মহালয়া – মহিষাসুরমর্দিনির বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র || জানুন তাঁর জীবনের করুণ ইতিহাস || Birendra Krishna

আশ্বিনের শারদ প্রাতে

জেগে উঠেছে আলোকমঞ্জির

এই আগমনী বার্তা যার জাদুকরী কণ্ঠে ভর করে ভেসে এসেছিল, তিনি হচ্ছেন বাঙালীর প্রবাদপুরুষ শ্রী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র মহাশয়। তাঁর কণ্ঠের সেই আগমনী বার্তা পেয়ে শিউলি ফুলেরা ঝরে পড়ে মহানন্দে, শরতের নীলাকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভাসিয়ে মেঘেরা সজ্জিত হয় সাড়ম্বরে, প্রকৃতি সেজে ওঠে সাদা ধবধবে কাশফুলের শৃঙ্গারে আর নিদ্রিত দেবী পার্বতী জেগে ওঠেন তাঁর অকাল বোধনের প্রস্তুতি নিতে। বলা যায় তাঁর সেই স্বত্রন্ত্র কণ্ঠের জন্য তাঁকে অমরত্ব দিয়েছেন স্বয়ং দেবীমাতা।

যুগ যুগ ধরে বাঙালীর চিন্তা, চেতনা ও মননে মিশে থাকা সেই চণ্ডীপাঠের নেপথ্য নায়কের নামটি আমাদের সকলের পরিচিত হলেও তাঁর সম্পর্কে খুব বেশী কিছু জানার সুযোগ আমাদের কোনদিনই হয় নি। ব্যাক্তিজীবনে কেমন ছিলেন সেই মানুষটি? কিভাবে জীবন কেটেছিল তাঁর? কতটা স্বীকৃতি জুটেছিল তাঁর কাজের? বাজে ও নষ্ট কণ্ঠস্বরের জন্য রেডিওতে সুযোগ না পেয়েও কিভাবে মহিষাসুরমর্দিনিতে ভাষ্যপাঠ করেছিলেন তিনি? কেন শেষ বয়সে এসে তাঁকে আকাশবানীতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল? আর কতটা অভিমানে পৃথিবী ত্যাগ করেছিলেন তিনি? এসকল প্রশ্নের উত্তর আজও রয়ে গেছে পর্দার আড়ালে। তাই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের জীবনের জানা অজানা নানা অধ্যায় নিয়ে নির্মিত হয়েছে আমাদের আজকের আয়োজন। আশা করি  শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকবেন।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র

পরিষ্কার ধবধবে ধুতি-পাঞ্জাবি, কাঁধে একটা উড়নি, চোখে চশমা। হাতে খুব ছোট একটা থলে, পাঞ্জাবির দুই পকেটে দুই রকমের রুমাল— একটি নস্যিরঞ্জিত এবং আর একটি পরিষ্কার- এই ছিলেন বাঙালির বেতার পুরুষ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।

তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯০৫ সালের  ৪ঠা আগষ্ট তারিখে উত্তর কলকাতার আহিরীটোলাতে৷পিতা রায় বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন একজন ভাষাতত্ত্ববিদ। ১৪ টি ভাষায় সাবলীল ভাবে কথা বলতে পারতেন তিনি। এবং এই বহু ভাষা জানার সুবাদে নিম্ন আদালতে দোভাষী হিসাবে কর্মরত ছিলেন রায় বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র।  পক্ষান্তরে মাতা সরলা দেবী ছিলেন সহজ সরল বাঙালী গৃহবধু।

ঠাকুমা যোগমায়া দেবীর কাছ থেকে ছোটোবেলাতেই সংস্কৃত শিক্ষার হাতে খড়ি হয়েছিল বীরেন বাবুর৷ তাঁর স্মৃতিশক্তি এতটাই প্রখর ছিল যে মাত্র আট বছর বয়সে চণ্ডীপাঠ করে তিনি চমকে দিয়েছিলেন সকলকে৷ তাঁর সেই ঠাকুমাই শেক্সপিয়ার এবং গিরিশচন্দ্রের নাটক পড়ে পড়ে শোনাতেন ছোট্ট বীরেন্দ্রকৃষ্ণকে। ম্যাট্রিক পাশ করেই আবৃত্তির দিকে ঝুকলেন বীরেন্দ্র। পাতার পর পাতা কবিতা মুখস্ত করে অনায়াসেই আবৃত্তি করতে পারতেন প্রখর স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।

এরপর একে একে ১৯২৬ সালে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯২৮ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী সুসম্পন্ন করেন তিনি৷এসময় পড়াশোনার পাশাপাশি কম্বুলিয়াটোলায় চিত্রা সংসদ ও অর্ধেন্দু নাট্য পাঠাগারে  গানবাজনা ও অভিনয় চর্চাও করতেন সমানভাবে৷

আরও পড়ুনঃ  রহস্যময় কোণার্ক সূর্য মন্দিরের ইতিহাস || History of Mysterious Konark Surya Mandir ||

পড়াশোনার পর্ব শেষ না হতেই কর্মজীবনে ঢুকে পড়েন বীরেন্দ্র। ১৯২৮ সালেই ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের সদর দফতরে যোগ দেন তিনি। তবে রেলওয়েতে চাকরি করলেও তাঁর মন পড়ে থাকত ১ নম্বর গার্স্টিন প্লেসের বেতার কেন্দ্রে। তাই টিফিনের সময়ে কিংবা বিকেলে ছুটির পরে তিনি ঠিকই পৌঁছে যেতেন রেডিয়োর বন্ধুদের আড্ডায়।

তবে রেডিওতে কাজ করার সুযোগ খুব সহজে হয় নি তাঁর। একসময় রেডিওতে অডিশন দিতে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। কারনটা কি জানেন? কারন হচ্ছে তাঁর নষ্ট এবং ভাঙা কণ্ঠস্বর। কি অবাক হলেন? গবেষকগণ বলছেন, একবার ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ সংকটে পড়েছিলেন বীরেন্দ্র। সেসময় ইংরেজ ডাক্তার তাঁর প্রাণ রক্ষা করতে পারলেও গলাটি আর বাঁচাতে পারেননি। তাই কণ্ঠের ভাঙা ভাবটি থেকে যায় আজীবন। তবে শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সেই ভাঙা কণ্ঠটিই আজ বাঙালীর কাছে এক অনন্য আবেগের নাম।

যাইহোক, একবার একটি বেতার-নাটকে একটি রাক্ষসের কন্ঠস্বর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কারো কণ্ঠস্বরেই মন ভরছিল না সেই নাটকের প্রযোজকের। অবশেষে ডাক এল বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের এবং বলাই বাহুল্য সেই রাক্ষস কণ্ঠের মানুষটিই একদিন হয়ে গেলেন ইতিহাস। এরপর  সেই ১৯২৮ সালেই স্টেশন ডিরেক্টর নৃপেন মজুমদারে অনুরোধেই রেডিয়োতে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বানী কুমার, পঙ্কজ মল্লিক
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বানী কুমার, পঙ্কজ মল্লিক

অবশেষে এল ১৯৩১ সাল। রেডিও কর্তারা সিদ্ধান্ত নিলেন দেবী দুর্গার আগমনকে কেন্দ্র করে দুই ঘণ্টার সঙ্গীতালেখ্য পরিবেশিত হবে আকাশবানীতে। এই  গীতি আলেখ্য অনুষ্ঠানটির ভাষ্য লিখেছিলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য, সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন রাইচাঁদ বড়াল এবং পঙ্কজকুমার মল্লিক। এবং গ্রন্থনা, ভাষ্যপাঠ ও শ্লোকপাঠ করেছিলেন স্বয়ং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হল শুভ মহালয়ার ভোরে। এরপর থেকেই ব্যাপক সাড়া পড়ে গেল জনমানুষের মনে। তবে তৎকালীন রক্ষনশীল সমাজ অব্রাহ্মণের কণ্ঠে এই চণ্ডীপাঠ শোনাকে মহাপাপ বলে তীব্র আপত্তিও করেছিল। কিন্তু প্রবল জনপ্রিয়তার জেরে তা একেবারেই ধোপে টেকেনি। এভাবেই ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই কিছু পরিমার্জন করে নতুন স্তবস্ততি, দেবীসূক্তি, নতুন গান এবং পুরাতন গানের সুরের পরিবর্তন ঘটিয়ে সম্প্রচার করা হত অনুষ্ঠানটি। এই সময়কাল পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি মহিষাসুর বধ, শারদ বন্দনা ইত্যাদি নামে সম্প্রচারিত হত অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে।

 

এরপর এল ১৯৩৭ সাল। সেসময় রেডিওতে টেপরেকর্ডিং করা অনুষ্ঠানের চল ছিল না। আকাশবাণী-তে সব অনুষ্ঠানই হত সরাসরি সম্প্রচারিত। মহিষাসুরমর্দিনী তে যাঁরা অংশ নিতেন তাঁরা অনেকেই আগে মহড়ার জন্য চলে আসতেন বেতারে। তবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ আগের দিন রাতে থেকে যেতেন রেডিও স্টেশনে। বাকি শিল্পীরা রাত ২টোর পর একে একে হাজির হতেন বেতার কেন্দ্রে। ভোরে অনুষ্ঠান শুরুর আগে স্নান করে গরদের ধুতি এবং পাঞ্জাবি পরে চণ্ডীপাঠে বসতেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র।

আরও পড়ুনঃ  বর্ণাশ্রম থেকে অভিশপ্ত জাতিভেদ- কতটা ঠিক কতটা ভুল? চার বর্ণের কে বড় কে ছোট?

তবে আজকে আমরা তাঁর কণ্ঠে যেভাবে চন্ডীপাঠ শুনি, শুরুতে কিন্তু এমনটা ছিল না। সে সময় চণ্ডীপাঠের অংশটি সুর ছাড়াই স্বাভাবিক কথ্যভঙ্গিতে বলতেন বীরেন্দ্র। একদিন স্টুডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ তাঁর নিজস্ব ধারায় সুরেলা কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ করছিলেন। হঠাৎই অলস রসিকতার ছলে বাংলা ভাষ্যটিও স্তোত্রের সুরের অনুকরণে বলা শুরু করলেন তিনি। তাতে চারিদিকে বেশ একটা মৃদু হাসির ভাব জাগলেও বাণীকুমার দ্রুত রেকর্ডিং রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, “আরে আরে থামলে কেন? বেশ তো হচ্ছিল!  হোক না ওই ভাবেই…।” বীরেন্দ্রকৃষ্ণ হেসে বললেন, “আরে না না একটু মজা করছিলাম!” কিন্তু বাণীকুমার গভীর আগ্রহ নিয়ে বললেন,“মোটেই না! দারুণ হচ্ছিল! ওইভাবেই আবার করো তো।” একদিকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ শুরু করলেন, “আশ্বিনের শারদ প্রাতে জেগে উঠেছে আলোকমঞ্জির”, অন্যদিকে সৃষ্টি হল ইতিহাস। সে ইতিহাস কোন বাঙালীকে বলে বোঝানো নিষ্প্রয়োজন। সেবছর সেই নতুন আঙ্গিকে এবং “মহিষাসুরমর্দিনি” নামে মহাষষ্ঠীর ভোরে প্রচারিত হল অনুষ্ঠানটি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এর আবেদনে এতটুকু ভাটা পড়েনি শ্রোতামহলে। বরং মহালয়ার দিন সাত সকালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠ না শুনলেই পুজোর আমেজ যেন জেগে ওঠে না আজকের বাঙালী সমাযেও। বলে রাখা ভালো ,১৯৩৭ সাল থেকে মহিষাসুরমর্দিনি নামক অনুষ্ঠানটি মহাষষ্ঠীর ভোরে প্রচারিত হলেও কিছু বছর পর তা আবারও ফিরে যায় মহালয়ার ভোরে।

তবে তাঁর প্রতিভা যে শুধুমাত্র এই মহিষাসুরমর্দিনি কেন্দ্রিক, তা কিন্তু নয়। তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, সাহিত্যিক, বাদক, কণ্ঠশিল্পী, পরিচালক ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই অর্থে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত  ছিল বীরেন বাবুর নখদর্পণে।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র

একবার কোন এক প্রয়োজনে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন সেখানকার বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মহিষাসুরমর্দিনীর মানুষটিকে কাছে পেয়ে চরমভাবে আপ্লুত হয়েছেন। আর তা দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ । তবে তাঁর প্রতি মানুষের এত ভালোবাসা ও ভালোলাগার সত্বেও এক কঠিন আঘাতে মর্মাহত হলেন তিনি।

 

সালটা ১৯৭৬। হঠাৎ করেই আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিল মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটি বাতিল করে একটি অন্য অনুষ্ঠান বাজানো হবে মহালয়া তিথিতে। যথারীতি মহিষাসুরমর্দিনীর পরিবর্তে বাজানো হল দেবীদুর্গতিহারিণীম্। বাদ পড়লেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ। তাঁর জায়গায় ভাষ্যপাঠে আনা হল মহানায়ক উত্তম কুমারকে। সেসময় মন মাতানো অভিনয় দিয়ে ক্যারিয়ারের শীর্ষ সময় পার করছিলেন তিনি। কাজেই বেতার কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ থেকে উত্তমকুমার হয়ত আরও বেশী শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করবে। কিন্তু ঘটল তাঁর ঠিক বিপরীত। অর্ধশতক ধরে চলা মহিষাসুরমর্দ্দিনির অভাব পুরণ হলনা শ্রোতা মহলে। চরমভাবে ব্যার্থ হল অনুষ্ঠানটি। দিকে দিকে বয়ে গেল নিন্দার ঝড়, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সাধারণ মানুষ, তাদের সমালোচনার প্লাবনে ভেসে গেল আকাশবাণীর পরিবর্তিত অনুষ্ঠানটি, জায়গায় জায়গায় দেখা গেল বিক্ষোভ। এমনকি বেতার অফিস ভঙচুরের ঘটনাও ঘটল সে বছর। অগত্যা সে বছরই ষষ্ঠীতে আবারও সম্প্রচার করা হল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী।আশ্চর্যের বিষয় এ নিয়ে কোন ক্ষোভ বা অভিমান মনে রাখেননি এই প্রবাদ প্রতীম মানুষটি।

আরও পড়ুনঃ  মহাভারতের চরিত্রগুলো পূর্বজন্মে কে কি ছিলেন? কে কাঁর অবতার? Previous Births of Mahabharat Characters

 

তবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জীবনের শেষ সময়টা মোটেই সুখকর ছিল না৷ স্টাফ আর্টিস্ট হয়েই অবসর নিয়েছিলেন তিনি। ফলে জোটেনি পেনশন। অবসরের পরে শেষ পর্যন্ত ‘মহাভারতের কথা’ বলার জন্য সামান্য টাকা পেতেন তিনি। কিন্তু বাধা হয়ে দাড়ালো তাঁর স্মৃতিশক্তি। যে স্মৃতিশক্তি ছিল বীরেন্দ্রর গর্ব, আশির দশকের প্রথম থেকেই তা লুপ্ত হতে শুরু করে ক্রমান্বয়য়ে। ফলে  মহাভারতের কথা অনুষ্ঠানটি আর চালানো যায়নি৷শেষ পর্যন্ত অর্থাভাব মেটাতে পাড়ায় পাড়ায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে বেড়াতেন তিনি৷

অর্থনৈতিক দিক ছাড়াও স্মমানের দিক থেকেও বঞ্চিত ছিলেন বীরেন্দ্র। সরকারি খেতাব কিংবা পুরষ্কার কোনটিই জোটে নি তাঁর কপালে। পেয়েছিলেন কেবল গুচ্ছের চাদর আর উত্তরীয়! অবসর নেওয়ার পর একদিন আকাশবাণীতে একটি দরকারে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সিকিউরিটি গার্ড তাঁকে ঢুকতে বাধা দিয়েছিলেন আকাশবাণীতে। সেদিন খুব খুব বেশী অবাক হয়েছিলেন বীরেন্দ্র। নিজের পরিচয় দেওয়ার পরও যখন তাঁকে সিকিউরিটি অফিসার তাঁকে পাস ছাড়া ভেতরে যেতে দিল না, তখন চরমভাবে ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হন তিনি। আর তাই শেষ বয়সের অনেক সাক্ষাৎকারে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কন্ঠে ধরা পড়েছিল অভিমানের সুর। তিনি বলেছিলেন, “ভাবতেই পারিনি সবাই আমাকে এত সহজেই ভুলে যাবে। কিন্তু আমাকে ভুলে গেলেও বছরে একবার সেই দিনটিতে মানুষ আমাকে স্মরণ করবেই করবে। আর তাতেই আমার তৃপ্তি।”

অবশেষে বুকভরা অভিমান নিয়েই ১৯৯১ সালের ৩রা নভেম্বর পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছিলেন বাঙালির ‘রেডিও পুরুষ’ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। তবে দেবী দুর্গতিনাশিনির কৃপায় তিনি বাঙালীর হৃদয়ে হয়ে রইলেন অমর অক্ষয়।

5/5 - (2 votes)

Leave a Comment

error: Content is protected !!