You are currently viewing পঞ্চকেদার সৃষ্টি হওয়ার পেছনের পৌরাণিক কাহিনী || Mythology Behind the Creation of Panch Kedar ||

পঞ্চকেদার সৃষ্টি হওয়ার পেছনের পৌরাণিক কাহিনী || Mythology Behind the Creation of Panch Kedar ||

পঞ্চকেদার কি? পঞ্চকেদারের মন্দিরগুলি সৃষ্টির পৌরাণিক কাহিনী। দেবভূমি হিমালয়ের প্রতিটি পরতে লুকিয়ে আছে-জড়িয়ে আছে প্রকৃতি, পুরাণ ও ইতিহাসের জানা অজানা নানা কাহিনী। আর দুর্গম গিরি, কান্তার মরু, বা দুস্তর পারাবার বরাবরই দেবাদিদেব মহাদেবের প্রথম পছন্দ।  তাই এই দুর্গম পাহাড়ি প্রকৃতিতে সুপ্রাচীন কাল থেকে বিরাজিত ৫টি পৌরাণিক ও অলৌকিক শিবমন্দির। কেদারনাথ, মদমহেশ্বর, তুঙ্গনাথ, রুদ্রনাথ ও কল্পেশ্বর। এগুলোই হচ্ছে সেই মহাভারতের যুগে নির্মিত পাঁচটি মহাপবিত্র শিবমন্দির যা পঞ্চকেদার নামে আজও জগদ্বিখ্যাত। কিন্তু আপনি জানেন কি, এই পঞ্চকেদার কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল? আসলে এই পরম পবিত্র ও জাগ্রত মন্দিরগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহাভারতের পঞ্চপাণ্ডবগণ। এবং এর পিছনে রয়েছে একটি চমৎকার পৌরাণিক কাহিনী। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক পঞ্চকেদার সৃষ্টির সেই রহস্যময় কাহিনীটি। তবে শুরু করার আগে আপনাদের কাছে অনুরোধ, তথ্যপূর্ণ মনে হলে কমেন্ট বক্সে একবার হর হর মহাদেব লিখে যাবেন।

তখন সবেমাত্র শেষ হয়েছে মহাভারতের মহাযুদ্ধ। ১৮ দিন ব্যাপী চলমান এই ধর্মযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ১৮ অক্ষৌহিণী সেনা যার মধ্যে বেঁচে ছিলেন পঞ্চপাণ্ডবসহ ১৮ জন বা মতান্তরে ১২ জন ব্যাক্তি। নিজেদের চোখের সামনে এত বিপুল হত্যাযজ্ঞ দেখে এবং কুরুক্ষেত্রকে রক্তগঙ্গায় পরিনত করার জন্য তীব্র অনুশোচনায় ভুগতে লাগলেন পঞ্চপাণ্ডবগণ। কারন স্বজন হত্যা, গুরুহত্যা, গুরুজন হত্যা, এবং ব্রাহ্মণ হত্যার মত বড় বড় পাপকার্য সংঘঠিত হয়েছিল তাঁদের হাত ধরেই। তাই যুদ্ধ জয়ের আনন্দের চেয়ে হাজারো স্বামীহারা বিধবা ও পুত্রহারা মাতার করুন রোদনে বক্ষ ভারী হতে থাকল তাঁদের। যেন বেঁচে থাকতেই নরকের প্রজ্জ্বলিত অগ্নিতে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন তাঁরা। তাই হৃদয়ের এই দংশন থেকে বাঁচতে তাঁরা শরণাপন্ন হলেন মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের।

বেদব্যাস তাঁদেরকে পরামর্শ দিলেন তাঁদের মনের এই অশান্তি দূর করতে পারেন স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব। তাঁর দর্শনেই দূর হবে পাণ্ডবদের এই নরক দহন সম তীব্র যন্ত্রনা। মহর্ষি বেদব্যাসের এই পরামর্শে পাণ্ডবগণ বেরিয়ে পড়লেন দেবাদিদেবের খোঁজে। উদ্দেশ্য, তাঁর দর্শনে পাপাস্খলন ও মনের তীব্র পীড়া থেকে মুক্তি পাওয়া। তো প্রথমেই তাঁরা গেলেন শিবধাম নামে পরিচিত কাশিতে। সেখানে হাজারো শিব মন্দিরে অধিষ্ঠান করেন মহাদেব। কিন্তু হাজার মাথা কুটেও দর্শন পাওয়া গেল না ভোলানাথের। কারন দেবাদিদেব তখন তাঁদেরকে পরীক্ষা করার জন্য তাঁদের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদিকে পঞ্চপাণ্ডবও নাছোড়বান্দা, শিবের দর্শন তাঁরা করেই ছাড়বেন।

আরও পড়ুনঃ  দ্রৌপদী ও পঞ্চপাণ্ডবের ফুলশয্যা ও দাম্পত্য জীবন কেমন ছিল? Family Life of Draupadi and Pandavas

তাই তারাও আর্যাবর্তের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে লাগলেন মহাদেবের দর্শন প্রাপ্তির আশায়। ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা একটা সময় পৌছে গেলেন গাড়োয়াল হিমালয়ে। এ অঞ্চলে গুপ্তকাশীর নিকটে তাঁরা খেয়াল করলেন একটি প্রকাণ্ড ষাড় চরে বেড়াচ্ছে। অন্য পাণ্ডবরা বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও মধ্যম পাণ্ডব ভীমের মনে খটকা লাগল। এত দুর্গম অঞ্চলে, লোকালয় থেকে বহু দূরে এই ষাড় এলো কিভাবে? তাছাড়া এর শারীরিক গঠনই এতটা বলিষ্ট ও অদ্ভুত যে একে কোনভাবেই বন্য বা পালিত ষাড় হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না। অনেক ভাবনা চিন্তার পর ভীম বুঝতে পারলেন, যে মহাদেবকে তাঁরা খুঁজে বেড়াচ্ছেন, সেই মহাদেবই এই ষাড়ের রূপ ধারন করে তাঁদের পাশে থেকেও তাঁদের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বৃষরূপী শিবকে চিনতে পারার সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে ষাড়টির লেজসহ পিছন দিকে জড়িয়ে ধরলেন ভীম। এদিকে ভীমকে দৌড়ে আসতে দেখে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করল ষাড়টিও। এরপর ভীম ও ষাড়রূপী শিবের মধ্যে ধস্তাধস্তির কারনে ষাড়টির শরীর ৫টি খণ্ডে খণ্ডিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে গাড়োয়াল হিমালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে।

সেই স্থানগুলোর মধ্যে কেদারনাথে পতিত হয়েছিল ষাঁড়ের কুঁজ। তুঙ্গনাথে বাহুদ্বয়, রুদ্রনাথে মস্তক, মদমহেশ্বরে নাভি ও পেট এবং কল্পেশ্বরে পতিত হয়েছিল চুল ও জটা। তবে মতান্ত্বরে ভীম যখন বৃষরূপী শিবকে জড়িয়ে ধরেছিলেন তখন ষাড়টি ভীমের হাত থেকে নিস্তার পেতে ভূ-গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর পাণ্ডবগণকে দর্শন দিতে এই পাঁচটি শৈব তীর্থে ৫টি খণ্ডে আবির্ভূত হন। পরবর্তীতে এই পাঁচটি স্থানে পাঁচটি মন্দির নির্মান করেছিলেন পঞ্চপাণ্ডবগণ। তাই সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই এই পঞ্চকেদারে ভক্ত ও পূণ্যার্থীদের আনাগোনা। তীব্র ঠাণ্ডা, ভয়ংকর গিরিখাদ, দুর্গম রাস্তা, বৈরি প্রকৃতি প্রভৃতির চোখরাঙানী উপেক্ষা করে মহাদেবের একটুখানি দর্শন পেতে মানুষ ছুটে যান এই শৈবতীর্থগুলোতে। যদিও অনেকেই শুধুমাত্র কেদারনাথ দর্শন করে তৃপ্ত হন, তবে পৌরাণিক বিধান বলছে এই পাঁচটি ধাম একত্রে দর্শন না করলে প্রকৃত ফল মেলে না।

আরও পড়ুনঃ  পরশুরামঃ মহাকাব্যের এক অমর চরিত্র || Life History of Parshurama

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply