You are currently viewing ঢেঁকি কেন নারদের বাহন ? নারদ কেন কলহসংগঠক স্বভাবের?

ঢেঁকি কেন নারদের বাহন ? নারদ কেন কলহসংগঠক স্বভাবের?

নারদ মুনি মগ্ন হয়ে বিনয় হরির গান করে। ব্রহ্মাপুত্র নারদ মুনি ভগবান বিষ্ণুর একনিষ্ঠ ভক্ত। তার সৃষ্টির পর থেকেই তিনি নারায়ন নারায়ন ধ্বনি উচ্চারন করে চলেছেন অবিরাম। তিনি দেবতা হয়েও ঋষি, তাই তিনি দেবর্ষি নারদ। এছাড়াও নারদ মুনি ভগবান বিষ্ণুর প্রসাদ ছাড়া অন্য কোন কিছুই গ্রহন করেন না।  কিন্তু এখানেই তার গুনের শেষ নয়। তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য তার ‘কলহ সংগঠক’ চরিত্রটি। আশা করি নারদের ভুমিকা সম্পর্কে আপনারা ইতিমধ্যেই অবগত। , মানুষ কিংবা অসুর সমাজে যখনি কোন প্যাঁচ কষার প্রয়োজন হত, নারদ সেখানেই তার বাহন ঢেঁকিযোগে হাজির হতেন। তাঁর কথা ভেতরে ও বাহিরে এমনি দ্বৈত-অর্থ বহন করত যে, তিনি যখনই কারো পক্ষে কথা বলেছেন, তখন সে পক্ষও নিশ্চিত নয় আখেরে নারদ কোন পক্ষের। যাই হোক, নারদ মুনি যে শুধু দেবতাদের পক্ষ নিয়ে মানুষ বা অসুর সমাজেই প্যাঁচ খেলেছেন এমনটা নয়। যখন নিচে অর্থাৎ মর্ত্যধামে কোন কাজ থাকত না, সময়ে সময়ে তিনি ঢেঁকিযোগে স্বর্গধামে গিয়ে দেবসমাজেও স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর এই ‘কলহসংগঠক’ স্বভাব থেকেই এসেছে – ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে এবং ‘নারদের ঢেঁকি’ নামক দু দুটি প্রবাদ। যাইহোক, আজ আমরা আলোচনা করতে চাই নারদের বাহন অদ্ভুত অর্থাৎ ঢেঁকি কেন? এবং নারদের এই কলহসংগঠক চরিত্রের কারন কি? তো চলুন দর্শক জেনে নেওয়া যাক আসল কারন।

দেবর্ষি নারদের বাহন কেনো ঢেঁকি ?

দেবর্ষি নারদ, ব্রহ্মার মানসপুত্র হিসেবে কল্পিত। ব্রহ্মার নারী শক্তি যেহেতু সরস্বতী, স্থূল অর্থে যাকে সাধারণ মানুষ ব্রহ্মার স্ত্রী মনে করেন, সেই সরস্বতীকে কল্পনা করা হয় নারদের মা হিসেবে।

যাই হোক, নারদ হলো পৌরাণিক জগতের সাংবাদিক, তার কাজ হলো মর্ত্য বা স্বর্গে যেই ঘটনাই ঘটুক, তা উপযুক্ত মানুষ বা দেব-দেবীর কাছে পৌঁছে দেওয়া; এই কাজ করতে গিয়ে মাঝে মাঝে পরামর্শক হিসেবেও কাজ করতেন তিনি, এদিক দিয়ে অবশ্য তার কর্মকান্ডকে অকালতিও বলা চলে। এজন্যই অনেকে নারদকে কূটবুদ্ধিসম্পন্ন দেবতা মনে করেন এবং একারণেই অনেকে নারদকে ভালো চোখে দেখেন না।

আরও পড়ুনঃ  দ্রৌপদী ও পঞ্চপাণ্ডব কিভাবে দেহত্যাগ করেন? How did Draupadi and Pancha Pandavas Die?

সাংবাদিকদের যেমন সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে যেতে হয়, তেমনি পৃথিবীতে কোনো ঘটনা ঘটলেই নারদ সেখানে ছুটে যেতেন এবং সেখানে গিয়ে তিনি শুধু সংবাদ সংগ্রহই করতেন না, প্রয়োজন মতো উপদেশ বা পরামর্শও দিতেন, যাতে মানুষ বা দেব-দেবীর মধ্যে নানারকম ঝামেলা শুরু হয়ে নতুন নতুন কাহিনীর উৎপত্তি হতো। মুলত মর্ত্যে নারদ এসব কাজ করতেন, কিন্তু যখন মর্ত্যে তার কাজ থাকতো না, তখন তিনি ছুটে যেতেন স্বর্গে এবং সেখানেও এক দেব-দেবীর ঘটনা অন্য দেব-দেবীর কাছে গিয়ে প্রচার করতেন, ফলে স্বর্গেও দেব-দেবীদের মধ্যে প্যাঁচ লেগে নানা ঘটনা ঘটতো, এভাবে নারদ যেখানে যেতেন সেখানেই একই কাজ করতেন।

পৃথিবীতে মানুষ তার কাজের সুবিধার জন্য নানারকম যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছে, এই যন্ত্রপাতিগুলো বিভিন্ন কাজে লাগে, কিন্তু ঢেঁকি নামক যন্ত্রটির শুধু ধান ভানা ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই। একইভাবে দেবতাদের মধ্যে নারদও একই ধরণের কাজ করে থাকেন, আর সেটা হলো সংবাদ আদান প্রদান ও ক্ষেত্রবিশেষ ওকালতি; এই সাদৃশ্যের কারণেই নারদের বাহন হিসেবে ঢেঁকিকে কল্পনা করা হয়েছে এবং নারদ যেহেতু মর্ত্য থেকে স্বর্গে যাতায়াত করতেন সেহেতু নারদের বাহন হিসেবে মানুষ ঢেঁকিকে ধরে নিয়েছে। আর এই কারনেই  , ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে এমন প্রবাদের সৃষ্টি হয়েছে।আসলে মানুষ, দেব-দেবীদের বাহন বলে অনেক কিছুকে ভাবলেও আসলে দেব-দেবীদের বাহন বলে কিছু হয় না; দেব-দেবীরা এমনিতেই অসীম ক্ষমতার অধিকারী, তারা ইচ্ছা করলেই যেকোনো জায়গায় মূহুর্তেই পৌঁছে যেতে পারেন। বস্তুত কোন দেব দেবীর বাহন সেই দেবতার বিশেষ গুনকে প্রকাশ করে। আর তার প্রমান স্বয়ং নারদ মুনির বাহন ঢেঁকি। ঢেঁকি দিয়ে মুলত নারদের কলহ সংগঠক চরিত্রকেই উপস্থাপন করা হয়েছে।

এবার আসুন নারদের স্বভাব এমন হওয়ার কারন কি তা জেনে নেওয়া যাক। ব্রহ্মা যখন তার মানসপুত্র দেবর্ষি নারদকে সৃষ্টি করলেন, তখন তিনি তাকে আজ্ঞা করলেন “ সৃষ্টি রক্ষা কর এবং ভার্যা গ্রহন কর অর্থাৎ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হও।“ কিন্তু নারদ মুনি তার পিতার আজ্ঞা অস্বীকার করলেন। তিনি প্রজাপতি ব্রহ্মাকে এই মর্মে অবগত করালেন যে তিনি ব্রহ্মচর্য পালন করতে চান। কারন তার মতে নারীসঙ্গে ধ্যানে বিঘ্ন ঘটে। নারদ মুনির এহেন স্পর্ধা দেখে ক্রোধে ফেটে পড়লেন ব্রহ্মা। অতপর পিতা ব্রহ্মাই পুত্র নারদকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে নারদ মুনি সমস্ত বিবাদের কারন হবেন। এবং সেই থেকেই নারদ মুনির ভুমিকা মনুষ্য ও দেবকুলে এক বিতর্কিত বিষয় হয়ে এসেছে। তবে এসব ঘটনা পৌরানিক, যা যুগ যুগ ধরে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে এসেছে। তাই এর বস্তুনিষ্ঠতা বা সত্যতা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ ।

আরও পড়ুনঃ  কালীপূজায় পাঠাবলি / পশুবলি কতটা যৌক্তিক?

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply