You are currently viewing শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণের ব্রতকথা / পাঁচালী

শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণের ব্রতকথা / পাঁচালী

বাঙালী সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক অতি প্রিয় অনুষ্ঠান হচ্ছে শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণের ব্রতকথা তথা পাঁচালী পাঠ, শ্রবণ ও কীর্ত্তন করা। সত্প্রিযনারায়ণ হচ্ছেন ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণুর একটি বিশেষ রূপ। আজ সনাতন এক্সপ্রেসের পাঠকদের জন্য রইল সত্যনারায়ণের ব্রতকথার আদ্যোপান্ত।

শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ ব্রতের নিয়ম

এই ব্রতে কোনো তিথি নক্ষত্রের নিষেধ নাই। যে কোন লোক প্রদোষকালে এই ব্রত করিতে পারে। নারী-পুরুষ, কুমার-কুমারী সকলেই এই ব্রত করিতে পারে।পূর্ণিমা বা সংক্রান্তিএই ব্রতের প্রসিদ্ধ দিন। উপবাসী থাকিয়া এই ব্রত করিতে হয়।

শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ ব্রতের উপকরন

ঘট, আম্রপল্লব, ডাব বা কলা, গামছা, সিদুর, গঙ্গামাটি, ধান, পিঁড়ে বা চৌকি, পাতন বস্ত্র, তীরকাঠি, পান, কলা, সন্দেশ বা বাতাসা, পয়সা, ফুলের মালা, পতাকা, ফুলের তোড়া, ছুরি, তিল, হরীতকী,ফুল, তুলসী, দূর্বা, বেলপাতা, ধূপ, দীপ, পূজার বস্ত্র, গামছা, আসনাঙ্গুরীয়, মধুপর্কের বাটি, দধি, মধু, গব্যঘৃত, সিন্নির সামগ্রী নানা প্রকার ফল কুচা, নৈবেদ্য, মিষ্টান্ন, দধি, গোময়, গোরোচনা, দক্ষিণা।

শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ ব্রতের ফল

যেকোন বয়সের নর-নারী এই ব্রত করিতে পারে। এই ব্রত করিলে সংসারে কোনও প্রকার দুঃখ কষ্ট থাকে না। মনের সমস্ত কামনা-বাসনা নারায়ণ পূর্ণ করেন।

শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণের ব্রতকথা

সত্যনারায়ণের ব্রতকথা
সত্যনারায়ণের ব্রতকথা

প্রথমে বন্দিনু আমি দেব গজানন। সর্বসিদ্ধিদাতাআর বিঘ্ন বিনাশন। হর-গৌরী বন্দিনু বিরিঞ্চি নারায়ণ। বশিষ্ঠ বাল্মিকি আদি বন্দি মুনিগণ।। প্রণমিনু সত্যপীর নিয়ৎ হাসিন। যাঁহার কৃপায় হয় ভুবন অখিল।।লক্ষ্মী সরস্বতী বন্দি কালী করালিনী। সত্যপীর উপাখ্যান অপুর্ব কাহিনী।। গুন গুন সর্বজন হয়ে এক চিত। যার যে পাইবে বর মনা বাঞ্ছিত।। গরীব ব্রহ্মণ এক ছিল মথুরায়। ভিক্ষা করি কাটে সুখ নাহি পায়।। একদিন সেই দ্বিজ ভ্রমিয়া নগর। কিছু না পাইয়া ভিক্ষা হইল কাতর।। বৃক্ষতলে এসে বিপ্র বিষাদিত মনে। কান্দিতে লাগিল দ্বিজ ভিক্ষার কারণে।। কান্দিতে কান্দিতে দ্বিজ হইল অস্থির। দেখিয়া দয়ার্দ্র বড় হইল সত্যপীর।। দয়াময় প্রভুদেব সত্যনারায়ণ। ফকিরার বেশে তারে দিল দরশন।। দ্বিজে কয় নারায়ণ, শুন মহাশয়। কি কারণে কাঁদো বসিয়া হে্থায়।। দ্বিজ বলে, কি হইবে বলিলে তোমায়। ফকির বলেন দ্বিজ ক্ষতি কিবা তায়।। দ্বিজ বলে নিত্য আমি ভিক্ষা মাগি খাই। আজ না পাইনু ভিক্ষা দুঃখ ভাবি তাই।। ফকির কহিল, দ্বিজ যাও নিজ ঘরে।আমারে পূজহ তব দুঃখ যাবে দূরে।। দ্বিজ বলে,  নিত্য পূজি শিলা নারায়ণ। তাহা ভিন্ন না করিব ম্লেচ্ছ আচারন।। হাসিয়া ফকির বলে, শুন দ্বিজবর। পুরাণ কোরানে কিছু নাহি মতান্তর।। রাম ও রহিমে জেনো নাহি ভেদাভেদ। ত্রিজগতে এই দুই জানিবে অভেদ।। এই বলে নিজমূর্ত্তি ধরে জগন্নাথ। শঙ্খ চক্র গদা পদ্মধারী চারি হাত।। মূর্ত্তিহেরি দ্বিজবর পড়িল্ক ধরণী। করিল প্রচুর স্তব গদ্গদ বাণী।। দেখিত দেখিতে পুনঃ ফকির হইল। দেখি তাহা দ্বিজবর বিস্মিত হইল। ব্রহ্মণ বলেন, প্রভু পুজিব তোমায়। পূজার পদ্ধতি কিবা বল হে আমায়।। ফকির বলিল, তবে শুন দ্বিজবর। পূজার পদ্ধতি যথা বলি অতঃপর।। বলিতে লাগিল প্রভু ব্রহ্মণের তরে। গম কিংবা তন্তুল-চূর্ণ সওয়া সেরে।। সওয়া ছড়া কলা করিবে আয়োজন। সওয়া গণ্ডা গুবাক আর পন সওয়া পান।। সওয়া সেরা চিনি কিংবা গুড়বা ক্ষীর। তাতে সন্তুষ্ট হই আমি সতিপীর।। চিনি আর ক্ষীর দিতে যার নাই শক্তি। দুগ্ধ আর গুড় দিয়ে করিবে ভক্তি। বসিবে সকল ভক্ত হয়ে একমন। একমনে ভক্তিভরে করিবে পূজন।। পুজা আন্তে ব্রতকথা শুনিতে শ্রবনে। ভক্তিতে পূজা কর শাস্ত্রের বিধানে।। সতীপীর বলে সবে মাথে দিবে হাত। নারায়ণ বলিয়া করিবে প্রণিপাত।। প্রসাদ লইবে সবে শাস্ত্রের বিধান। এত বলি নারায়ণ হ’ন  অন্তর্ধান।। ভক্তিভাবে দ্বিজবর হয়ে হরষিদ। কিছু ভিক্ষা করি গৃহে হ’ন উপনীত।। ব্রহ্মণী শুনিয়া সব হয়ে আনন্দিত। পূজা হেতু আয়োজন করে বিধিমত।। ভক্তিভাবে পূজে দ্বিজ নারায়ণ পদ।প্রভুর কৃপায় দ্বিজ লভিল সম্পদ।। কাঠুরিয়াগন সবে বিস্ময় মানিল। ভক্তিভরে ব্রহ্মণেরে জিজ্ঞাসা করিল।। ব্রহ্মণ তাদের বলে বিধান সমস্ত। কাঠুরিয়া পূজিবারে হৈল বড় ব্যাস্ত। । সিন্নি যে করিল তারা বিধি সহকারে। দুঃখ দূর হইল আনন্দ ঘরে ঘরে।। অতঃপর সদানন্দ সাধু একজন।কাঠুরের সম্পদ দেখিয়া হৃষ্টমন।। জিজ্ঞাসিয়া সবকথা জানিতে পারিল। শুনিয়া সাধুর মনে ভক্তি উপজিল।। সাধু বলে অপ্রতুল নাহি অন্যধনে। কন্যা নাই দুঃখ তাই সদা উঠে মনে। যদ্যপি আমার এক জনমে তনয়া। সত্যদেব পূজা করি আনন্দিত হৈয়া।। এত বলি গেল সাধু অঙ্গিকার করি। যথাকালে জন্মে কন্যা পরমাসুন্দরী।। সত্যনারায়ণ পূজা সে সাধু ভুলিল। যথাকালে কন্যাটির বিবাহ যে দিল।। অতঃপর সাজাইল সপ্তমধুকর। জামাতা সহিত সাধু চলিল সত্বর।। দক্ষিণ পাটনে রাজা নাম কলানিধি। সেই রাজ্যে সদাগরে মিলাইল বিধি।। রাজা সম্ভাষিয়া তাকে তরণি চাপিয়া। প্রমাদ ঘটিল তার সিন্নি নাহি দিয়া।। রাজার ভাণ্ডার মাঝে ধনাদি যা ছিল। রাত্রিতে আসিয়া সাধুর তরী পূর্ণ হল।। ছল পেয়ে রাজা তার তরী লুট করে। শশুর জামাতা লয়ে রাখে কারাগারে।। রাজাদেশে কোটাল মশানে লয়ে যায়। পাত্র অনুরোধে তারা উভে প্রাণ পায়।। কারাগারে বন্দী থাকে শশুর জামাই। কি কহিব উভয়ের দুঃখের সীমা নাই।। এখন সাধুর পত্নী আস্র তার সুতা। পতির বিলম্ব দেখি মহা শোকযুক্তা।।  সঙ্গতি বিনষ্ট হৈল পড়িল দুঃখেতে। দাসীত্ব করিয়া খায় পরের গৃহেতে।। একদিন সাধু কন্যা বেড়াইতে গিয়া। আনন্দিত দ্বিজ-গৃহে সিন্নি দেখিয়া।। সব শুনি কন্যা সেথা মানত করিল। পিতা আর প্তি-আশে কামনা করিল।। শশুর জামাতা যেথা বন্দী কারাগারে। নারায়ণ সপ্নে কন সেই নৃপবরে।। শুন ওহে মহারাজ আমার বচন। কলিকালে পূজি আমি সত্যনারায়ণ।। সদাগর দুইজন শশুর জামাই। বিনাদোষে বন্দী আছে তোমারে জানাই।।প্রভাত হইলে তগুমি দুই সদাগরে।, দশগুন ধন দিইয়া তুষিবে আদরে।। এত বলি ধরিলেন আসল মূরতি। স্বপ্ন দেখি চমকিয়া উঠিল নৃপতি।। মুক্ত করি সদাগরে বহুধন দিল। তরী পূর্ণ করি রাজা বিদায় করিল।। বুঝিতে সাধুর মন সত্যনারায়ণ। ফকিরের বেশে পথে দিল দরশন।। ফকির বলেন শুন ওহে সদাগর। ফকিরের কিছু ভিক্ষগা দিয়া যাও ঘর। শুনি সদাগর তারে অবজ্ঞা করিল। তরীর সামগ্রী যত তুষাঙ্গর হৈল।। দেখি তাহা সদাগর করে হায় হায়। ধরণী লোটায়ে ধরে ফকিরের পায়।। অবশেষে ফকির তাকে কৃপা কৈল। ধনৈশ্বর্যে তরী পুনঃ পরিপূর্ণ হৈল।। উত্রিল ঘাটে সাধু হৈল কোলাহল। সাধুর রমণী কন্যা শুনি কুতূহল।। তরীর সামগ্রী যত ভাণ্ডারেতে লৈয়া। সিন্নি করিল সাধু আনন্দিত হৈয়া।। সকলে প্রসাদ নিল যড় করে পাণি। প্রসাদ ভূমিতে ফেলে সাধুর নন্দিনী।। তাহা দেখি সত্যদেব কুপিত হইল।  জামাতা সহিত তরী জলেতে ডুবাল।। হাহাকার করে করে সবাই পড়িয়া ভূমেতে। শুনি সাধু কন্যা যায় ডুবিয়া মরিত।। হেনকালে দৈববাণী হৈল আচন্বিত। সিরনি ফেলিয়া কন্যা কৈল বিপরীত।। শুনি কন্যা সেই সিন্নি চাটিয়া খাইল। জামাতা সহিত তরী ভাসিয়া উঠিল। তরীর সকল দ্রব্য ভাণ্ডারেতে আনি। করিলেক সওয়া সের সোনার সিরনী। স্বপ্নে কহিলেন দেব, শুন সাধু তুমি। সোনা হাতে আটায়, সন্তোষ হই আমি। স্বপ্ন দেখি সদাগর পরম হরিষে। আটার সিন্নি করি পূজে সবিশেষে। ক্রমেতে প্রচার হ’ল সবার আলয়। ভক্তিভরে পূজিলেই আশা পূর্ণ হয়।। এক মনে কিংবা পূজে নারায়ণ। সর্ব্দুঃখ দূরে যায় শাস্ত্রের বচন।। সিন্নি মেনে যেই জন হয় দুই মনা।কদ্যপি না হয় সিদ্ধ তাহার কামনা।।

3.7/5 - (4 votes)
আরও পড়ুনঃ  ভীষ্মপঞ্চক ব্রত কী, কখন ও কীভাবে করবেন?

Leave a Reply