ভারতবর্ষ থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে জন্মগ্রহণ করে এবং পৃথিবীব্যাপী তারকা খ্যাতি অর্জন করেও নীরবে নিভৃতে সনাতন হিন্দু ধর্ম পালন করছেন হলিউডের শীর্ষ ১০ তারকা। কি, আশ্চর্য লাগছে না? খোদ শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীচৈতন্যদেবের দেশে জন্মগ্রহণ করেও আজ আমাদের অনেকেই ধর্মবিমুখ অথবা ধর্মান্তরিত। অথচ ঈশ্বরের কি অপূর্ব লীলা, হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ না করেও, আর্যাবর্ত থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে বসে এবং বিপুল কর্মব্যাস্ততার মধ্যেও সত্যের সন্ধান পেয়েছেন শ্বেতাঙ্গ এই তারকারা। আজ সনাতন এক্সপ্রেসের দর্শকদের জন্য রইল সেই ১০ জন তারকার পরিচয়।
Julia Roberts
হলিউডের অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জুলিয়া রবার্টস। সুমিষ্ট হাসি এবং অসাধারন অভিনয় শৈলী দ্বারা তিনি মন জয় করেছেন বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকদের। Pretty Woman, Erin Brockovich, Wonder, Eat Pray Love ইত্যাদি জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল সিনেমায় অভিনয় করা এই অভিনেত্রী হলিউডের অন্যতম একজন জনপ্রিয় ও ব্যস্ততম তারকা। তার মা ক্যাথলিক ও পিতা ব্যাপ্টিস্ট হওয়ার কারনে জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন খ্রীষ্টান। তবে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় যখন তিনি Eat Pray Love সিনেমার শুটিং এর জন্য ২০১০ সালে ভারতে এসেছিলেন। সেখানেই শ্রীহনুমানের একটি ছবি দেখে কৌতূহলী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এবং পরবর্তীতে নিম করোলি বাবার সান্নিধ্যে এসে তিনি অনুধাবন করেছিলেন পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্মের মাহাত্ম্য।
২০১১ সালে তিনি প্রকাশ্যে ঘোষনা দেন তিনি সনাতন ধর্ম অনুসরণ করছেন। তবে তিনি একা নন, তার পুরো পরিবারও নিষ্ঠার সাথে পালন করছে সনাতন হিন্দু ধর্ম। আর তাই তিনি প্রায়শই তার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে শেয়ার করেন যোগব্যায়াম, ধ্যান, দীপাবলি বা অন্যান্য পুজো-পার্বণের দৃশ্য।
Claudia Ciesla
পোলিশ বংশোদ্ভূত জার্মান এই অভিনেত্রী, সুপার মডেল ও ড্যান্সারের নাম ক্লডিয়া সিসলা। ইংরেজী, ইটালিয়ান, জার্মান, হিন্দি ও বাংলাসহ প্রায় ৮টি ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ২০০৮ সালে দশটা দশ নামক বাংলা সিনেমায় অভিনয় করার জন্য ভারতে এসেছিলেন স্বর্ণকেশী এই অভিনেত্রী। আর সেখান থেকে পরিবর্তিত হয় তার আধ্যাত্মিক জীবনের গতিপথ। ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহন করা ক্লডিয়া সিসলা আলোকিত হয়েছিলেন আমাদের বেদাদি শাস্ত্রের সংস্পর্শে এসে। সনাতন দর্শন, জ্ঞান ও পারমার্থিক নির্যাস আহরণ করে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সনাতন হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে পরম সত্য উপলব্ধি করে তিনি আত্মপ্রকাশ করেছিলেন একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে। তবে অন্যান্য তারকাদের মত তিনি শুধু নামেই হিন্দু নন, তিনি একজন প্রাক্টিসিং হিন্দু এবং তার আরাধ্য দেবতা হচ্ছেন শ্রী গণেশ। শ্রীগণেশের ভক্তিতে তিনি এতটাই অনুরক্ত যে, তিনি সর্বদা একটি গণেশ মূর্তি তার সঙ্গে রাখেন।
Sylvester Stallone
সিনেমাপ্রেমীদের কাছে এক অতি পরিচিত নাম হচ্ছে সিল্ভেস্টার স্টালন। তিনবার অস্কার জয়ী এই অভিনেতা এ পর্যন্ত অভিনয় করেছেন ৩০টিরও বেশী সিনেমায়। এর মধ্যে রকি এবং র্যাম্বোর মত বহু দর্শক নন্দিত ও ব্যাবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। এমনকি ২০০৯ সালে নির্মিত অক্ষয় কুমারের কাম্বাখত ইশক সিনেমায় অতিথি শিল্পী হিসেবে একটি ক্যামিও চরিত্রেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। তবে এত বিশাল তারকা খ্যাতি, কর্মব্যাস্ততা ও সফলতার মাঝে সিল্ভেস্টার স্টালনের জীবনে ঘটে যায় একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ২০১২ সালে তার পুত্র Sage Stallone মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যান। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় তার পুত্রের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর থেকে। সিল্ভেস্টার খেয়াল করতেন তার পুত্রের একটি অববয়ব প্রায় সর্বক্ষণ তার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। প্রথমদিকে তিনি এটাকে হ্যালুসিনেশন হিসেবে নিয়েছিলেন, কিন্তু তার পুত্রের মৃত্যুর প্রায় ৪ বছর পরেও তিনি সেই একই অবয়ব অনুভব করতে থাকেন। বিষয়টিকে তখন তিনি আর হ্যালুসিনেশন হিসেবে উড়িয়ে দিতে পারেননি। এসময় তিনি অপঘাতে মৃত্যুজনিত কারনে তার পুত্রের অতৃপ্ত আত্মাকে উদ্ধার করতে একজন আচার্যের সাহায্য নিয়েছিলেন। আচার্য তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন পুত্রের উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান ও শ্রাদ্ধকর্ম সম্পাদন করার জন্য। আচার্যের পরামর্শমত সিল্ভেস্টার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভারতে এসে পুত্রের শ্রাদ্ধ করার জন্য।
তবে তিনি ভারতে এলে ব্যাপক মিডিয়া হাইপ, নিরাপত্তা ইস্যু ও লক্ষ লক্ষ ভক্তদের ভীড় সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে বিধায় তিনি তার পরিবারকে পাঠিয়েছিলেন পিণ্ডদান করার উদ্দেশ্যে। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সিল্ভেস্টার স্টালনের ভাই মাইকেল, তার স্ত্রী মিশেলসহ তার আরও বেশ কয়েকজন পরিবারের সদস্য এসে Sage Stallone এর আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান ও শ্রাদ্ধকর্ম সম্পাদন করেছিলেন হরিদ্বারে। এবং আশ্চর্যের বিষয়, এই শ্রাদ্ধকর্মের পরে সিল্ভেষ্টার স্টালন আর কখনোই তার মৃত পুত্রের অবয়ব দর্শন করেননি। এই ঘটনার পর থেকে সনাতন ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপিত হয় সিল্ভেস্টার স্টালনের মনে। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সনাতন ধর্ম গ্রহণ করেননি বটে, তবে পরবর্তীতে তিনি যোগ, ধ্যান, কর্ম এবং আধ্যাত্মিকতার উপরে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও মিডিয়া রিপোর্টেও সনাতন দর্শনের প্রতি তার অনুরাগ প্রকাশ পায়।
Lena Headey
হালের এক জনপ্রিয় সিরিজের নাম Game of Thrones. আর এই বিপুল জনপ্রিয় সিরিজের একটি অন্যতম প্রধান চরিত্র হচ্ছে Cersei Lannister. তবে বাস্তবে তিনি হলেন বৃটিশ অভিনেত্রী Lena Heady. Leana Heady এর ধর্মীয় পরিচয় কিছুটা অন্তরালেই রেখেছেন তিনি। কেউ দাবী করে থাকেন তিনি বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী আবার কেউ দাবী করে থাকেন তিনি সনাতন হিন্দু ধর্মের অনুসারী। তবে তিনি মজার ব্যাপার হচ্ছে তার ডান বাহুতে অঙ্কিত রয়েছে শ্রীগণেশের একটি উল্কি। না এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয়ে গেল না তিনি সনাতন ধর্মের অনুসারী। তবে তার শরীরে অঙ্কিত এই গণেশের উল্কি কেন এই প্রশ্ন করা হয়েছিল বিবিসির পক্ষ থেকে। এর উত্তরে Leana Heady বলেছিলেন, “I’ve got a Ganesh Obsession”। অর্থাৎ, তিনি শ্রীগণেশে আচ্ছন্ন। সুতারাং তিনি নিজে যেহেতু নিজেকে গণেশ ভক্ত হিসেবে দাবী করেছেন, সেহেতু তাকে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে উপস্থাপন করেছে বেশ কিছু গণমাধ্যম।
Russell Brand
আপনি হয়ত বৃটিশ অভিনেতা ও কমেডিয়ান রাসেল ব্র্যান্ডের নাম শুনে থাকবেন। কমেডি ঘরানার অভিনয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ও নন্দিত এই অভিনেতাও আকৃষ্ট হয়েছিলেন পরম সত্যের প্রতি। তবে হ্যাঁ, তিনি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করার বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি বটে, কিন্তু তার বেশ কিছু কর্মকাণ্ডে দেখা মেলে সনাতন ধর্ম ও দর্শনের সাথে তার গভীর সম্পর্ক। ২০০৮ সালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হাত তুলে চারবার হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করেছিলেন তিনি। সেই ঘটনার পর পরই প্রকাশ্যে আসে রাসেল ব্র্যান্ডের কৃষ্ণপ্রেমের কাহিনী। জানা যায় তিনি যখন অপদ্রব্যে আসক্ত হয়ে অস্থির সময় কাটাচ্ছিলেন তখন এই হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করেই তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরেছিলেন। এছাড়াও লাইভ স্টেজ শোগুলোতেও শো শেষ করার আগে হরে কৃষ্ণ জপ করতে দেখা গিয়েছে তাকে। সেইসাথে যুক্তরাজ্যের ওয়াটফোর্ডে অবস্থিত হরে কৃষ্ণ মন্দিরে নিয়মিতভাবে যাতায়াত, ধ্যান ও জপ করতেও দেখা গিয়েছে রাসেল ব্রান্ডকে।
শুধু তাই নয়, আমেরিকান বৈষ্ণব গুরু রাধানাথ স্বামীকে নিজের আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি। এছাড়াও রাসেল ব্র্যান্ডের বাম বাহুতে দেখা মেলে শ্রীকৃষ্ণের উল্কি এবং ডান বাহুতে “अनुगच्छतु प्रवाहं” নামে আরও একটি উল্কির দেখা মেলে। তবে রাসেল ব্রান্ডের যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি লাইমলাইটে এসেছিল সেটি হচ্ছে তার বিবাহ। ২০১০ সালে আমেরিকান গায়িকা কেটি পেরির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন রাসেল ব্রান্ড। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভারতের রাজস্থানে, বিবাহের আয়োজন করা হয়েছিল সম্পূর্ণ ভারতীয় ভঙ্গিমায়, বিবাহ পরিচালনা করেছিলেন একজন হিন্দু পুরোহিত এবং সমগ্র রীতি নীতি অনুষ্ঠিত হয়েছিল হিন্দু রীতিতে।
Miley Cyrus
হালের আরও এক জনপ্রিয় পপ গায়িকা, গীতিকার ও অভিনেত্রী মাইলি সাইরাস সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন। তিনি তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য কিছুটা সমালোচিত হলেও আজ সনাতন ধর্মের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করব আমরা। খ্রীষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এই তারকা ব্যক্তিগতভাবে কোন ধর্মের অনুসারী তা আজও ভক্তদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে সনাতন ধর্মের প্রতি তার অনুরক্তি প্রথম প্রকাশ প্রায় ২০১৭ সালে। এসময় তিনি নিজের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো করে সেই ছবি পোষ্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে। পরবর্তীতে তাকে দেখা গিয়েছে যোগব্যায়াম, ধ্যান ও অষ্টাঙ্গ যোগের মত হিন্দু ধর্মীয় বিধান পালন করতে। তার মতে, এসকল কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র শারিরীক নয় আধ্যাত্মিকও বটে। এছাড়াও বিভিন্ন গনমাধ্যমে বা ইন্টারভিউতে তিনি সনাতন ধর্ম সম্পর্কে তার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং সনাতন ধর্মের গ্রহনযোগ্যতা, দর্শন, এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান তাকে ব্যাপকভাবে আকর্ষন করে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
Filmbeat এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে ভারতে এসেছিলেন মাইলি সাইরাস। সেখানে তিনি হিন্দু মন্দির দর্শন করেন, পণ্ডিত ও ধর্মজ্ঞদের সাথে শাস্ত্রীয় বিষয়ে আলোচনা করেন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় রিচুয়াল সম্পন্ন করেন। তাছাড়া হিন্দু ধর্মের প্রতি তার অনুরক্তি প্রকাশ পায় তার বাম কব্জিতে অঙ্কিত ওম চিহ্ন এবং তর্জনী অঙ্গুলে অঙ্কিত Karma উল্কির মাধ্যমে।
Hugh Jackman
অস্ট্রেলিয়ান সুপারস্টার হাগ জ্যাকম্যানের নাম শোনেননি এমন সিনেমাপ্রেমী মানুষ দেখা যায় না বললেই চলে। বিশেষ করে X-men সিরিজে অভিনয় করার জন্য বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। তবে জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয় খ্রীষ্টান বা একজন সফল চলচিত্র তারকা পরিচয়ের বাইরেও হাগ জ্যাকম্যান তার ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন আধ্যাত্মিকতায়। ব্যক্তিজীবনে যোগ বা ধ্যানের মত হিন্দু ধর্মীয় অনুসঙ্গের সাথে ব্যাপকভাবে অনুরত থাকেন এই বিশ্বখ্যাত অভিনেতা। সেইসাথে তিনি তার প্রকাশ্য সাক্ষাৎকার বা লাইভ অনুষ্ঠানে ভগবত গীতার জ্ঞান ও পথপ্রদর্শন নিয়ে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন সময়ে। তার জীবনের প্রথমদিকে তিনি আস্বাদন করার সুযোগ পেয়েছিলেন ভাগবত গীতার অমৃত নির্যাসের। আর তার পর তিনি অধ্যয়ন করেছিলেন উপনিষদ্গুলোও। তার মতে সনাতন ধর্মের এই রহস্যময়তা তাকে প্রবলভাবে আকর্ষন করে। একটি ইন্টারভিউ তে হাগ জ্যাকম্যান বলেছিলেন, তিনি মূলত প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের আধ্যাত্মিক মিশ্রনকে অনুসরন করেন। আর সেখানেই বার বার প্রসঙ্গ চলে আসে ভাগবত গীতা ও উপনিষদসমূহের। ১৯৯৬ সালে যখন এই বিশ্বতারকা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন, তখন তার বিয়ের আঙটিতে খোদাই করে সংস্কৃত ভাষায় লেখা ছিল “ ॐ परमार मैनामर”
Madonna
আধুনিক প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে পপ কুইন ম্যাডোনার গান অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে তিনি শুধুমাত্র একজন সঙ্গীতশিল্পীই নন, বরং তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত প্রযোজক এবং অভিনেত্রী। আমেরিকান খ্রীষ্টান পরিবারের সন্তান ম্যাডোনা এশিয়ার বেশ কিছু ধর্ম ও মত ও পথের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে। তবে তার এই আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সনাতন হিন্দু ধর্ম। টেলিভিশন শোগুলোতে তিনি প্রায়শই কথা বলেছেন সনাতন দর্শন থেকে উদ্ভূত যোগ, ধ্যান ও মন্ত্র সম্পর্কে। এবং তিনি ব্যক্তিজীবনে এসকল সনাতন ধর্মীয় বিধান পালন করেন এমন কথাও প্রকাশ্যে বলেছেন ম্যাডোনা। এছাড়াও তার বিভিন্ন সাক্ষাতকারে তিনি ভগবান শ্রীগণেশ ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা ও অনুরক্তি প্রকাশ করেছেন।
১৯৯৮ সালে ভিডিয়ো মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে কপালে বৈষ্ণবীয় তিলক ধারন করে, দশভূজা নৃত্য করে এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে শ্রীগণেশ, রাধা কৃষ্ণ ও দেবী সরস্বতীর ছবি দিয়ে সেট সাজিয়ে শান্তি মন্ত্রে সুরারোপ করেছিলেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ভারতীর নারীদের মত ভারতীয় পোশাক পরিধান করে দেবতার আরতি করতেও দেখা গিয়েছে এই সুর সম্রাজ্ঞীকে।
Will Smith
বিনোদন জগতের এক উজ্জ্বলতম তারকার নাম উইল স্মিথ। পেশাগত জীবনে তিনি একজন চলচিত্র অভিনেতা এবং র্যাপার। কমেডি, একশ্যান বা থ্রিলার যে কোন জনরার সিনেমায় নিজের অভিনয় শৈলী ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করে তিনি আজ আন্তর্জাতিক মানের একজন খ্যাতিমান অভিনেতা। তবে এগুলোর বাইরে তার আরও একটি পরিচয় হচ্ছে, তিনি একজন বিশিষ্ট সনাতন ধর্মের অনুরাগী। আর সেকারনে তিনি বার বার ছুটে এসেছেন আমাদের এই ভারতবর্ষে। ২০১৯ সালে তিনি ভ্রমণ করেছেন হরিদ্বার ও হৃষিকেশ। সেখানে তিনি অংশ নিয়েছেন গঙ্গা আরতিতে, শিবলিঙ্গের উপরে গোদুগ্ধ ও মধু নিবেদন করে সম্পাদন করেছেন রুদ্র অভিষেক, এবং এবং অক্ষরধাম মন্দিরে গিয়ে পুজো নিয়েছেন ভগবান স্বামীনারায়ণকে।
তবে উইল স্মিথের সনাতন ধর্ম সম্পর্কে গভীর ধারনার পরিচয় পাওয়া যায় জয় সেটির সাথে উইল স্মিথের পডকাস্টের মাধ্যমে। জনপ্রিয় এই সাক্ষাতকারে উইল স্মিথ কথা বলেছেন ভাগবত গীতা, হিন্দু দর্শন, এবং অহিংসা নিয়ে। তার এই সাক্ষাতকার থেকে জানা যায়, তিনি নিয়মিতভাবে ভাগবত গীতা পাঠ করেন এবং গীতার জ্ঞান আত্মস্থ করে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন তিনি। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন গীতায় অর্জুনের নৈতিক বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে যে জ্ঞান প্রদান করেছিলেন, সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
Robert Downey Jr.
আয়রন ম্যান খ্যাত রবার্ট ডাউনি জুনিয়রকে বলা হয় “One of the Biggest Starts of the Whole World.” অভিনয় জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি সিনেমায় অভিনয় করলেও আয়রন ম্যান চরিত্রটি তাকে এনে দিয়েছে বিশ্বজোড়া খ্যাতি ও সুপারস্টারের তকমা। ব্যক্তি জীবনে রবার্ট ডাউনি জুনিয়র ইহুদি ধর্মে জন্মগ্রহণ করলেও পাশাপাশি তিনি বৌদ্ধ ধর্মও চর্চা করে থাকেন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যুগপৎভাবে দুটি ধর্ম অনুসরন করার পরেও আমাদের সনাতন ধর্ম সম্পর্কেও আগ্রহের কোন ঘাটতি নেই তার। আধ্যাত্মিকতার অনুসন্ধান করা তার অনেকগুলো আগ্রহের মধ্যে অন্যতম। তাই স্পাইডারম্যানঃ হোমকামিং সিনেমায় শুটিং করার সময় তিনি যখন ভারতে এসেছিলেন তখন তিনি পরিচিত হয়েছিলেন সনাতন দর্শন সম্পর্কে।
এসময় তার সাথে পরচয় হয়েছিল ইসকনের সাথে। ইসকনের প্রভুরা রবার্ট ডাউনি জুনিয়রকে অবগত করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা, গীতার জ্ঞান ও সনাতন আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে। ইসকনের এই ভক্তিমূলক কর্মকান্ডের সাথে তিনি নিজের এক গভীর সম্পর্ক খুজে পেয়েছিলেন সেদিন।
এরপর ভারতবর্ষ থেকে ফিরে গিয়ে তিনি নিষ্ঠার সাথে অনুশীলন করেছিলেন ভাগবত গীতা। আর এর ফলে তিনি যুক্ত হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের সাথে। এবং এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন ইন্টারভিউ তে সনাতন ধর্ম থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন নীতিকে উদ্ধৃত করেছেন প্রকাশ্যে। যেমন কারমা, যোগ, ধ্যান ইত্যাদি বিষয়ের উপরে ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন তিনি। এছাড়াও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনী ও শিক্ষা থেকে প্রকাশ্যে উদ্ধৃতি দিতে দেখা গিয়েছে এই বিশ্বখ্যাত অভিনেতাকে।