মানুষের জীবনের ঘাত প্রতিঘাত, আশা হতাশা, এবং ধর্ম অধর্মের চরিত্রায়নই হলো রামায়ন ও মহাভারত । মহাভারতের কাহিনী নিছকই এক গল্প নয়, রাম রাবনের যুদ্ধই রামায়ন নয়, দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণই মহাভারত নয় এবং কুরুক্ষেত্র ও লঙ্কার যুদ্ধক্ষেত্র কেবল একটা ফাঁকা মাঠে যুদ্ধ নয়। আসলে রামায়ন ও মহাভারতের যুদ্ধ মানুষের চিন্তার চারণভূমি। সেই চিন্তার চারণভূমিতে, সংঘাত ঘটেছে লোভের সঙ্গে ত্যাগের, সত্যের সঙ্গে মিথ্যের, ধর্মের সঙ্গে অধর্মের এবং জীবনের সঙ্গে মৃত্যুর। এই দুই মহাযুদ্ধের কুশীলবরা যে চরিত্র রূপায়ন করেছিলেন তারও কিছু অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে।
যেমন, রাম হলেন পুরুষোত্তম যিনি একজন পুরুষ কিভাবে আদর্শ জীবন যাপন করবেন তা আমাদের শিয়েছেন,
মাতা লক্ষী হলেন নারীর ঔদার্য্য, কষ্ট ও সহনশীলতার প্রতিফলন,
লক্ষন আমাদের ভক্তি ও বিশ্বাসের গুনাবলী,
রাজা দশরথ পুত্রস্নেহের প্রতীক,
কৈকেয়ী আমাদের মনের কোনের কুটিলতা ও স্বার্থপরতা,
কৌরবরা হলেন মানুষের যত ধ্বংসাত্মক গুণাবলী,
মানুষের যত গঠনাত্মক গুণাবলী তাদের প্রতিফলন ঘটেছে পাণ্ডবদের মাধ্যমে।
দুর্যোধন কে ? আমাদের লোভ আর দম্ভ,
দুঃশাসন কে ? আমাদের কামনা আর লালসা,
ধৃতরাষ্ট্র আমাদের অন্ধ স্নেহ, অন্ধ ভালোবাসা
শকুনি আমাদের কুটিলতা, আমাদের স্বার্থপরতা,
কর্ণ আমাদের অভিমান,ভীষ্ম আমাদের গর্ব আমাদের প্রতিজ্ঞা,
দ্রোণাচার্য্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যা সবসময় একলব্য আর অশ্বথামাকে নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ।
শিখন্ডি আমাদের দুর্বলতা, কর্ণের রথের চাকা বসে যাওয়া আমাদের দুর্ভাগ্য।
যুধিষ্ঠির আমাদের সত্য, আমাদের ধর্ম আমাদের ত্যাগ।
ভীম আমাদের পৌরুষত্ব আর বীরত্ব….
অর্জুন কে আমাদের নিষ্ঠা আর শ্রম….
অভিমন্যু আমাদের যৌবন শক্তি এবং বিদূর আমাদের বিবেক।
দ্রৌপদী আমাদের আত্মার সন্মান,
এবং শ্রীকৃষ্ণ আমাদের আত্মা, যা পরমাত্মার অংশ, যা আমাদেরকে আলোর পথে চালিত করে।
এসকল চরিত্রের নীতি নৈতিকতা আমাদের অদর্শ হিসেবে চলে আসছে সুদুরতম অতীত থেকে। কিন্তু মতভেদ দেখা যায় রামায়ন ও মহাভারত নামক দুই মহাগ্রহন্থের বাস্তব অস্তিত্ব নিয়ে। শুধু সাম্প্রতিক কালেই নয় বিস্মৃত কাল থেকেই চর্চা বহমান রয়েছে রামায়ন মহাভারতের ঐতিহাসিকতা নিয়ে। সত্যিই কি ঘটেছিল কুকক্ষেত্র যুদ্ধ? কৃষ্ণ নামে সত্যিই কি কেউ রাজত্ব করতেন দ্বারকায়? কৌরব আর পাণ্ডবদের কথা কি পুরোটাই বানানো? সত্যিই কি রাম রাবনের মহাযুদ্ধ ঘটেছিল? এসবের কোন প্রমান আজ আর আছে কি? আপনাদের এসকল প্রশ্নের উত্তর থাকছে আজকের ভিডিওতে। আশা করি এই আয়োজনে আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকবেন।
মহাকাব্যের ঐতিহাসিকতা নিয়ে বিতর্ক কোনও নতুন বিষয় নয়। ইউরোপে মহাকবি হোমারের লেখা ‘ইলিয়াড’ ও ‘ওডেসি’ নিয়ে য়েমন ইতিহাসবিদ-প্রত্নতাত্ত্বিকরা যুগে যুগে মাথা ঘামিয়েছেন, তেমনই আমাদের দেশের ‘রামায়ণ’ ও ‘মহাভারত’ নিয়েও কম গবেষণা হয়নি। এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিশেষজ্ঞরা কখনও প্রবেশ করেছেন ইতিহাসের আঙিনায়, কখনও প্রমাণ খুঁজেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানে, আবার কখনও বা অগ্রসর হয়েছেন ভাষাতত্ত্বের সড়ক বেয়ে । আসুন এবার দেখা যাক কি ফল মিলল সেইসব গবেষনা থেকে।
মহাভারতকার বেদব্যাস স্বয়ং তাঁর রচনাকে ‘ইতিহাস’ বলেছেন। এখানে ‘ইতিহাস’-এর অর্থ— ‘এইসব ঘটেছিল’। যদি মাহাভারত কল্পনা হত, বেদব্যাস একে ‘মহাকাব্য’ বা ‘কথা’ বলে উল্লেখ করতেন।
মহাভারতের আদিপর্বের ৬২তম অধ্যায়ে ভারত-রাজবংশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উল্লিখিত হয়েছে। মনু থেকে ৫০ পুরুষ সেখানে উল্লিখিত। যদি মহাভারত কল্প-কথাই হতো, তা হলে এতো বিস্তারিত উল্লেখের কী প্রয়োজন ছিল?
প্রত্নত্ত্বের অন্বেষনও বেরিয়ে এসেছে রামায়ন ও মহাভারতের ঘটনার অস্তিত্ব। এর মধ্যে অন্যতম ও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল সরস্বতী নদী। মহাভারতে বৈদিক যুগের পশ্চিমবাহিনী সরস্বতী নদীর বর্ণনা উল্লিখিত হয়েছে বহু জায়গায়, যেমন – সরস্বতী নদীর তীর বরাবর প্লক্ষ বৃক্ষ থেকে প্রভাস তীর্থ পর্যন্ত বলরামের তীর্থযাত্রার কথাও মহাভারতে রয়েছে।
কিছু ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, বর্তমানের শুষ্ক ঘগ্গর-হাকরা নদীই বাস্তবে বৈদিক যুগের সরস্বতী নদী, যেটি ৫০০০-৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পশ্চিম ভারতে বহমান ছিল এবং আনুমানিক ১৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ভূ-আলোড়ন জনিত কারণে শুকিয়ে যায়। বৈদিক যুগে লিখিত ঋগ্বেদে সরস্বতী নদীকে ‘নদীতমা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। অর্থাৎ ঋগ্বৈদিক সভ্যতায় সরস্বতী নদীই ছিল সর্বপ্রধান নদী। ভূ-আলোড়নে সরস্বতী নদীর মূল প্রবাহ যমুনার সাথে মিশে যায়, যে কারনে ‘ত্রিবেণী সংগম’কে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থল বলা হয়। পরবর্তী বৈদিক সাহিত্য ও পুরাণে এও বলা হয়েছে যে, অভিমন্যুপুত্র পরীক্ষিতের ২৮ প্রজন্মের রাজত্বের সময় গঙ্গার বিধ্বংসী বন্যায় হস্তিনাপুর নগরী ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং পরবর্তী রাজারা কৌশাম্বী নগরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। এছাড়াও মহাভারতে বর্ণিত হয়েছে, সরস্বতী নদী বিনাশ্ন নামক তীর্থে শুকিয়ে যায়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ম্লেচ্ছদের সাথে বিদ্বেষের কারণে সরস্বতী নদী ম্লেচ্ছ প্রদেশে যাত্রা বন্ধ করে দেন।
.
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ গুজরাতের পশ্চিম উপকূলে সমুদ্রের গভীরে প্রায় ৩৫০০-৪০০০ বছর পুরাতন একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরী আবিষ্কার করেছে। এই নগরীকে মহাভারতে বর্ণিত যাদবদের দ্বারকা নগরী বলে অনুমান করা হয়েছে। প্রোফেসর এস. আর. রাও একে দ্বারকা বলেই চিহ্নিত করেছেন। মহাভারতের মৌষল পর্বে দ্বারকা নগরীর সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার বর্ণনা রয়েছে। তাহলে জলে নিমজ্জিত এই নতুন আবিষ্কারকে আপনারা কি বলবেন? দ্বারকা ছাড়াও এরকম আরো ৩৫টিরও বেশি ভরাতীয় নগরীর কথা মহাভারতে রয়েছে, যাদের অস্তিত্ব ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে দিনের পর দিন মিলছে আরো প্রমান।
মহাভারতের উদ্যোগ পর্বে লিখিত রয়েছে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর অব্যবহিত পূর্বে কৃষ্ণ হস্তিনাপুরে গমন করেন কার্তিক মাসের সেই তিথিতে, যে দিন চন্দ্র রোহিনী নক্ষত্রে অবস্থান করছিলেন। পথে কৃষ্ণ বৃকস্থল নামে একটি জায়গায় বিশ্রাম নিতে থামেন। চন্দ্র তখন ভরণী নক্ষত্রে বিরাজ করছেন। যেদিন দুর্যোধনের পতন ঘটে, সেদিন চন্দ্র পূষা নক্ষত্রে অবস্তান করছেন। আধুনিক জ্যোতির্বিদরা মহাভারতের আনুমানিক কালের সঙ্গে এই সব উল্লিখিত তিথির সাদৃশ্য পেয়েছেন।
পৌরাণিক সেই কালের আরেক ঐতিহাসিক এক নিদর্শন হল রাম সেতু। শ্রীরামচন্দ্র দেবী সিতাকে উদ্ধার করার সময় বানরদের সহযোগীতায় যে ভাসমান সেতু নির্মান করেন তা আজও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। নাসার স্যাটালাইটে ধরা পড়া ভারতের রামেশ্বরম থেকে শ্রীলংকার মান্নার দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত অগভীর সমুদ্রগর্ভে চূনাপাথরের স্তরটি রাম সেতু হিসেবেই ব্যাখ্যা করে থাকেন বিজ্ঞানী ও প্রত্নতত্ববিদরা।
রামায়নের বালি দ্বীপের কথা আমাদের সবারই জানা। কোন কোন ইতিহাসবিদের দাবী অনুসারে বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপটি রামায়নের বালির নামেই নামকরনকৃত। এর স্বপক্ষে প্রমান হিসেবে বালি দ্বীপের অধিবাসীদের অফিসিয়াল ধর্ম ও আরধ্য দেব দেবীকে উপস্থাপন করা যেতে পারে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে এই দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ মুলধারার হিন্দু ধর্মাবলম্বী তাদের আরধ্য প্রধান দেবতা হলেন ত্রিদেব যা ব্রহ্মা বিষ্ণু ও মহেশ্বরের সম্মিলিত রূপ।
কিছু কিছু বিশেষ মতানুসারে, রামায়নে যে ময়দানবদের গোষ্ঠীর উল্লেখ পাওয়া যায় তা পরবর্তীতে মায়ান সভ্যতা নামে উত্তর আমেরিকাতে আবিষ্কৃত হয়। এই গোষ্ঠীর রাজা ছিলেন দিতিপুত্র ময়দানব যিনি হেমা নামক অপ্সরাকে বিবাহ করেন এবং মায়াবী-দুন্দুভি নামক দুই পুত্র ও মন্দোদরী নামক এক কন্যার জনক হয়েছিলেন। এই মন্দোদরীকে বিবাহ করেছিলেন রাবন।
এছারাও কুরুক্ষেত্রের ময়দান, দ্বাদশ জ্যতির্লিঙ্গের মাঝে সোমনাথ, মল্লিকার্জুন, নাগেশ্বর, ও অযোধ্যার রাম জন্মভূমির মত অসংখ্য স্থাপনা আজও সগৌরবে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে পৌরাণিক রামায়ন ও মহাভারতকে ঐতিহাসিক মর্যাদা দেওয়ার অপেক্ষায়।
পুরাণগুলিতে মৌর্য্য, গুপ্ত এবং ইন্দো-গ্রিক রাজবংশগুলির স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এই রাজবংশগুলির ঐতিহাসিকতা মেনে নেওয়া হয় এই কারণেই যে, পুরাণের পাশাপাশি সমকালীন গ্রিক ঐতিহাসিকরা এগুলোর অস্তিত্বকে সর্থন করেছেন। গ্রিক আগমনের আগেকার রাজবংশগুলি কি ‘অনৈতিহাসিক’? এই রাজবংশগুলিই মহাভারতে উল্লিখিত হয়েছে বার বার।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোন থেকে বলতে গেলে, মহাভারতে খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ থেকে ১০০০ অব্দের গুপ্ত কিংবা মৌর্য সাম্রাজ্য অথবা ২০০ থেকে ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের জৈন বা বৌদ্ধ ধর্মের কোন উল্লেখ নেই। তাছাড়া ১১০০ খ্রি.পূ. এর শতপথ ব্রাহ্মণ ও ১০০০ খ্রি.পূ এর ছান্দোগ্য উপনিষদে মহাভারতের কিছু প্রসঙ্গ পাওয়া যায়। অর্থাৎ মহাভারত ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের অনেক আগেই লেখা হয়েছিল। ৬০০-৪০০ খ্রি.পূ এ পাণিনি রচিত অষ্টাধ্যায়ীতে মহাভারতের কাহিনি ও কৃষ্ণার্জুনের কিছু প্রসঙ্গ রয়েছে। অতএব মহাভারত যে পাণিনির যুগের অনেক আগে থেকেই প্রচলিত ছিল, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
প্রথম শতাব্দীতে ইউনানের রাজদূত ডিও ক্রাইজ়োস্টমের বর্ণনায় জানা যায়, তৎকালীন দক্ষিণ এশীয় লোকেদের কাছে এক লক্ষ শ্লোক যুক্ত একটি মহাগ্রন্থ ছিল, অর্থাৎ সেই সময়ও মহাভারতে এক লক্ষ শ্লোকই ছিল। বর্তমান সময়ের অনুসন্ধানে ১ম শতাব্দীর সংস্কৃতের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন একটি পাণ্ডুলিপিতে মহাভারতের ১৮টি পর্বের একটি অনুক্রমণিকা পাওয়া গিয়েছে, অর্থাৎ সেই কালে ১৮ পর্ব যুক্ত মহাভারতের কাহিনিই প্রচলিত ছিল, যদিও ব্যাসদেব ১০০টি পর্ব যুক্ত আদি মহাভারত রচনা করেন, যা পরে ১৮টি পর্বে বিবর্তিত হয়।.
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায়,মহাভারতের মূল বৃত্তান্ত হল একই বংশীয় দুই পরিবার পাণ্ডব ও কৌরব তথা ধর্ম ও অধর্ম পক্ষের মধ্যে মহাসংঘর্ষ। পঞ্চপাণ্ডব ও শতকৌরবের মধ্যে ভূমির অধিকার সম্পর্কিত যে যুদ্ধ হয়, তা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই মহাযুদ্ধের সময়কাল সম্পর্কে বিভিন্ন ভারতীয় ও পশ্চিমী গবেষকদের মমাওতা কেমন তা এবার দেখে নেওয়া যাক।
বিশ্বখ্যাত ভারতীয় গণিতজ্ঞ ও মহাকাশবিদ বরাহমিহিরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাভারতের যুদ্ধ ২৪৪৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সংঘটিত হয়।
বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় গণিতজ্ঞ আর্যভট্টের অনুসারে এই যুদ্ধের তিথি হল ১৮ই ফেব্রুয়ারী, ৩১০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।
চালুক্য রাজবংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ২য় পুলকেশীর আইহোল প্রশস্তিতে উল্লিখিত হয়েছে, এই যুদ্ধের পর ৩৬৩৫ বর্ষ কেটে গেছে, সেই সাপেক্ষে এই যুদ্ধ ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সংঘটিত হয়।.
পুরাণের বিভিন্ন রাজবংশের সাথে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের তুলনা করলে সময়কালটি দাঁড়ায় ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ, যদিও কিছু বিজ্ঞানীদের মতে যুদ্ধ হয়েছিল ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, কারণ ইউনানের রাজদূত মেগাস্থিনিসের লেখা ‘ইন্ডিকা’য় উল্লিখিত রাজা ‘চন্দ্রগুপ্ত’ গুপ্ত বংশের সম্রাট চন্দ্রগুপ্তও হতে পারে।.
পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানী মাইকেল ভিট্জাল বলেছেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হতে পারে, কারণ তিনি এই যুদ্ধ ভারতের লৌহ যুগেতথা ১২০০-৮০০ খ্রিষ্টপুর্বাব্দে সংগঠিত হওয়া যুদ্ধ বলে মনে করেন।
অধিকাংশ ভারতীয় বিজ্ঞানী যেমন বি. এন. আচার, এন. এস. রাজারাম, কে. সদানন্দ প্রমুখরা গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান গণনার মাধ্যমে জানিয়েছেন, এই যুদ্ধ হয় ৩০৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে; আবার কিছু ইওরোপীয় বিজ্ঞানী বলেছেন, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ১৩ই নভেম্বর, ৩১৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এই সমস্ত তথ্য ও মহাভারতের জ্যোতিষীয় তিথি, ভাষা বিশ্লেষণ ও বিদেশী সূত্রের প্রমাণ নিরীখে রামায়ন বা মহাভারতের বাস্তব অস্তিত্ব ছিল কিনা তা বিচার করার ভার এখন সম্পুর্ণ আপনার।
.