স্ত্রী বা নারী সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা কর্তৃক সৃষ্ট সকল সৃষ্টির মধ্যে এক অতুলনীয় সৃষ্টি। তাঁর পরতে পরতে শুধু নিপাট রহস্যই লুকিয়ে। এ এক এমন সৃষ্টি যার রহস্যময়তা স্বয়ং তার সৃষ্টিকর্তাকেও বিষ্মিত করে দেয়। প্রশ্ন হল ঈশ্বর কেন এবং কিভাবে নারীকে সৃষ্টি করেছিলেন? শুধুমাত্র প্রজনন বা সন্তান জন্মদানের জন্যই কি সৃষ্টি করেছিলেন নারীকে? না নারীসৃষ্টির কারন এত সরল নয়। যে নারী মাতা ভগনি ও স্ত্রী রূপে এত অসাধ্য সাধন করতে পারেন তাকে বিশ্লেষণ করা কোনভাবেই সহজসাধ্য নয়। তবে আপনি যদি সত্যিই জানতে চান নারী সৃষ্টির কারন তাহলে আপনাকে জানতে হবে নারী সৃষ্টির প্রাক্বালে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এবং উপস্থিত এক দেবদূতের কথপকথনের প্রচলিত উপকথাটি। ভিডিওটি শেষ পর্যন্ত দেখলে জানতে পারবেন নারী কি সুবিশাল ব্যাপ্তি ও উদ্যেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেছে।
ব্রহ্মা যখন প্রারম্ভিক সৃষ্টিকার্যে নিমগ্ন ছিলেন সেসময়, তিনি খুব দ্রুতই রচনা করে যাচ্ছিলেন এ বিশ্ব সংসার ও তার সমস্ত উপাদানসমুহ। কিন্তু হঠাত তিনি এমন এক সৃষ্টিকার্য শুরু করলেন যা শেষ করতে তার প্রায় ছয় দিন সময় লেগে গেল। উপস্থিত দেবদূতরা এহেন কার্যকলাপে অত্যান্ত বিষ্মিত হয়ে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে প্রশ্ন করলেন, “হে ভগবান, যে আপনি নিমেষের মধ্যে সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড রচনা করলেন, সেই আপনি কি এমন গড়ছেন যাতে আপনার এত সময় লাগছে?”
প্রশ্নের উত্তরে স্মিত হেসে ব্রহ্মা জবাব দিলেন “ হে দেবদূত, আপনারা কি দেখেছেন আমার এই রচনাকে? এর নাম নারী। এটি আমার সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। আমি একে অসীম ধৈর্য, সাহস, ক্ষমতা ও রূপ দিয়ে সৃষ্টি করেছি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার হল এই নারীই আমার সৃষ্টির ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। যে কোন পরিস্থিতে নিজেকে শান্ত রেখে প্রলয়কাল পর্যন্ত এর কাঁধে অর্পিত সমস্ত দায়ীত্ব হাসিমুখে পালন করে যাবে। এই নারী তার সর্বান্তকরন দিয়ে এর পরিবারের প্রতিটি মানুষকে স্নেহের বাধনে বেধে রাখতে সক্ষম। অসুস্থতা বা অন্য যে কোন পরিস্থিতে এর কাজ করার ক্ষমতা থাকবে সমান গতিতে। এবার বলুন এমন একটি রচনায় কালক্ষেপন হওয়াটা কি বাঞ্ছনীয় নয়?”
বিষ্মিত দেবদূত এবার তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন নারী নামক ব্রহ্মার সেই নব সৃষ্টির প্রতি। এবার তার বিষ্ময় আরো বেড়ে গেল। দুটো চোখ, দুটো কান, দুটো হাত, দুটো পা আর উন্নত বক্ষযুগল নিয়েই গঠিত হয়েছে ব্রহ্মার এই রহস্যময়ী। কিন্তু এতে এমন কি আছে যার মধ্যে ভগবান এত গুনের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন? প্রশ্ন করলেন, “ হে ভগবান এর মাত্র দুইটি হাত দিয়ে এত বহুবিধ কার্য সম্পাদন করা কিভাবে সম্ভব?”
ব্রহ্মা বললেন, “এর এই দুই হাতে আমি অসীম শক্তি প্রদান করেছি। কোন দশভূজা দেবীর তুলনার এর এই দুই বাহু কোন অংশে কম নয়। সন্তান প্রতিপালন থেকে শুরু করে যাবতীয় গৃহকর্ম সেরেও এই নারী পুরুষের সাথে কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে সক্ষম।“
এবার কৌতুহলী দেবদুত সেই নব সৃষ্ট নারীমুর্তিকে স্পর্শ করলেন। এবার তার বিষ্ময়ের সীমানা অতিক্রম করল। “ কিন্তু প্রভু, এ তো অনেক কোমল। এত নমনীয় শরীর কিভাবে এত কিছুর ভার বইতে সক্ষম হবে ?”
ব্রহ্মা বললেন “ হে দেবদূত, আপনি শুধুমাত্র এই বাহিরেটাই পর্যবেক্ষন করছেন। কিন্তু প্রকৃত শক্তি কোন সৃষ্টির বাহিরে বা শরীরে অবস্থান করে না, অবস্থান করে তার অন্তরে। আমিও নারীর অন্তরে সেই অসীম শক্তির বীজ বোপন করে দিয়েছি যা দিয়ে সে সমস্ত মর্ত্যলোকে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। তাই বাহিরে থেকে সে যত বেশী কোমল, অন্তরে সে তত বেশী মজবুত। অর্থাৎ, এ নারী কোমল হলেও দুর্বল নয়“
অন্তরের শক্তির প্রসঙ্গে দেবদুত এবার ভগনবানকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ হে প্রভু, এ যদি এতটাই মজবুত হয়ে থাকে, তাহলে কি এর চিন্তা ভাবনা, বা বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আছে কি?”
“অবশ্যই” ভগবান বললেন “ এর শুধু চিন্তা করাই ক্ষমতাই আছে এমন নয়। এই নারী যুক্তি দিয়ে কঠিন্তম সমস্যার সমাধান করতেও সক্ষম। এ জানে কিভাবে এবং কোন পরিস্থিতিতে কোমল থাকতে হয় আবার কখন রুদ্রমূর্তি ধারন করে সবকিছু বিনাশের কারন হতে হয়।“ হঠাত, দেবদূত খেয়াল করলেন, সেই নারীমুর্তির শরীরে তরল কিছু প্রবাহিত হচ্ছে। এটাকে জল ভেবে দেবদূত জিজ্ঞাসা করলেন, “প্রভু, এর শরীর বেয়ে এই জল কেন প্রবাহিত হচ্ছে?”
ব্রহ্মা জানালেন, এটি জল নয়, বরং এটি নারীর অশ্রু। দেবদুত ভাবতে লাগলেন, এহেন বিশাল ক্ষমতাসম্পন্ন নারীর অশ্রুর প্রয়োজন হল কেন? ব্রহ্মা দেবদূতের মনস্তত্ব বুঝতে পারলেন। বললেন “ অশ্রু হচ্ছে তার কষ্ট। তার সন্দেহ, তার ভালোবাসা, তার একাকিত্ব, তার যন্ত্রণা এবং তার গৌরব প্রকাশের উপায়। আমি তাকে এমন শক্তি দিয়েছি যে শক্তির দ্বারা সে তার সমস্ত কষ্ট, দুঃখ ও যন্ত্রনা কে তরলত করে শরীর থেকে বের করে দিতে সক্ষম হবে। এবং এর পর সে দ্বীগুন শক্তি নিয়ে ফিরেও আসতে সক্ষম হবে। “
দেবদূতের মুগ্ধতার মাত্রা বাড়তে থাকে,
– ‘হে ঈশ্বর, আপনার তুলনা আপনি নিজেই। আপনি সত্যিই সব বিষয়েই চিন্তা করেছেন। একজন নারীকে প্রকৃত অর্থেই আপনি বিপুল-বিস্ময়কর করে গড়ে তুলেছেন।’
ঈশ্বর বলেন,
– ‘প্রকৃতপক্ষে সে তাই। পুরুষকে চমৎকৃত করবার সকল সামর্থই আছে তার। সে যে কোনো সমস্যা মোকাবেলায় সিদ্ধহস্ত, সে অনেক ভারি দায়িত্বও বহন করতেও নিপুনা। সে সুখ, ভালোবাসা এবং মতামত ধারন করতে পারবে সেইসাথে অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাও থাকবে তার মধ্যে। যখন তার চিৎকার করতে ইচ্ছে করবে তখন সে হাসবে। সে গান গাইবে যখন তার কাঁদতে ইচ্ছে করবে। সে কাঁদবে যখন সে নিজকে সুখী ভাববে। সে হাসতে পারবে যখন সে ভীত হবে। সে যুদ্ধে যাবে যখন সে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করবে। তার ভালোবাসা হবে শর্তহীন। তাঁর হৃদয় ভেঙে যাবে যখন তার নিকটজনের মৃত্যু হবে। সে তার সবটুকু শক্তি নিয়ে জীবনে আবার ফিরেও আসবে।’
দেবদূত বললেন “ সত্যি প্রভু, এটি আপনার নিখুততম ও পরিপুর্ণ একটি সৃষ্টি।
ঈশ্বর বলেন না,
– ‘তার একটিই অপূর্ণতা বরাবরই থাকবে। আর তা হল সে বারবার তার নিজের মূল্য ও গুরুত্ব ভুলে যাবে।’ যার ফলে তার ভাগ্যে লেখা থাকবে নির্যাতন আর বঞ্চনা। সকল কর্ম সম্পাদন করার পরেও সে তার কৃতকর্মের কৃতিত্ব পাবে না ”
তো দর্শক, এই ছিল ব্রহ্মার নারী সৃষ্টির কারন। আশা করি আপনিও বাস্তবের সাথে এই পৌরাণিক উপকথার মিল খুজে পেয়েছেন। তো আসুন আমরা এই মহা সৃষ্টির সন্মান করি এবং তাদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকারটুকু প্রদান করি।