রহস্যময় ও অলৌকিক আদিনাথ মন্দিরের ইতিহাস

শিবপুরাণ ও ঐতিহাসিকদের বর্ণনা থেকে এই মন্দিরের ঐতিহাসিক সত্যতা প্রমানিত হয়েছে বহু আগেই। শিবপুরাণ অনুযায়ী, মহাদেব শিবের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত ছিল রাবন। রাবনের ভক্তির তীব্রতা এতটাই ছিল যে তিনি তাঁর দশ মস্তক কর্তন করে মহাদেবের পায়ে বিসর্জন দিয়েছিলেন। এই রাবণ একবার নিজের আরাধ্য মহাদেবকে চিরকালের জন্য লঙ্কায় নিয়ে যেতে উদ্যোগী হয়েছিলেন, এবং এই হেতু তিনি মহাদেবের কঠোর সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন। মহাদেব শিব রাবণের আরধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে অভীষ্ট সাধনে বর দান করেন। কিন্তু তিনি এই বরের মধ্যে দুইটি শর্ত দেন যার প্রথমটি হল তিনি লিঙ্গরূপে রাবনের কাঁধে চড়ে লঙ্কায় যাবে এবং দ্বিতীয় শর্তটি ছিল এই শিবলিঙ্গটিকে পথিমধ্যে কোথাও রাখা যাবে না। যদি রাখা হয় তাহলে মহাদেব সেই স্থানেই অবস্থান নেবেন এবং রাবণের অভীষ্ট সাধন হবেনা। এই বলে, ভগবান শিব রাবণকে বর স্বরূপ একটি শিবলিঙ্গ প্রদান করেছিলেন। কিছু দূর আসার পর রাবণ মৈনাক পর্বতের একটি স্থানে এসে মূত্রত্যাগ করার জন্য স্থির হয়। এদিকে দেবরাজ ইন্দ্র চিন্তা করেন যদি রাবণ মহাদেবকে নিয়ে যেতে সফল হয়, তাহলে তাঁর স্বর্গপুরী হারাতে হবে রাবণের কাছে। তখন দেবরাজ ইন্দ্র কৈলাসে গিয়ে গণেশকে সবিস্তারে রাবনের অভিসন্ধি বর্ননা করে রাবণের পথরোধ করার জন্য অনুরোধ করেন। তখন গণেশ মৈনাক পর্বতে এসে এক ব্রাহ্মণ বালকের ছদ্মবেশ ধরে অপেক্ষা করতে থাকেন। এদিকে প্রকৃতির ডাকের যন্ত্রনায় কাতর রবন ব্রাহ্মণ বালকের ছদ্মবেশধারী গনেশকে দেখামাত্র তাকে শিবলিঙ্গটি ক্ষনিকের জন্য বহন করতে বলেন এবং অনুরোধ জ্ঞাপন করে যে, সে যেন কোনও ভাবে এই শিবলিঙ্গটি মাটিতে না রাখে। কিন্তু গণেশ রাবণ যাওয়ার পর পরই শিবলিঙ্গটি ভূমিতে রেখে দেন। রাবন ফিরে এসে দেখতে পেলেন বালকটি তাঁর শিবলিঙ্গটি ভুমিতে স্থাপন করেছে এবং শিবলিঙ্গটি সেখানেই স্থায়ীভাবে স্থাপিত হয়েছে। হতভম্ব রাবণ শত চেষ্টা করেও শিবলিঙ্গটি স্থানান্তরে অসমর্থ হন এবং এই শিবলিঙ্গটিই পরবর্তীতে মৈনাক শিখরেই আদিনাথ রুপে পূজিত হতে থাকেন।

আরও পড়ুনঃ  শিব ও শিবলিঙ্গ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানুন|| Why Shiva is Worshiped as Linga? Mystery of Shivling

5/5 - (1 vote)

Leave a Comment

error: Content is protected !!