ্নহর্তা শ্রীগণেশকে।
দেবতাদের প্রার্থনায় শ্রীগণেশ এবার এসেছিলেন একদন্ত রূপে। তিনি ছিলেন মুশিকবাহন, চতুর্ভূজ এবং তার কোমরে ছিল শেষনাগ। তো এ পর্যায়ে, মদাসুর ও তার বিশাল সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলেন একদন্ত। মদাসুর যখন একদন্তের দিকে প্রথম তীরটি নিক্ষেপ করেন, তখন তা একদন্তকে আঘাত করার পরিবর্তে তার চরণতলে পতিত হল। এবং মদাসুর তার দ্বিতীয় তীরটি নিক্ষেপ করার আগেই একদন্ত তার কুঠার নিক্ষেপ করে বিদ্ধ করেন মদাসুরকে। মদাসুর বুঝতে পারলেন, একদন্তের সাথে যুদ্ধ জয় করা অসম্ভব। তাই তিনিও একদন্তের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন এবং প্রাণভিক্ষা করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। একদন্ত তাকে ক্ষমা করলেন বটে তবে তাকে আদেশ করলেন পাতাল লোকে ফিরে যেতে এবং স্বর্গ-মর্তে আর কোন প্রাকার বিঘ্ন উৎপাদন না করার জন্য। উল্লেখ্য এই মদাসুরের স্ত্রী ছিলেন লালসা এবং তিন পুত্র ছিলেন বিলাসী, লোলুপ ও ধনপ্রিয়। বাস্তবে মদাসুর আমাদের অহংবোধের প্রতীক এবং অহংকারে সাথে লালসা, বিলাস, লোলুপতা এবং ধনলিপ্সা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর এগুলোকে ধ্বংস করতেই আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রী একদন্ত।
মহোদর অবতার
মোহাসুর নামক অসুরকে বধ করার জন্য দেব গজানন ধারণ করেছিলেন মহোদর অবতার। একদা দেবী পার্বতীর শরীরের তেজ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল মোহাসুর নামক এক অসুরের। দেবী পার্বতীর দ্বারা পরিত্যাক্ত হয়ে তিনি শরাপন্ন হয়েছিলেন অসুরগুরু শুক্রাচার্যের। শুক্রাচার্য বরাবরের মত মোহাসুরকে তৈরি করতে লাগলেন দেবতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। একদা শুক্রাচার্যের পরামর্শে সূর্যদবকে সন্তুষ্ট করে ত্রিলোক বিজয়ের বর প্রাপ্ত হয়েছিলেন মোহাসুর। আর দেবসেনাপতি কার্ত্তিকেয়র হাতে তারকাসুরের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে শুক্রাচার্য এবার ব্যাবহার করলেন সদ্য বরপ্রাপ্ত মোহাসুরকে। তার আদেশে মোহাসুরও স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জয় করে আবারও নির্বাসিত করলেন দেবতাদেরকে। নির্বাসিত দেবতাগণ যখন জানতে পারলেন সূর্যদেবের বরের কারণেই মোহাসুরের এই বাড়-বাড়ন্ত, তখন তারা শরণাপন্ন হলেন সূর্যদেবের।
অবশেষে সূর্যদেবের পরামর্শে, দেবতাগণ তপস্যায় সন্তুষ্ট করলেন পার্বতীনন্দন শ্রীগণেশকে। অতপর মোহাসুরের তাণ্ডব থেকে সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য মহোদর রূপে আবির্ভূত হলেন শ্রীগণেশ। ইনি মূলত বক্রতুণ্ড ও একদন্তের সম্মিলিত রূপ। অবশেষে যুদ্ধক্ষেত্রে সাক্ষাৎ হল মাতা পার্বতীর দুই পুত্র গজানন ও মোহাসুরের। মাতা পার্বতীর অংশ হওয়ার কারনে তারা দুজনেই ছিলেন বিপুল শক্তির অধিকারী। কিন্তু মহোদর ব্রহ্মের প্রজ্ঞার প্রতীক এবং মোহাসুর মোহের প্রতিনিধি হওয়ায় জ্ঞানের কাছে ধীরে ধীরে পরাজিত হতে শুরু করল মোহ। এবং এক পর্যায়ে মোহাসুর নিজের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী জেনে আত্মসমর্পণ করলেন মহোদরের কাছে। আর এবারও মোহোদর মোহাসুরকে ক্ষমা করে প্রেরণ করলেন পাতালে।
গজবক্ত্র বা গজানন অবতার
মুদগল পুরাণ অনুসারে বিঘ্নহর্তা গণেশের চতুর্থ অবতার হচ্ছেন গজবকত্র বা গজানন। লোভাসুর নামক এক অসুরকে বধ করার জন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রীগণেশের এই গজানন অবতার। একদা যক্ষরাজ কুবের কৈলাস পর্বতে হর-পার্বতী দর্শনে গিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তার মনে দুর্মতি জেগে ওঠায় মাতা পার্বতীর প্রতি কুদৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিলেন তিনি। কুবেরের এই দুর্মতি লক্ষ্য করে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন মাতা পার্বতী এবং দেবাদিদেব মহাদেব। তবে স্বয়ং আদ্যাশক্তি ও মহাকালের রোষানলের কথা চিন্তা করে সেযাত্রা ক্ষমা চেয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন কুবের। তবে মাতা পার্বতীকে দেখে তার মনে যে দুর্মতি জেগে উঠেছিল তার থেকে জন্ম হয়েছিল লোভাসুর নামক এক অসুরের। পূর্বে বর্ণীত অসুরদের মত এই লোভাসুরও অসুরগুরু শুক্রাচার্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং তার নির্দেশিত পন্থায় “ওম নমঃ শিবায়” মন্ত্র জপ করে প্রসন্ন করেছিলেন মহাদেবকে। এবং লোভাসুরের এই তপস্যার ফল হিসেবে ভগবান শিব তাকে দান করেছিলেন ত্রিলোক বিজয় করার ক্ষমতা।
এরপর আবারও সেই পুরোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি। শুক্রাচার্যের প্ররোচনায় স্বর্গ-মর্ত্য-পাতালের অধিপতি হয়ে লোভাসুর শুরু করলেন তার আসুরিক তাণ্ডব। লোভে মত্ত হয়ে তিনি দেবাদিদেব মহাদেবকেও কৈলাস পর্বত থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিলেন। তো এবার ঋষি রাইভ্যর পরামর্শে আবারও দেব গজাননের সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন দেবতাগণ। দেবতাদের আকুল আকুতিতে সাড়া দিয়ে গজানন আবির্ভূত হয়েছিলেন রণাঙ্গণে লোভাসুরের সম্মুখে। এ যুদ্ধে মুশিকবাহন গজাননের কাছে পরাজিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন লোভাসুর। গজানন তাকে পরিশুদ্ধ হওয়ার শর্তে ক্ষমা করেন এবং পাতালে প্রেরণ করেন।
লম্বোদর অবতার
ক্রোধাসুর নামক এক অসুরকে বধ করা জন্য ব্রহ্মের শক্তির প্রতীক হিসেবে অবতার ধারণ করেছিলেন লম্বোদর। একদা সমুদ্রমন্থনের ফলে উত্থিত অমৃত থেকে অসুরদেরকে বঞ্চিত করার জন্য ভগবান শ্রীবিষ্ণু ধারণ করেছিলেন তার মোহনীয় মোহিনী অবতার। তবে এই মোহিনী অবতারকে দেখে শুধুমাত্র অসুররাই বিভ্রান্ত হননি, স্বয়ং মহাদেবও আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলেন মোহিনী মায়ায়। কিন্তু মোহিনীর কাজ শেষ হওয়ার পরে ভগবান বিষ্ণু যখন তার স্বরূপে ফিরে আসেন তখন ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন ভগবান শিব। এবং এক পর্যায়ে ভগবান শিবের সেই ক্রোধ থেকেই জন্ম নিয়েছিলেন ক্রোধাসুর। এরপর আবারও সেই আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ক্রোধাসুর গুরু হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শুক্রাচার্যকে। এবং শুক্রাচার্যের পরামর্শে সূর্যদেবকে সন্তুষ্ট করে তিনি অর্জন করেছিলেন বিপুল শক্তি।
একদিকে তিনি ভগবান শিবের ক্রোধ থেকে উৎপন্ন অন্যদিকে তেজদীপ্ত সূর্যদেবের বরপ্রাপ্ত। ফলে তিনিও তার বিপুল শক্তির প্রয়োগ করে ত্রিলোক বিজয় করলেন এবং নজিরবিহীন অত্যাচারে প্রকম্পিত করে তুললেন স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল। ক্রোধাসুরের এই তাণ্ডব থেকে বাচতে দেবতাগণ আবারও আহবান করেছিলেন ভগবান শ্রীগণেশকে। আর তাই এবার লম্বোদর অবতারে ক্রোধাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে লম্বোদর ও ক্রোধাসুর দুজনেই ভগবান শিবের পুত্র হওয়ায় দুজনেই ছিলেন বিপুল শক্তি ও পরাক্রমের অধিকারী। ফলে ভয়ংকর এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এই দুই দেবাসুরের মধ্যে। তবে এক পর্যায়ে লম্বোদরের হাতে পরাজিত হন ক্রোধাসুর। তার অত্যাচার থেকে মুক্ত হয় ত্রিলোক, সৃষ্টি ফিরে পায় তার স্বাভাবিক ছন্দ।
বিকট অবতার
ভগবান শ্রীগণেশের বিকট অবতারের আবির্ভাব ঘটেছিল কামাসুর নামক অসুরের অত্যাচার থেকে ত্রিলোককে মুক্ত করার জন্য। আপনারা জানেন অসুর জলন্ধরকে বধ করার জন্য তার স্ত্রী বৃন্দার সাথে ছলনা করেছিলেন ভগবান শ্রীবিষ্ণু। আর বৃন্দার প্রতি শ্রীবিষ্ণুর যে কাম জাগ্রত হয়েছিল সেই কাম থেকেই জন্ম নিয়েছিলেন কামাসুর নামের এক অসুর। কামাসুর তার নিজের মধ্যে আসুরিক প্রবৃত্তি অনুভব করে বুঝতে পারলেন অসুরগুরু শুক্রাচার্যই তার জন্য উপযুক্ত গুরুর দায়ীত্ব পালন করতে পারবেন। সুতারাং তিনিও শুক্রাচার্যের শিষ্যত্ব লাভ করলেন এবং তার পরামর্শমত ভগবান শিবের পঞ্চাক্ষর মন্ত্র জপ করতে শুরু করলেন। তার এই দীর্ঘ যুগের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়েছিলেন ভগবান শিব। এবং সেই সন্তুষ্টি থেকে তিনি কামাসুরকে বিপুল শক্তি, সকল প্রকার অস্ত্রশস্ত্র থেকে সুরক্ষা প্রাপ্তি, অসুস্থতা থেকে মুক্তি এবং বৃদ্ধাবস্থা থেকে মুক্তিলাভের বরদান দিয়েছিলেন।
তো বর পাওয়ার পর অন্যান্য অসুরের মত ত্রিলোক বিজয় করেছিলেন কামাসুরও। তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ত্রিলোকের রাজা হিসবে, এবং তার স্ত্রী তৃষ্ণাকে করেছিলেন রানী। আর তার এই উত্থানের পিছনে ব্যাপক ভুমিকা পালন করেছিলেন তারই দুই পুত্র শোষন এবং দুষ্পূর। এহেন পরিস্থতিতে মহর্ষি মুদ্গল দেবতাদেরকে ওম মন্ত্রে শ্রীগণেশের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছিলেন। এবং দেবতাদের দীর্ঘদিনের তপস্যায় গণপতি গণেশ ময়ুরবাহন বিকট অবতারে আবির্ভূত হয়েছিলেন কামাসুরকে বধ করার জন্য।
যুদ্ধের ময়দানে কামাসুরের বিরাট সেনাবাহিনী ও তার বলিষ্ট দুই পুত্র যখন বিকট অবতারের কাছে পরাজিত হন, তখন কামাসুর কঠিন প্রচেষ্টা করেন বিকটদেবকে পরাজিত করার জন্য। তিনি নিজেই ছিলেন স্বয়ং নারায়ণের অংশ এবং ভগবান শিবের কাছ থেকে বহুবিধ বরপ্রাপ্ত। তবে তার এই বিপুল শক্তি থাকার সত্ত্বেও বিকট অবতারের কাছে পরাজিত হন তিনি। এবং সর্বশেষে নিজের ভুল বুঝতে পেরে শ্রীগণেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পূর্ববর্তী অসুরদের মত কামাসুরকেও ক্ষমা করে দেন গণেশ এবং সেইসাথে তাকে আবারও ফেরত পাঠান পাতাল লোকে।
বিঘ্নরাজ অবতার
একদা মাতা পার্বতীর অট্টহাসি থেকে এক তরুন জন্ম নিয়েছিলেন। মাতা পার্বতী তার নামকরণ করেছিলেন মম অর্থাৎ অহংকার সূচক আমি বা আমিত্ব। সেইসাথে তিনি মমকে উপদেশ দিয়েছিলেন নিরলস সদাক্ষর মন্ত্র জপ করার জন্য। কিন্তু মম যখন তপস্যার উদ্দেশ্যে বনে গমন করছিলেন ঠিক সেই সময় তার সাথে সাক্ষাৎ ঘটে সম্বরাসুর নামক এক অসুরের। এই অসুর মমকে বিভ্রান্ত করে অসুর পন্থায় চালিত করেন। ফলে মমাসুর হয়ে ওঠেন এক প্রচণ্ড দেব-বিদ্বেষী অসুর। কোন কোন মতে অসুরমত অবলম্বনের পর তার নাম হয়েছিল মমতাসুর। সম্বরাসুরের কন্যা মোহিনীকে বিবাহ করে তিনি ধর্ম ও অধর্ম নামক দুই পুত্রের পিতা হন এবং অসুর রাজ্যের রাজা নিযুক্ত হন। কিছুকাল পরে তিনি প্রচণ্ড এক অসুর বাহিনী গঠন করে তাঁদের মাধ্যমে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জয় করেন। স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরে দেবতাগণ আবারও শরনাপন্ন হন বিঘহর্তা গণেশের।
শ্রীগণেশ ইতিমধ্যেই মমাসুরের সৃষ্ট নৈরাজ্য ও তাণ্ডব সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাই তিনি প্রথমে দেবর্ষি নারদকে মমাসুরের কাছে পাঠিয়েছিলেন আত্মসমর্পণ করে পাতালে ফিরে যাওয়ার জন্য। তবে শ্রীগণেশের এই সতর্কবার্তা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন মমাসুর। অবশেষে মমাসুরকে বধ করার জন্য বিঘ্নরাজ অবতার ধারণ করে যুদ্ধভূমিতে প্রবেশ করেছিলেন শ্রী গণেশ। তিনি ছিলেন চতুর্ভূজ, তার বাহন ছিল শেষনাগ এবং হাতে ছিল কোমল পুষ্প। যুদ্ধের শুরুতেই তিনি কোমল পুষ্প ছুড়ে মেরে সংজ্ঞাহীন করে দেন মমাসুরের বিশাল সেনাবাহিনীকে। এ দৃশ্য দেখে মমাসুর শ্রীগণেশের চরণে আত্মসমর্পণ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বরাবরের মত এবারও শ্রীগণেশ তাকে ক্ষমা করে পাতালে প্রেরণ করেন।
ধূম্রবর্ণ অবতার
একদা সূর্যদেবের অহংকার থেকে জন্ম হয়েছিল অভিমানাসুর নামের এক অসুরের। জন্মের পর তিনিও শরনাপন্ন হয়েছিলেন দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের। অভিমানাসুর স্বয়ং সূর্যদেবের অংশ হওয়ার কারনে তাকে গুরুত্বের সাথে প্রশিক্ষিত করে তোলেন শুক্রাচার্য। তবে এর আগে যেহেতু শুক্রাচার্যের অনেক শিষ্যকে শ্রীগণেশ পরাজিত করেছেন, তাই এবার তিনি অভিমানাসুরকে গণেশের তপস্যা করার পরামর্শ দিলেন।
শুক্রাচার্যের পরামর্শমত দীর্ঘকাল ধরে শ্রীগণেশের তপস্যা করলেন অভিমানাসুর। এবং শ্রীগণেশ যখন অভিমানাসুরের তপস্যায় সন্তুষ্ট হলেন, তখন অভিমানাসুর শ্রীগণেশের কাছ থেকে অমরত্ব এবং ত্রিলোক বিজয়ের বর প্রার্থনা করে নেন।
তবে বর প্রাপ্তির পরে নিজেকেই স্বয়ং পরমেশ্বর ভাবতে শুরু করেন অভিমানাসুর। স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জয় করে প্রচণ্ড তাণ্ডবের সাথে রাজত্ব করতে লাগলেন তিনি। তার অত্যাচার ও তাণ্ডবে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠল সমগ্র সৃষ্টিতে। এমনকি অভিমানাসুরর নির্দেশে সমস্ত মন্দিরের বিগ্রহগুলোকে বিনষ্ট করে প্রতিষ্ঠিত হল অভিমানাসুরের মূর্তি।
এভাবে একে একে অভিমানাসুর যখন সমস্ত সীমা অতিক্রম করলেন, তখন দেবতাদের আহবানে আবারও শ্রীগণেশ অবির্ভূত হলেন ধূম্রবর্ণ অবতারে। মুশিকবাহন এই অবতারে তিনি একটি পাশ নিক্ষেপ করে মুহুর্তেই ধ্বংস করে দিলেন অভিমানাসুরের সেনাবাহিনীকে। এমনকি অভিমানাসুরের দুই পুত্র গর্ব ও শ্রেষ্টও পরাজিত হলেন গণপতি গণেশের হাতে। এক পর্যায়ে নিজের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী জেনে শ্রীগণেশের চরণে মাথা ঠেকিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন অভিমানাসুর। আর শ্রীগণেশের অষ্টম অবতার ধূম্রবর্ণ এবারও তাকে ক্ষমা করে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন পাতালে।
আপনারা খেয়াল করে থাকবেন, মুদগল পুরাণে বর্ণিত অসুরগণের নাম তথা মৎসাসুর, মদাসুর, মোহাসুর, লোভাসুর, ক্রোধাসুর, কামাসুর, মমাসুর ও অভিমানাসুর আমাদের সকলেরই পূর্বপরিচিত। এবং শ্রীগণেশ এদের কাউকে বধ করেননি। একারণে এই অসুরগণ আজও রিপু রূপে পথভ্রষ্ট করে থাকে জগতের মনুষ্যগণকে।