কথায় বলে লক্ষ্মী চঞ্চলা। তাই দেবী শ্রীলক্ষ্মীকে স্থিরা রাখতে আমাদের এত প্রয়াস। তিনি আমাদের গৃহে স্থিরা হলে জীবন ভরে ওঠে আনন্দে, সাফল্যে এবং সুখে। আমাদের গৃহ ভরে ওঠে ধন-ধান্য-পুষ্পে। আবার তিনি যদি কুপিত হয়ে আমাদের গৃহ ত্যাগ করেন তাহলে আমাদের সাংসারিক জীবনে নেমে আসে অন্ধকার, ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং প্রতিকূলতা।
তবে হ্যাঁ, মা লক্ষ্মী আপনার গৃহ ত্যাগ করার আগে কিছু সংকেত আপনি আগে থেকেই দেখতে পাবেন। এবং এই সংকেতগুলো যখন বারবার আপনার চোখে পড়বে তখনই আপনাকে বুঝে নিতে হবে, দেবী বৈকুণ্ঠার গমনের সময় হয়েছে। তবে আপনি যদি আগে থেকেই অর্থাৎ এই সংকেতগুলো চোখে পড়ার পরপরই তা প্রতিরোধ করে পুনরায় মাতা লক্ষ্মীকে প্রসন্ন করতে পারেন, তাহলে দেবী লক্ষ্মী আবারও স্থিরা হবেন আপনার গৃহে।
সনাতন এক্সপ্রেসের আজকের আয়োজনে আমরা আপনাদেরকে জানাবো সেই ৫টি সংকেতের কথা। সেইসাথে এই সংকেতগুলো দেখামাত্র আপনি কিভাবে তা প্রতিরোধ করবেন সেই পরামর্শও রইল আপনাদের জন্য। এবং সবশেষে রইল দেবী শ্রীলক্ষ্মীর কৃপা লাভের জন্য নিত্যপাঠ্য কিছু মন্ত্র।
অন্নের অপমান
আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য মাতা লক্ষ্মীর কৃপায় অন্নের সংস্থান হয়ে থাকে আমাদের। সুতারাং, অন্ন মাতা লক্ষ্মীর একটি রূপভেদও বটে। তাই অন্নের অপমান রূপান্তরে মাতা শ্রীলক্ষ্মীরই অপমান। জানেন কি অন্নের অপমান কিভাবে হয়?
- অন্নভোজনের সময় তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভোজন করা।
- প্রায়শই পাতে অন্ন নিয়ে তার কিছু অংশ ভোজন করে কিছু অংশ নষ্ট করা।
- অন্নপাত্রে পদস্পর্শ করা।
- প্রয়োজনের অধিক অন্ন রন্ধন করে তা ভোজন না করে ফেলে দেওয়া।
আপনি যদি সাম্প্রতিককালে আপনার বাড়িতে এবং বাড়ির সদস্যদের মধ্যে এধরনের কার্যকলাপ লক্ষ্য করে থাকেন, তাহলে বুঝে নিন অন্নদাত্রী মাতা লক্ষ্মী আপনার গৃহ ত্যাগ করতে চলেছেন।
সুতারাং, আপনি যদি সত্যিই মা লক্ষ্মীকে আপনার গৃহে স্থিরা করে রাখতে চান তাহলে অনতিবিলম্বে অন্নের অপমান বন্ধ করুন। সেইসাথে প্রতি বৃহস্পতিবার দেবী শ্রীলক্ষ্মীকে ভক্তিভরে পুজো করে তার কাছে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন।
বৃদ্ধ বা বয়োজ্যেষ্ঠদের অপমান
আমাদের প্রত্যেক পরিবারে বৃদ্ধ বা বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ রয়েছেন। এই মানুষগুলোই হয়ত একসময় কঠোর পরিশ্রম করে পরিবারের সকলের অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান করেছেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এবং বয়সের ভারে আজ হয়ত তারা কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। আর তাই আমাদের সমাজে প্রায়শই বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদেরদেরকে অবহেলা ও অপমান করা হয়ে থাকে।
কিন্তু আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন, যে গৃহে বয়োজ্যেষ্ঠদের অপমান বা অবহেলা করা হয় মাতা লক্ষ্মী অতি সত্বর সেই গৃহ ত্যাগ করেন। এবং আপনার বাড়িতে যদি নিরন্তর বয়োজ্যেষ্ঠদেরকে অপমান করা হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে মাতা লক্ষ্মী আপনার গৃহ ত্যাগ করতে চলেছেন।
এরকম পরিস্থিতিতে আপনাকে অনুধাবন করতে হবে প্রকৃতির নিয়মে মানুষ এক সময় বার্ধক্যে পৌছে যায়। এবং আপনাকেও একসময় বার্ধ্যককে বরণ করতেই হবে। সুতারাং আপনার বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদের যদি অপমান বা অবহেলা প্রদর্শন করা হয়ে থাকে তাহলে তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং তাদের প্রাপ্য সম্মান ও সেবা-যত্ন ফিরিয়ে দিন। আর এভাবেই আপনি মাতা লক্ষ্মীকে আপনার গৃহে স্থিরা করে রাখতে পারেন।
ব্যাভিচার
মানুষের আত্মবিনাশক রিপুগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাম। আর তাই কামকে নিয়ন্ত্রণে রাখা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। দুর্ভাগ্যবশত, আজ আমাদের সমাজের বহু মানুষ নিজের উগ্র কামকে নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে লিপ্ত হয়ে থাকেন ব্যাভিচারে। আর এখান থেকে শুরু হয় তাদের পতন।
আমাদের আশেপাশে এমন অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে থাকেন। এবং এহেন হীন কর্মে অত্যন্ত রুষ্ট হন মাতা লক্ষ্মী। সুতারাং, আপনার বাড়িতে যদি কেউ ব্যাভিচারে লিপ্ত হন, তাহলে এটাকে মাতা লক্ষ্মীর গৃহত্যাগ করার সংকেত হিসেবে ধরে নিতে পারেন।
তাই আপনার গৃহ থেকে মাতা লক্ষ্মীর প্রস্থানকে ঠেকাতে চাইলে অনতিবিলম্বে ব্যাভিচারের অন্ধকার পথ থেকে ফিরে আসুন এবং ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
অপরিচ্ছন্ন ঘরবাড়ি
আপনার বাড়িটি কি ময়লা আবর্জনা, ঝুল বা মাকড়সার জালে পরিপূর্ণ? তাহলে এখনই সময় সাবধান হওয়ার। লক্ষ্মীদেবী অপরিচ্ছন্নতাকে ভীষনভাবে অপছন্দ করে থাকেন। এবং আপনার বাড়ি যদি দীর্ঘদিন অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় ফেলে রাখেন তাহলে লক্ষ্মীদেবীও ধীরে ধীরে আপনার গৃহ ত্যাগ করে থাকেন।
তাই সপ্তাহে অন্তত একবার বাড়ির ঝুল এবং মাকড়সার জাল পরিষ্কার করুন, গৃহের বর্জ একটি নির্দিষ্ট পাত্রে রাখুন এবং নিয়মিত তা পরিষ্কার করুন, এবং আপনার বাড়িতে যেন পর্যাপ্ত আলো বাতাস ঢুকতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখুন। তাছাড়াও আপনার গৃহে অবস্থিত ঠাকুরঘরটিও একইভাবে পরিষ্কার করুন।
তবে এগুলো ছাড়াও বাসী কাপড়ে ঠাকুরঘরে প্রবেশ, এঁটো মুখে দেববিগ্রহকে স্পর্শ করা বা শোবার বিছানায় বসে ভোজন করাও মাতা লক্ষ্মীর অপছন্দনীয় কাজ।
সুতারাং মাতা লক্ষ্মীর প্রস্থান ঠেকাতে আপনার গৃহের পরিচ্ছন্নতার উপরে বিশেষভাবে নজর দিন।
কলহ, পরনিন্দা-পরচর্চা এবং পরশ্রীকাতরতা
পরনিন্দা-পরচর্চা যেবা গৃহে হয়
লক্ষ্মী উঠে বলেন ইহা বাসযোগ্য নয়।
কলহ, বিতর্ক আদি যত দোষ হয়
লক্ষ্মীর বিপরীত ইহা অলক্ষ্মী সদয়।
দর্শক, বুঝতেই পারছেন, কলহ, পরনিন্দা-পরচর্চা এবং পরশ্রীকাতরতা দেবী শ্রীলক্ষ্মীর অত্যন্ত অপছন্দের বিষয়। তাই যখনই আপনার গৃহে অশান্তি, কলহ বা পরনিন্দা দেখা দেবে তখনই বুঝে নিয়ে হবে মাতা লক্ষ্মী আপনার উপরে রুষ্ট হয়েছেন এবং তিনি আপনার গৃহত্যাগ করতে উদ্যত।
এমতাবস্থায়, শ্রীলক্ষ্মীর প্রস্থান ও অলক্ষ্মীর আগমন বন্ধ করতে অবশ্যই কলহ, পরনিন্দা-পরচর্চা এবং পরশ্রীকাতরতা ত্যাগ করুন।
এবার আপনাদের কে জানাবো এমন তিনটি অব্যর্থ মন্ত্র যা দ্বারা আপনি মাতা লক্ষ্মীকে সন্তুষ্ট করে ধনসম্পদ ও বিত্ত-বৈভবের অধিকারী হতে পারেন।
- ধনপ্রাপ্তি মন্ত্রঃ ॐ श्री महालक्ष्म्यै च विद्महे विष्णु पत्न्यै च धीमहि तन्नो लक्ष्मी प्रचोदयात् ॐ
- কুবের-অষ্টলক্ষ্মী মন্ত্রঃ ॐ ह्रीं श्रीं क्रीं श्रीं कुबेराय अष्ट-लक्ष्मी मम गृहे धनं पुरय पुरय नमः॥
- কুবের মন্ত্রঃ ॐ यक्षाय कुबेराय वैश्रवणाय धनधान्याधिपतये धनधान्यसमृद्धिं मे देहि दापय स्वाहा॥
এই মন্ত্রগুলো প্রতিদিন পাঠ করলে আপনার উপরে বর্ষিত হবে মাতা লক্ষ্মীর কৃপা, ধন ধান্যে পূর্ণ হবে আপনার গৃহ।