You are currently viewing দেবী সরস্বতীর কি সত্যিই বিদ্যা দানের ক্ষমতা আছে? Power of Devi Saraswati to Impart Education ||

দেবী সরস্বতীর কি সত্যিই বিদ্যা দানের ক্ষমতা আছে? Power of Devi Saraswati to Impart Education ||

দেবী সরস্বতীর কি সত্যিই বিদ্যা দানের ক্ষমতা আছে? আমরা প্রতি বছর অনেক ঘটা করে প্রতিমা প্রস্তুত করে, তাতে বই পুস্তক, দোয়াত কলম অর্পণ করে, সরস্বতী পূজার আগে কুল না খেয়ে এবং পূজার পূর্বে উপবাস করে শ্বেতবসনা দেবীর যেভাবে আরাধনা করি তাতে তো আমাদের সবারই জ্ঞানের সর্বোচ্চ মোকামে পৌছে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে কই? দেবী সরস্বতী যেহেতু বিদ্যার দেবী, তাহলে যারা তাঁর উপসনা করেন তাঁদের আর পড়ালেখা করার দরকার কি? কিন্তু বাস্তবে নানা উপাচারে সরস্বতী দেবীর বন্দনা করেও পড়াশোনা না করার কারনে পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্রের সংখ্যা আমাদের এই ভারতবর্ষে কিন্তু নেহায়েত কম নয়। তাহলে এত আড়ম্বরে দেবী বাগ্বাদিনী সরস্বতীর পূজা করে আসলে লাভ টা কি? আবার ভারতবর্ষের বাইরের দেশগুলোতে তো মানুষ এই হংসবাহিনী দেবীর নাম পর্যন্ত শোনেনি, তাহলে তাঁরা কিভাবে জ্ঞান বিজ্ঞানের শিখরে পৌছে গেলেন? দেবীর যদি সত্যি বিদ্যা দানের ক্ষমতা থাকত তাহলে আমাদের পড়াশোনায় এই দুরাবস্থা কেন? আপনার মনেও যদি এই প্রশ্নগুলোর উদয় হয়ে থাকে, তাহলে আশা করব এই ভিডিওটি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দেবে। ভিডিওটি থেকে যদি আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান, তাহলে কমেন্টে একবার জয় মা সরস্বতী লিখে যাবেন।

ছোটবেলা থেকেই আমরা জেনে এসেছি দেবী সরস্বতী আমাদের বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান, সঙ্গীত ও কলার দেবী। কিন্তু আমরা কি কখনো বোঝার চেষ্টা করেছি, এই দেবী আসলে কে? বাস্তবপক্ষে দেবীর প্রকৃত স্বরূপ না জানার কারনেই মাতা সরস্বতীর সম্পর্কে আমাদের ধারনাটাও স্পষ্ট নয়। তাই এই দেবীর বাস্তবে বিদ্যা দান করার ক্ষমতা আছে কি না তা জানার জন্য তাঁর প্রকৃত স্বরূপ জানাটা একান্তই আবশ্যক।

সরস ও বতী এই দুটি শব্দ যোগেই সৃষ্টি হয়েছে সরস্বতী শব্দটি। যার অর্থ যা প্রবাহমান। আমাদের বৈদিক শাস্ত্রে যে সরস্বতী নদীর কথা উল্লেখ রয়েছে তা মূলত এই দেবী সরস্বতীর প্রবাহমান রূপ। আবার অন্যমতে, সরস্বতী নদীর নামকরন আমাদের বিদ্যাদেবীর নামে করা হয়েছে এই কারনে যে, নদীর মত জ্ঞান পবিত্র ও প্রবাহমান। পৌরাণিক শাস্ত্রাদি থেকে জানা যায়, দেবী সরসস্বতী উৎপন্না হন সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার মুখ থেকে। কোথাও দেখা যায় দেবী সরস্বতী ছিলেন সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার কন্যা, আবার কোথাও দেবী সরস্বতীকে ব্রহ্মার স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই দেবী সরস্বতী ও ব্রহ্মার মধ্যে পিতা-পুত্রী নাকি স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্ক তা আমরা আগেই একটি ভিডিওর মাধ্যমে আলোচনা করেছি। আপনি চাইলে উপরের আই বাটনে ক্লিক করে সেই ভিডিওটি দেখে আসতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  অপ্সরাদের অজানা ও গোপন কথা || উর্বশী, রম্ভা, মেনকা, তিলোত্তমা, ঘৃতাচী || Apsaras- Water Nymphs ||

যাইহোক, আমাদের পূর্ববর্তী ভিডিও থেকে জেনেছি দেবী সরস্বতী নিজেই জ্ঞান স্বরূপা। নিরাকার, অজ্ঞাত ও নির্গুণ পরম ব্রহ্মের জ্ঞান শক্তির সাকার রূপ হচ্ছেন এই শুভ্রবসনা দেবী। অর্থাৎ, নিরাকার ঈশ্বরের জ্ঞানশক্তি মূর্তিকল্পে আমাদের কাছে ধরা দিয়েছেন শুক্লজ্যোতি সম্পন্ন দেবী মুর্তিতে। বাস্তবে জ্ঞান অদৃশ্য বস্তু, কিন্তু তাঁকে বন্দনা করার জন্য যে রূপকল্পের প্রয়োজন সেটার চাহিদা মেটাতেই পৌরাণিক-স্মার্ত মতে নির্মিত হয়েছে এই বাগেশ্বরী মূর্তি। বিদ্যা-বুদ্ধি, সৃজনীপ্রতিভা, চারুকলা, বিজ্ঞান তথা সভ্যতা সংস্কৃতির এক মূর্ত রূপ হচ্ছেন দেবী সরস্বতী। তাই বেদ এবং সরস্বতী অভিন্ন এবং বেদ-বেদাঙ্গ-বিদ্যার প্রসূতি হচ্ছেন এই দেবী সরস্বতী। রূপকল্পে তিনি ভূঃ ভুবঃ স্বঃ এই ত্রিলোক জুড়ে জ্ঞানময়ী রূপে তিনি সর্বত্রব্যাপিনী। এই বিশ্বভুবন প্রকাশিত হয়েছে তাঁর শুক্লজ্যোতিতে। তাই সরস্বতীর বিশেষ অর্থ – জোতির্ময়ী। তিনি তিমির বিনাশী; তমসো মা জোতির্গময়ো।

আবার তিনি রূপে লক্ষ্মী হলেও গুণে সরস্বতী। দেবী সত্ত্বগুণের প্রতীক। তাই তিনি শ্বেতবর্ণা, শ্বেতবস্ত্র পরিহিতা। বীণা ও পুস্তকধারিণী মহাশ্বেতা। বৈদিক জনগোষ্ঠী ভরতদের আরাধ্য বলেই তাঁর আরেক নাম ভারতী।  অন্যদিকে বেদ বিশেষ করে সামবেদ তো সঙ্গীতরসে সিক্ত সূক্তাবলী। যজ্ঞস্থলে সারস্বত বীণার ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠত প্রতিটি স্তোত্র। আবার কেউ কেউ বলেন গন্ধর্ব কিন্নরদের সঙ্গে দেবী সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলেই সরস্বতীর অপর নাম  বীণাপাণি।

তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, স্বয়ং নিরাকার ঈশ্বরের জ্ঞানশক্তিকে মুর্তিকল্পের বাধনে বেঁধে তাঁর অর্চনা করার নামই হচ্ছে সরস্বতী পূজা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই জ্ঞানের অবস্থান কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে আমাদের অন্তরে। অর্থাৎ স্বয়ং জ্ঞানস্বরূপা সরস্বতী আমাদের অন্তরে অধিষ্ঠান করেন। তবে তিনি জাগ্রত নন, নিদ্রিত। অর্থাৎ আমাদের অবচেতনেই এই জ্ঞানের বা দেবী সরস্বতীর আবাস। যারা পরিশ্রম, অধ্যাবস্যায় এবং চর্চার মাধ্যমে এই জ্ঞানকে অবচেতন থেকে চেতনে আনতে পারেন বা জাগ্রত করতে পারেন মূলত তাঁরাই দেবী সরস্বতীর কৃপা প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। তাই সরস্বতী পূজায় যে পুষ্পাঞ্জলী বা প্রণাম মন্ত্রের উচ্চারণ করা হয় তা আসলে আমাদের অন্তরে অধিষ্ঠিত জ্ঞানরূপী দেবী সরস্বতীর উদ্দেশ্যেই সম্পাদন করা হয়, যাতে তিনি অবচেতন থেকে জাগরণ করে আমাদের চেতনায় ধরা দেন। তবে তাঁর মানে এই নয় যে বিনা পরিশ্রমে, বিনা অধ্যাবসায়ে বা বিনা চর্চায় আমাদের অন্তরে তিনি জাগরণ করবেন। তাই প্রকৃতপক্ষে দেবী সরস্বতীকে সন্তুষ্ট করার উপায় কিন্তু তাঁর প্রনাম মন্ত্র উচ্চারণ, অঞ্জলী মন্ত্র উচ্চারণ বা সরস্বতী পূজায় উপবাসী থাকায় নয়। বরং দেবী সরস্বতীকে সন্তুষ্ট করার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে জ্ঞানের চর্চা করা, অধ্যাবস্যায় এবং পরিশ্রম করা। ঠিক এই কারনেই যারা দেবী সরস্বতীর পূজা করেন না কিন্তু জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে প্রয়াস করেন, দৃঢ় প্রযত্ন করেন এবং নিবিড়ভাবে উদ্যোগী হন তাঁরাই দেবী সরস্বতীর পক্ষ থেকে বিদ্যার বর লাভ করেন। কারন তাঁরা জ্ঞান তথা দেবী সরস্বতীর অনুশীলন করেন, অভ্যাস করেন এবং চর্চা করেন।

আরও পড়ুনঃ  অঘোরী কে? কি তাদের উদ্যেশ্য? অঘোরী সম্পর্কে সমস্ত ভুল ধারনার জবাব

এখন প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে সরস্বতী পূজা করে আমাদের লাভটা কি? আসলে এই প্রশ্নটি শুধুমাত্র সরস্বতী পূজার জন্য প্রজোয্য তা কিন্তু নয়। আপনি লক্ষ্মী পূজা, গণেশ পূজা, কালী পূজা বা যে পূজাই করুন না কেন, প্রত্যেক পূজায়ই দেবতার কাছে আমাদের কিছু কাম্য বস্তু থাকে। আমাদের বিশ্বাস ঐ পূজা থেকেই সেই সংশ্লিষ্ট দেবদেবী আমাদের অভীষ্ট পুরণ করবেন বা আমাদেরকে আমাদের কাম্য বস্তু দান করবেন। একইভাবে সরস্বতী পূজায়ও আমাদের সেই কাম্য বস্তু হচ্ছে বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান, কলা বা সুর। কিন্তু কোন দেবতাই বিনা পরিশ্রমে কাউকে এরকম কোন কাম্য বস্তু দান করেন না। তবে দেবতার পূজায় আমাদের এক ধরনের মানসিক শক্তি লাভ হয়। অর্থাৎ দেবীরূপী সরস্বতী আমাদেরকে জ্ঞান অর্জনের ক্ষমতা বা মানসিকতা দানের মাধ্যমে আমাদেরকে পরোক্ষভাবে পৌছে দেন জ্ঞান সাগরের কিনারায়।

একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, কোন মহৎ কাজ সম্পাদন করার পর সফল ব্যাক্তিগন তাঁদের সেই সফলতাকে তাঁদের কোন একজন প্রিয়জন বা চালিকাশক্তিকে উৎসর্গ করে থাকেন। যেমন ক্রিকেট মাঠে সেঞ্চুরি করে একজন ব্যাটসম্যান তাঁর স্ত্রীকে উৎসর্গ করলেন, আবার কেউ একজন তাঁর স্বপ্নের চাকরিতে যোগদান করার পর তাঁর পিতামাতাকে এর সমস্ত কৃতিত্ত্ব দান করলেন। কিন্তু ওই ব্যাটসম্যানের স্ত্রী কিন্তু মাঠে এসে ক্রিকেট খেলে সেঞ্চুরি করে দেননি এবং ওই চাকরি প্রার্থীর পিতা-মাতাও চাকরীর পরীক্ষায় তাঁকে কোন প্রকার সাহায্য করেননি। বাস্তবে তাঁরা যেটা করেছেন, সেটি হচ্ছে তাঁরা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, উপদেশ দিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন বা চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। দেবী সরস্বতীর বিদ্যা দান করার ক্ষমতাটাও অনেকটা সেরকমই। তিনি দেবীরূপে কাউকে পড়াশোনা করিয়ে, বা পরীক্ষায় লিখিয়ে দেন না বরং তিনি আড়ালে থেকে আমাদেরকে জ্ঞান অর্জনের ক্ষমতা বা মানসিকতা দান করেন মাত্র।

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply