বছরের ৮ মাস জলে নিমজ্জিত থাকে এই মন্দির|| বাথু মন্দির- হিমাচল প্রদেশ || Bathu Ki Ladi Temples ||

আমাদের দেশে অনেক মন্দিরের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে রহস্য। কোনও মন্দির ইতিহাস, আবার কোনও মন্দির অতিপ্রাকৃত ঘটনার সাক্ষী। সেরকমই একটি রহস্যময় মন্দির হল হিমাচল প্রদেশের বাথু কি লড়ি। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, এই মন্দিরটি বছরের ৪ মাস দর্শন করা যায়, বাকী ৮ মাস জলের নিচে নিমজ্জিত থাকে এই রহস্যময় মন্দির। এছাড়াও, খোদ মহাভারতের সাথেও এই মন্দিরের সম্পর্ক বিদ্যমান। তো চলুন দর্শক, কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক এই মন্দিরের আদ্যোপান্ত।

হিমাচল প্রদেশের কাংড়া উপত্যকার ধামেতা শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরত্বেই রয়েছে দেশের এক অদ্ভুত মন্দির, যা বছরের ৮ মাস জলের তলায় নিমজ্জিত থাকে । কাংড়া থেকে গাড়ি করে ধামেতা বা জাবালি গ্রামে পৌঁছতে হয় বাথু মন্দিরে যাওয়ার জন্য । বাথু মন্দিরটি বছরে আট মাস তথা জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত জলের নীচে নিমজ্জিত থাকে। তাই বাথু কি লড়ি দর্শনের জন্য শুধুমাত্র মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে আপনাকে যেতে হবে। হিমাচলের এই অঞ্চলেই রয়েছে পং ড্যাম । বিপাশা নদীর উপরে এই বাঁধের জলে তৈরি হয়েছে মহারানা প্রতাপসাগর হ্রদ । আর এই মহারানা প্রতাপসাগর হ্রদেই বছরে ৮ মাস নিমজ্জিত থাকে এই পৌরাণিক মন্দির। বছরে বেশিরভাগ সময় জলের নীচে নিমজ্জিত থাকলেও মন্দিরের গায়ে কোনও বড় ক্ষতি দেখতে পাবেন না। কারণ মন্দির তৈরি হয়েছে বাথু নামে অত্যন্ত শক্তিশালী পাথর দিয়ে। ঠিক এই কারনেই এই মন্দিরের নামকরন করা হয়েছে বাথু কি লড়ি বা বাথু মন্দির।

‘বাথু কি লড়ি’ মুলত ভগবান বিষ্ণু-র মন্দির। মন্দিরের ভিতরে দেখা যায় শেষনাগের উপরে বিশ্রামরত ভগবান বিষ্ণুকে । মুলত বেশ কয়েকটি ছোট বড় মন্দির নিয়েই গঠিত এই বাথু কি লড়ী মন্দির চত্বর এবং তার পাশে রয়েছে মন্দিরের থেকেও উঁচু একটি টাওয়ার। ছোট ছোট মন্দিরগুলো বিভিন্ন দেব দেবীর প্রতি উতসর্গকৃত। এছাড়াও মন্দিরের পাথরের গায়ে দেখা যায় কালী ও গনেশের মুর্তি। সম্প্রতি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফ থেকে বাথু মন্দিরে একটি শিবলিঙ্গ পুনর্স্থাপন করা হয়েছে যা এই মন্দিরের আকর্ষনকে আরও বর্ধিত করেছে। এ যেন এক আশ্চর্যরকমের চমৎকারের দেশে অবস্থিত এক আধ্মাত্মিক মন্দির।

আরও পড়ুনঃ  অপ্সরাদের অজানা ও গোপন কথা || উর্বশী, রম্ভা, মেনকা, তিলোত্তমা, ঘৃতাচী || Apsaras- Water Nymphs ||

 

এই মন্দিরের স্থপতি এবং নির্মানকাল নিয়েও কোন সুনির্দিষ্ট তত্থ্য পাওয়া যায় না। অনেকের বিশ্বাস, মহাভারতের পাণ্ডবরা তৈরি করেছিলেন এই বাথু মন্দির । এখান থেকেই স্বর্গে যাওয়ার সিঁড়ি তৈরি করার প্রকল্প নিয়েই পাণ্ডবরা শুরু করেছিলেন এই মন্দিরের নির্মাণকাজ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এর নির্মানকাজ শেষ করতে পারেননি তারা। তবে স্থানীয় অনেকেই মনে করেন যে কোনও রাজার আমলেই তৈরি হয়েছিল এই মন্দির । প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত, পুর্নার্থী ও পর্যটকগন অপেক্ষা করতে থাকেন মার্চ মাস আসার। মার্চে মন্দিরটি হ্রদের জল থেকে জেগে উঠলে ঢল নামে অগণিত মানুষের। শুধু মন্দিরই নয়, মহারানা প্রতাপসাগর হ্রদের কারনে এখানে দেখা যায় প্রায় ২০০ টির ও বেশি প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং পৌরাণিক মন্দিরের পুণ্যভূমিতে স্পর্শ করতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন এই আশ্চর্য মন্দিরের দেশ থেকে।

 

5/5 - (1 vote)

Leave a Comment

error: Content is protected !!